পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিগত গভর্নরের আমলে বিএফআইইউ’র প্রধান, উপপ্রধান ও অপারেশনাল প্রধান নিয়োগ নিয়ে যে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে তা অব্যাহত আছে বর্তমান গভর্নরের আমলেও। আবার স্পষ্ট আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের কর্মকান্ড নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই যা রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা তলানীতে নিয়ে যাচ্ছে। গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের মেয়াদ ১৬ মাস পূর্ণ হলেও এই বিভাগের চলমান অনিয়ম রোধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০১৫ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধনী) আইন, ২০১৫ এর ধারা ২৪ (১) অনুযায়ী বিএফআইইউ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। আর ২৪(১)(ঘ) ধারা অনুযায়ী, এর প্রধান থাকবেন সরকার নিযুক্ত ব্যক্তি যাঁর পদমর্যাদা হবে ডেপুটি গভর্নরের। অথচ এই পদে নিযুক্ত আছেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য ১৪ বিভাগের পাশাপাশি এই বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে এই বিভাগটি আর স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান থাকছে না যা স্পষ্টত আইনের লঙ্ঘন। ‘বিএফআইইউ’র মূল কাজে কোন ধরণের সমস্যা হচ্ছে না বললেও অতিরিক্ত এই দায়িত্ব না থাকলে অন্যান্য কাজে বেশি সময় দেয়া সম্ভব হতো বলে স্বীকার করেন আবু হেনা মো. রাজী হাসান।’ এদিকে একই ভাবে আইন লঙ্ঘন করে এই বিভাগের উপ-প্রধানের দায়িত্বে আছেন নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান জোদ্দার যিনি আরও কয়েকটি বিভাগের সঙ্গে এই বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ আইনে বলা হয়েছে, “একজন নির্বাহী পরিচালক সার্বক্ষণিক উপ-প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত হইবেন।”
আইনের ২৪(১)(ছ) ধারা অনুযায়ী প্রধান কর্মকর্তার চাহিদার প্রেক্ষিতে বিএফআইইউতে অন্যান্য কর্মকর্তা পদায়ন করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তাদেরকে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণকালীন কর্মকর্তা হতে হবে। অথচ এই আইন লংঙ্ঘন করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণকারী মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথকে নিয়োগ দেয়া হয় অপারেশনাল হেড হিসেবে। প্রাক্তন গভর্নর ড. আতিউর রহমান এতে ব্যাপক সমালোচিত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের থেকে ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এমনকি তার নিয়োগ ঠেকাতে সহ¯্রাধিক কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন যা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন। অনেককে আবার কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়। কিন্তু এতকিছুর পরও অজানা কারণে বিপুলবেতনে তাকে নিয়োগ প্রদান করেছিলেন ড. আতিউর। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১৫ সালে সংশোধিত হওয়ার সাথে সাথে তার নিয়োগ অবৈধ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল আছেন। তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামি সেপ্টেম্বর মাসে।
আইন লঙ্ঘন করে দেবপ্রসাদ দেবনাথকে নিয়োগের ক্ষেত্রে কারণ দেখানো হয়েছিল এশিয়ান প্যাসিফিক গ্রæপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) মিউচুয়াল ইভালুয়েশনকে। বলা হয়েছিল, দেবপ্রসাদ দায়িত্বে থাকলে মিউচুয়াল ইভালুয়েশনে বাংলাদেশ উৎরে গিয়ে এপিজি’র সদস্য হতে পারবে। তবে তার দায়িত্বের সময়ে প্রায় দুই বছরেও একটি ব্যাংককেও জরিমানা করা হয়নি। অথচ তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের আগের বছরও ২০১৪ সালে ১৪টি ব্যাংককে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়েছিল সন্দেহজনক লেনদেনের দায়ে। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা আলাপকালে প্রশ্ন তুলেছেন, দেবপ্রসাদ দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনও ব্যাংক সন্দেহজনক লেনদেন করেনি? যদি তা ই হয়, তাহলে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে অর্থপাচার ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার যেসব তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আসছে সেগুলো কী মিথ্যা? আর সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, এসব অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই পাচার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিএফআইইউ’র পূববর্তী মহাব্যবস্থাপক সদ্য মৃত্যুবরণকারী নাসিরুজ্জামানের সময়েই এপিজি’র মিউচ্যুয়াল ইভালুয়েশনের সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। অনেক ব্যাংককে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছিল এবং মানব পাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং মানিলন্ডারিং অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত অনেক তদন্ত বিএফআইইউ পরিচালনা করেছিল। অধিকতর তদন্তের জন্য অনেক অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ, রাজস্ব বোর্ডসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। পূর্ববর্তী মহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে বিএফআইইউ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধী কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখায় এপিজি’র মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশনে কালো তালিকাভুক্তি থেকে কোনক্রমে রক্ষা পায়। মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নিয়ে পূর্ববর্তী মহাব্যবস্থাপকের কাজের পূর্ণ সুবিধা ভোগ করেন দেবপ্রসাদ।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৩ ধারা অনুযায়ী বিএফআইইউ আরোপিত জরিমানার অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় বিএফআইইউ’র নামে পরিচালিত হিসাবে জমা হয়। আর এই বিভাগের খরচের একটি বড় অংশ জরিমানা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ থেকেই ব্যয় করার কথা উল্লেখ আছে আইনে। দেবপ্রসাদ দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে এই হিসাবে বিপুল পারিমাণ জরিমানার অর্থ জমা হয়েছিল যা দিয়েই বিএফআইইউ’র ব্যয়ের একটি বড় অংশ নির্বাহ হতো। আর দেবপ্রসাদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জরিমানা আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিএফআইইউ’র পুরো ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে।
তার দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত কোনও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় আর্থিক খাতে মানিলন্ডারিং ব্যাপকহারে বিস্তার লাভ করেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা। সন্দেহজনক লেনদেন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ব্যাংকগুলোকে জরিমানা না করে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অসংখ্য অভিযোগ আছে দেবপ্রসাদের বিরুদ্ধে যার সত্যতা স্বীকার করেছেন কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী। তবে দেবপ্রসাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্বে থাকায় হয়রানীর ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান আর্থিক খাতের ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির পর তা ২২ দিন বসে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং সিস্টেম ও ক্যাসিনো ঘুরে হ্যাকারদের হাতে যাওয়ার বিষয়েও অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে দেবপ্রসাদের বিরুদ্ধে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগপত্রে যা লিখেছিলেন তাতে এই অভিযোগের সত্যতা মেলে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া পদত্যাগ পত্রে ড. আতিউর রহমান লিখেছেন, ‘চুরি হওয়ার পরবর্তী কার্যদিবসেই ঘটনাটি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করি এবং অর্থ উদ্ধার, জড়িত পক্ষগুলো সনাক্ত করা এবং অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করার বিষয়গুলোর দিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিই।’
গভর্নরের পদত্যাগপত্র অনুযায়ী, তিনি বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর পরই বিএফআইইউকে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু বিএফআইইউ কেন সরকারকে অবহিত করলো না এটাই এখন বড় রহস্যের বিষয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধনী) আইন ২০১৫ অনুযায়ী, এই তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে সরকারকে অবহিত করার দায়িত্ব বিএফআইইউ’র।
এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানার পর পরই তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে ফিলিপাইনে পাঠিয়েছিলেন যার নেতৃত্বে ছিলেন দেবপ্রসাদ। প্রতিনিধিদল সেখানে সাত দিনের জন্য গেলেও তিন দফায় সময় বাড়িয়ে পুরো ফেব্রæয়ারি মাসটাই ফিলিপাইনে অবস্থান করে। যখন প্রতিনিধি দল ফিলিপাইনে তখন চুরি হওয়া অর্থ সিস্টেমের ভিতরেই ছিল, অর্থাৎ তখনও হ্যাকারদের হাতে টাকা পৌঁছায়নি। গতবছরের ৫ ফেব্রæয়ারি রিজার্ভ হ্যাক হওয়ার পর ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে ক্যাসিনোতে অর্থ যায় ১০ ফেব্রæয়ারি, আর সেখান থেকে হ্যাকাররা অর্থ বের করে নেয় ২৯ ফেব্রæয়ারি। আর এই পুরো সময়টাতেই প্রতিনিধি দল ফিলিপাইনে ছিল। পুরো অর্থ সিস্টেম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তারা দেশে আসেন।
ওই প্রতিনিধি দল সরকারি আদেশ (জিও) ছাড়াই ফিলিপাইন গিয়েছিলেন। আর দেশে এসেও তারা কোন অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেননি। কেন এমনটা হয়েছিল- দেবপ্রসাদ ও ড. আতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসা করে এর কোন সন্তোষজনক জবাব পায়নি তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়টি সাথে সাথে সরকারকে অবহিত করলে হয়তো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হতো। কারণ ঘটনা জানার পরও দুই দিন ( ৮ ও ৯ ফেব্রæয়ারি) অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে ছিল। এরপর এক টানা বিশ দিন ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে অর্থ ঘোরাফেরা করে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, যখন চুরি যাওয়া অর্থ ব্যাংকে ছিল তখন সরকারকে জানালে এবং সাথে সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ফ্রীজ বা টাকা উত্তোলন বন্ধ করা যেতো। এরপর জুয়ার আসরে যাওয়ার পরেও সরকারকে অবহিত করলে সরকার টু সরকার পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব ছিল। প্রয়োজনে তাৎক্ষনিকভাবে টাকা উদ্ধারের জন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া যেতো। কিন্তু এতোগুলো সম্ভাবনা থাকার পরেও কেন বিএফআইইউ সরকারকে সঙ্গে সঙ্গে অবহিত করলো না- এর কারণ আজও অজানা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।