পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি দূর করতে হবে : ডিসিদের জন্য ২৩ দফা নির্দেশনা
স্টাফ রিপোর্টার : জনকল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে দেয়ার লক্ষে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসিদের করণীয় হিসেবে ২৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করে তিনি বলেন, আমরা যে সিদ্ধান্তই নেই, সেটা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। আপনাদের আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা, যোগ্যতাই পারে এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে দিতে। কাজেই আপনারা সেভাবেই কাজ করবেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসকদের জন্য ২৩ দফা নির্দেশনা প্রধান করে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহŸান জানান। তিনি বলেন, আমরা চাই দেশকে এগিয়ে নিতে এবং আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাই হচ্ছে একটি দেশকে উন্নত করতে পারে। ’৭৫ থেকে ’৯৬ এ দেশের মানুষ শুধু বঞ্চনারই শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার যে জনগণের সেবক সেটা তখনই মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
দুর্নীতি উচ্ছেদ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১২২ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করেছি যাতে যারা দেশের জন্য কাজ করবেন তারা যেন মানুষের জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন। করাপশনকে যে করেই হোক দূর করতে হবে। এজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে নিজেদেরও কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়নের ফলে করাপশন নিয়ন্ত্রণে আসছে ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে। এখন আর টেন্ডারের বাক্স ছিনতাইয়ের খবর খুব একটা শোনা যায় না। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের যে সামর্থ আছে তা আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণের মাধ্যমে প্রমাণ করছি। যা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না-থাকবে না কেউ অভুক্ত। প্রত্যেকের দোড়গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছবে। কেউ নিরক্ষর থাকবে না। সংবিধানে বর্ণিত জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলি আমাদের পূরণ হবে। সব জেলায় গৃহহীনদের তালিকা তৈরী করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, খাস জমির বিষয়ে খোঁজ নিন। আমাদের সরকার সবাইকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেবে।
ডিসিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ২৩ দফা নির্দেশনা
জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে তাদের করণীয় হিসেবে ২৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ যেন শহরমুখী না হয়। শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ডিসিদের ব্রতী হতে হবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সা¤প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, গ্রামের মুরুব্বি, নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, নারী সংগঠক, আনসার-ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, এনজিও কর্মীসহ সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।
শিক্ষার সর্বস্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় আরও সচেষ্ট হতে হবে।
কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হতে হবে।
ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করে এসব অনৈতিক কর্মকা- কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির সফল বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘœ করা এবং পেশিশক্তি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাস নিমূর্ল করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যে কোন অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
নারী উন্নয়ন নীতি সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইতিহাস চেতনা, জ্ঞানস্পৃহা ও বিজ্ঞানমনষ্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে। কঠোরভাবে মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালান এবং এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে। পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দয্য ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ করতে হবে। পর্যটন শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।
এসবের বাইরে নিজস্ব জেলাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে এগুলো সমাধানের উদ্যোগ এবং নদী ভাঙ্গনের শিকার ও গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি তৈরি করে দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মাঠ প্রশাসনের ৬৪ ডিসি এবং ৬ বিভাগীয় কমিশনার।
সরকারের নীতি নির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানে ৪ আগে বছর এ ধরণের সম্মেলন আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চতুর্থ ডিসি সম্মেলন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। আরো বক্তৃতা করেন মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
জেলা প্রশাসকদের পক্ষে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া, চাঁদপুরের আব্দুস সবুর মন্ডল এবং যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন এবং ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন বক্তৃতা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।