Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাদে বাগান করুন

| প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. ওসমান গনি : পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯০০ সালের চেয়ে বর্তমানে ১২ গুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হচ্ছে যা তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন অধিক জনসংখ্যা, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ, বন উজাড়, নগরায়ন, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইত্যাদি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় অধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শহরে তাপ দ্বীপ সৃষ্টি করছে। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয়ে মানুষের মারাত্মক রোগ-ব্যাধি ও অকালমৃত্যু হচ্ছে। আমরা সবাই জানি, গাছপালা পরিবেশ উন্নয়ন ব্যাপক অবদান রাখে। গাছ পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণিকুলের জন্য অক্সিজেন নিঃসরণ করে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি সারা বিশ্বে বহুল আলোচিত বিষয়। ধারণা করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে এ বিশ্বের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এই মহাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই রয়েছে মানুষ ও অন্যান্য জীবের বসবাস উপযোগী পরিবেশ। এখন সময় এসেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবকুলকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে টেকসই উন্নয়ন করা। মূলত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নামে দেশে দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের অপরিমিত যথেচ্ছ ব্যবহার এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী গ্রিন হাউস গ্যাসের ব্যাপক নির্গমন আজকের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বের জনসংখ্যার আনুমানিক শতকরা ৩৪ ভাগের বেশি মানুষ ২০৩০ সালের মধ্যে শহরে বসবাস করবে। এতে বাসস্থান ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের ফলে বহু ফসলি জমি হারিয়ে যাবে এবং পরিবেশ ও জলবায়ু হুমকির সম্মুখীন হবে। ফলে পৃথিবীতে প্রজাতির বিলুপ্তি, স্থান পরিবর্তন ও মানুষের সুষ্ঠু জীবনধারণের সুযোগ-সুবিধা অনেকাংশে কমে যাবে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯০০ সালের চেয়ে বর্তমানে ১২ গুণ বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হচ্ছে যা তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণ রয়েছে যেমন অধিক জনসংখ্যা, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ, বন উজাড়, নগরায়ন, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইত্যাদি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় অধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শহরে তাপ দ্বীপ সৃষ্টি করছে। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয়ে মানুষের মারাত্মক রোগ-ব্যাধি ও অকালমৃত্যু হচ্ছে। আমরা সবাই জানি গাছপালা পরিবেশ উন্নয়ন ব্যাপক অবদান রাখে। গাছ পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণিকুলের জন্য অক্সিজেন নিঃসরণ করে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে। গাছ লাগানো বা বাগানকরণ এমন একটি উপায় যা শুধু পরিবেশ উন্নয়নের নিয়ামকই নয়, অধিকন্তু খাবার, আশ্রয়, ওষুধ ইত্যাদি সরববাহ করে থাকে। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করে অবকাঠামো তৈরিতে যে পরিমাণ চাষের জমি নষ্ট হয়, ছাদে বাগানের মাধ্যমে তার কিছুটা হলে ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। গড়ে তুলুন পরিবেশ সহায়ক ছাদ বাগান আর নিশ্চিত করুন পরিবারের জন্য বিষমুক্ত সবজির যোগান।
ছাদ বাগান হলো মানবসৃষ্ট সবুজ আচ্ছাদান- যা টবে, ড্রামে, রোপণকৃত গাছ যে কোনো আবাসিক, বাণিজ্যিক বা কলকারখানার ছাদে করা হয়ে থাকে। আমরা গ্রামাঞ্চলে সাধরণত বিভিন্ন স্থানে বাগান করে থাকি যেমন, বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার পাশে, মাঠে ও অন্যান্য জায়গায়। কিন্তু শহর এলাকায় এই ধরনের বাগান করার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ছাদে বাগান করে এই সীমাবদ্ধতা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। ছাদে বাগান কার্যক্রমের আওতায় নগরের পরিবেশগত বর্তমান সমস্যা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব, পাশাপাশি আসবে বাড়তি খাদ্য পুষ্টি ও অর্থ। বহিঃবিশ্বের মানুষ অনেক আগে থেকেই ছাদে বাগান করে আসছে। বাংলাদেশ সরকারও এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এবং কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশেষকরে ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে অল্পসংখ্যক ছাদবাগান করা হলেও তা ব্যাপকতা লাভ করেনি। ছাদে বাগান করে শহরে গাছপালা প্রবর্ধনের মাধ্যমে জীবের জন্য নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব। ছাদের বাগান বাতাসের গুণাগুণ উন্নয়ন করা কারণ গাছপালা হচ্ছে পরিবেশের বিষাক্ত উপদানের প্রাকৃতিক ছাঁকনি।
ছাদে ফুল-ফল শাক-সবজি, মসলা প্রভৃতি চাষাবাদের পাশাপাশি সুশীতল ছায়া পশুপাখির আশ্রয় স্থান নিশ্চিত করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকরণ উপাদান যেমন পাটিকুলেট মেটার গাছের পাতায়, কান্ডে ও শাখায় লেগে থাকে বা পরবর্তীকালে সেচ ও বৃদ্ধির পানির মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়। যার ফলে বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়া গাছপালা গ্রীষ্ম তাপশোষণ ও শীতকালে তাপবর্জন করে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এ ছাদ বাগেনের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে পরিবেশ সুশীতল ও শান্তিময় থাকে। সর্বোপরি বাড়ির শিশুরা বিষমুক্ত ফল ও শাক-সবজি খেতে পারে।
এক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে। যা শীতলীকরণ চাহিদার জন্য বিদ্যুৎ খরচ কমায় এবং ছাদবাগানে ছাদের তাপমাত্রা ও ছাদ বাগান বিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য ৭.৮৬ সে হয়। আরও দেখা যায়, ছাদে বাগান বৃদ্ধির ফলে পানি ধরে রাখা শহরে কৃষি স¤প্রসারণ তথা ফুল-ফল এ শাক-সবজির চাহিদা পূরণসহ আয়ের উৎস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এটি সামাজিক সম্পর্ক শিক্ষা গবেষণা এবং খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে শহরে কৃষির একটি মডেল হতে পারে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যে কোনো গাছ এমনকি শাকসবজি ফলানো সম্ভব। আঙ্গুর, বেদেনা, ডালিম, আমড়া, পেঁয়ারা ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমি ফল ছাড়াও কলমি শাক, কলা, ডাটা, লাউ ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়।
গ্রিন হাউস গ্যাস শোষণ এবং অক্সিজেন নির্গমনের মাধ্যমে নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত হবে। রাসায়নিক বিষমুক্ত টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যাবে, সেটি পরিবারের লোকজন, বিশেষ করে শিশুরা নির্ভয়ে খেতে পারবে। শহরে অবকাঠামে নির্মাণের জন্য অথবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্রতিনিয়তই আপনি পরিবেশের দূষণ ঘটিয়ে যাচ্ছেন। তাই প্রকৃতির কাছে আপনি দায়বদ্ধ। আপনার কাজের মাধ্যমে সে দায় কতটুকু মেটাতে পেরেছেন? তাই বাগান করার মাধ্যমে আপনি কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হতে পারেন। এছাড়াও পরিবেশ রক্ষাও দূষণ রোধে এবং সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে এ ছাদবাগান।
আজকাল বিভিন্ন নার্সারিতে বেটে জাতের ফলের চারা পাওয়া যায় যা ছাদে চাষ করার জন্য উপযোগী। আমরা ক্ষেতে খামারে যে সব শাকসবজি, ফল-ফুল ও বাহারি গাছের চাষ করে থাকি তার প্রায় সবই ছাদে চাষ করা যায়। তবে বিশেষ বিশেষ প্রজাতির গাছ ছাদে চাষ করার জন্য অধিক উপযোগী। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, বেলী, রজনীগন্ধা, নয়নতারা, অফিস ফুল, চন্দ মল্লিকা, জারবেরা, অর্কিড, ক্যাকটাস, রঙ্গল, চাহনিজ পাম, ক্যাবেজ পাম এবং বিভিন্ন ধরনের বাহারী গাছের চাষ করা যেতে পারে। শাকসব্জির মধ্যে- টমেটো, শিম, কপি, পালং শাক, বেগুন, ঝিঙ্গা, মরিচ, কলমী শাক, পুঁই শাক, লেটুস, বাটি শাক, পেঁয়াজ, করলা, বরবটি, রসুন, শশা, ধুন্দল, বিলাতি ধনে ইত্যাদি সবই চাষ করা যেতে পারে। ফলের মধ্যে আম, পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কুল, জামরুল, কমলা, স্ট্রবেরি, ডালিম, মাল্টা, করমচা, বাতাবি লেবু, সফেদা, আঙ্গুর, জামরুল, কামরাঙ্গা ইত্যাদি ফলের চাষ করা যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন