ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
বৃষ্টিপাত হলেই রাজধানী ঢাকার লাখ লাখ মানুষ নাকাল হয়ে পড়ে। গলি থেকে রাজপথের অধিকাংশই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টির পানির কারণে অনেক স্থানে যানজটেরও সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক স্থানে একদিন দুদিন পরও বৃষ্টির পানি সরে না। ফলে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেয়। এতে করে মানুষের দুর্গতি আরও বেড়ে যায়।
বৃষ্টিতে প্রায়ই অনেক এলাকার প্রধান রাস্তাসহ শাখা রাস্তা, অলিগলি হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। ড্রেন-ডাস্টবিন, নর্দমার ময়লার সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। মশার উৎপাত বেড়ে যায়। সেই সাথে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু তো আছেই। জলাবদ্ধতায় রাস্তা ডুবে অনেক এলাকার মানুষ দৃশ্যত পানিবন্দি হয়ে পড়ে। খুব প্রয়োজন হলেও বাসা হতে বের হতে ভয় লাগে। দুর্গন্ধে নাক মুখ বন্ধ হয়ে আসে। আবার একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকার রাস্তা চলাচলের উপযোগী থাকে না। অনেক স্থানে রাস্তা ও ফুটপাথের ওপর দিয়ে ড্রেনের ময়লা ও বৃষ্টির পানি থৈ থৈ করে। অতি সহজেই বৃষ্টির পানি লোকজনের বাসাবাড়ি, দোকানপাট এবং অফিস চত্বরে ঢুকে পড়ে।
বৃষ্টিতে আটকে পড়া মানুষগুলোর ময়লা পানির মধ্যেই জামা-কাপড় ভিজিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থী, অফিস-আদালতের লোকজনসহ লাখ লাখ নগরবাসী একই দুর্ভোগে পড়ে। অনেক সময়, গলিপথের রাস্তাও ময়লা পানিতে একাকার হয়ে যায়। সহজে বোঝার উপায় থাকে না- কোথায় গর্ত আছে আর কোথায় গর্ত নেই। পানির মধ্যে দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক গাড়ি, রিক্সা, ভ্যান বিকল হয়ে যায়।
প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসী কিছুতেই যেন মুক্তি পাচ্ছে না। নানা উদ্যোগ নিলেও কাজের কাজ একটিও হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নামক এই বিপর্যয়ের জন্য অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নগরীর খালগুলো বেদখল হওয়া, অতিমাত্রায় খোঁড়াখুঁড়ি, খানাখন্দে ভরা রাস্তা ও ফুটপাতের অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণ দায়ী। বৃষ্টির পানি সেচের জন্য ঢাকা ওয়াসার প্রায় ২৫০টি পাম্প থাকলেও সেগুলো নাকি অধিকাংশ সময়েই অকেজো ও বন্ধ হয়ে থাকে। তাহলে তো বৃষ্টির পানি যথাসময়ে অপসারণ করা সম্ভব নয়। ফলে অতিরিক্ত পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাজধানীর খালগুলো হারিয়ে যাওয়ায় নগরীতে প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাকৃতিক খালগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা না করা হলে এই জলাবদ্ধতা ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার মতো একটি আধুনিক নগরে দু’ধরনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকা চাই। একটি হলো, বৃষ্টি ও গৃহস্থালির পানি নিষ্কাশনের জন্য। অন্যটি হলো, পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য। কিন্তু ঢাকাসহ প্রধান নগরগুলোতে সে ব্যবস্থা আদৌ নেই। যেকোনো সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলে কয়েক দিনের জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবেই। কিন্তু কেন এমন হবে? এর পরিত্রাণ কোনো দিনও হবে না? ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, খাল দখল হওয়া বন্ধ করা, নদীগুলো খনন করাসহ সিটি করপোরেশন ও রাজউককে নানা পরিকল্পিত কর্মকাÐ হাতে নিতে হবে। অবিলম্বে নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহমান খালগুলো উদ্ধার ও তা সংরক্ষণ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করা উচিৎ।
মোহাম্মদ অংকন, শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা।
গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ কাম্য নয়
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার উদ্দেশ্য যা-ই হোক, এতে সারাদেশেই সাংবাদিকরা ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। পরিবেশিত কোনো সংবাদ প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীনদের কারো অপছন্দ হলেই মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে। হাজিরা দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আদালতে ছুটে যেতে হচ্ছে। ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ৫৭ ধারা বাতিল করে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে, এই আইনের ১৯ ধারায় সামান্য ভাষা রদবদল করে হুবহু ৫৭ ধারাকেই প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরাও মনে করছেন, এই ধারার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংবাদিকদের হয়রানি করা বা ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখা, কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়। তারা মনে করেন, সরকার ৫৭ ধারার মতো হাতিয়ার সহজে হাতছাড়া করবে না। তারা এ ধারাকে সংবিধানবিরোধী বলেও উল্লেখ করেছেন। তাহলে যে সরকার নিজেদের মুক্ত সাংবাদিকতার পক্ষে বলে দাবি করে, সে সরকার সংবাদকর্মীদের কাছে ভীতিকর একটি আইন প্রণয়নে এত উৎসাহী কেন?
এ দেশে গণমাধ্যমের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ, এমনকি স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র বিপন্ন হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনেও একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে গণমাধ্যম। ৫৭ ধারা বা ১৯ ধারা তখন ছিল না। তাতে কি গণমাধ্যম হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো, উসকানি বা মানহানিকর সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকেনি? তাহলে এখন এমন কঠোর আইন প্রণয়ন করা কেন, যা স্বাধীন মতপ্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়? আমরা আশা করি, সরকার এমন কিছু করবে না, যা গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে।
মেনহাজুল ইসলাম তারেক, মুন্সিপাড়া, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।