Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রস্তাব ডিসিদের

আগামী ২৫-২৭ জুলাই ডিসি সম্মেলন

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : ভারতীয় ফেন্সিডিল-চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করার পর সংক্ষিপ্ত বিচারসহ ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) অন্তত পাঁচটি ধারার ক্ষমতা ফিরে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত আট বছরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ৮ লাখ ২০ হাজার ৭৪১টি মামলার বিচার সম্পুর্ণ করা হয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকদের পাঠানো প্রস্তাবগুলোর মধ্য থেকে যাচাই-বাচাই করা বিভিন্ন প্রস্তাব আগামী বৃহস্পতিবার বই আকারে প্রকাশ করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫-২৭ জুলাই শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক। এ সম্মেলনের শুরুর দিনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা ডিসিরা। একই সাথে হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা তিন দিন বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় আশঙ্কাজনক হারে অপরাধ বাড়ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে ডিসিরা। জনদুর্ভোগ, ভোজালবিরোধী অভিযান জোরদার, বাল্যবিবাহ রোধ, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রিসহ নানা অপরাধ সংঘঠনের সঠিক তথ্য থাকলেও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। বিচার বিভাগ পৃথকীরণের পর মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা বাড়াতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৫৬ (আমলযোগ্য মামলার তদন্ত), ১৫৯ (তদন্ত বা প্রাথমিক অনুসন্ধান করার ক্ষমতা), ১৯০(১)(এ)(বি)(সি) (ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অপরাধ আমলে নেওয়ার পরবর্তী কিছু ক্ষমতা), ১৯১ (আসামির আবেদনক্রমে মামলা হস্তান্তর), ১৯২(২) (প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক কোনো মামলা আমলে নেওয়া ও বিচারসংশ্লিষ্ট কিছু ক্ষমতা), ২০২ (পরোয়াানা দান স্থগিত রাখা) এবং ২৬০-২৬৫ (সংক্ষিপ্ত বিচারসংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষমতা) ধারায় ক্ষমতা প্রয়োাগের এখতিয়ার চান। একারণে তারা সিআরপিসির ১৯০(৪) ধারামতে, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। ফেনীর জেলা প্রশাসককের পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, মায়ানমারের শরনার্থী এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে নাফ নদীর জলসীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা লক্ষ্যে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত জলসীমা রক্ষা দায়িত্ব কোস্টগার্ডকে প্রদান করতে হবে। এছাড়া ভারতীয় ফেন্সিডিল, গরু চোরাচালান বন্ধ করতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল বাড়াতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ জুলাই। ওই দিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা ১৮টি কার্য অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৭ নিয়ে সারাদেশে থেকে ডিসিদের পাঠানো প্রস্তাবগুলো গত ২২ মে বিভাগীয় কমিশনাদের সভায় চুড়ান্ত করা হয়ে।
সম্প্রতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট দুই সপ্তাহ পরিচালনা করতে পারবে এমন আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মন্ত্রিপরিষদের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: মাকছুদুর রহমান পাওয়ারী ইনকিলাবকে সরকার যেভাবে চাইবে আমরা সে ভাবেই চলবো। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গত মে মাসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে দুই হাজার ১৯৮টি মামলা ৫ হাজার ৭শত ৪৫টি আসামির সংখ্যা ৫ হাজার ২৩২ জন এবং জরিমানা আদায় করা ১ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৯ টাকা। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০১১-১২ সালে আশঙ্কাজনকভাবে ইভটিজিং বেড়েছিল। এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইভটিজিং দমন করা হয়েছে। এখন আপনার আমার মেয়ে ছেলে শান্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে কেউ আর তাদের ইভটিজিং করে না। কয়েক দিন বন্ধ থাকায় অপরাধ বেড়েছে বলে ডিসিরা চিঠি দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ডিসিদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়- ১১ মে হাইকোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় অবৈধ ঘোষণার পর বন্ধ রাখা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। এতে দেশে অপরাধের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচার করা যেত, দ্রæত শাস্তি পেত অপরাধীরা। কিন্তু মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি ১১টি জেলার ডিসি। মোবাইল কোর্ট চালু থাকাবস্থায় এতদিন এসব জেলায় বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটা বন্ধ ছিল। চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় বিশৃঙ্খল পরিবেশের কারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য হল সুপাররা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তা দিতে পারেননি ১৭ জেলার ডিসি। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগী জনগণ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েও পাচ্ছেন না বলে একাধিক ডিসি। বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অবৈধ ওষুধ বিক্রি শুরু হয়েছে বলে সুস্পষ্ট তথ্য থাকা সত্তে¡ও কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকায় প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলা হচ্ছে। পাহাড়ে গাছকাটা হচ্ছে। আমসহ মৌসুমি ফলে ক্ষতিকর ফরমালিন ও কার্বাইড মেশানো হচ্ছে। এভাবে চললে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিসহ খাদ্যে ভেজাল বৃদ্ধি, ইভটিজিং, মোটরযান অধ্যাদেশ পরিপন্থী কাজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। সংক্ষিপ্ত বিচারসহ ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) হারানো সব ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। মাঠ প্রশাসনে কর্মরত বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের জন্য বিশেষ ভাতার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ