Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্র কি উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালাবে?

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহ্মুদ ইলাহী মন্ডল : উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় আঘাত হানতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম প্রথম উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টিকে বিশেষ পাত্তা না দিলেও এবার সত্যই তার টনক নড়েছে। সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বাসই করতে পারেনি যে, উত্তর কোরিয়ার মত ছোট একটি দেশ সত্য সত্যই যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে উৎকণ্ঠার কারণ হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রসহ রাশিয়া, চীন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিন্দা জানিয়েছে। পরীক্ষার পর পরই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এক বিশেষ জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি নিকি হ্যালি পরিষ্কারভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে উত্তর কোরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানো হবে। এটাই হবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উপযুক্ত জবাব। নিকি হ্যালির মতে, উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভ্রæক্ষেপ না করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে বাড়াবাড়িটা বেশিই করছে। সুতরাং সামরিক অভিযানই একমাত্র পথ। অপরদিকে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সমালোচনা করলেও সেখানে কোন প্রকার সামরিক ব্যবস্থার বিরোধী। চীন নিন্দা জানালেও জাপান সাগরে যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র মহড়ার বিরোধী। এ থেকে পরিষ্কার যে, উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে এখন দুটি পক্ষ প্রায় দুভাগেই বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রাশিয়া ও চীন নিন্দা জানালেও তারা শেষমেষ উত্তর কোরিয়ারই পক্ষ নেবে এটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। এমনকি দেশ দুটি নিরাপত্তা পরিষদে যে কোন প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করবে। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প প্রশাসন আসলে কি করছে? ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই উত্তর কোরিয়ার দিকে নজর দেন। আর মেক্সিকো ইস্যুটি প্রথম প্রথম মাঠ গরম করলেও বর্তমানে তা চাপা পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মাথাটা সত্য সত্যই গরম করছে ওই উত্তর কোরিয়া। সাবেক নেতা কিম জং ইল তার তৃতীয় পুত্র ৩১ বছর বয়সী কিম জং উনকে ক্ষমতা দিয়েই সম্ভবতঃ গোলমালটা বাঁধিয়েছেন। কিম জং ইল ছিলেন বেশ শান্তশিষ্ট প্রকৃতির। তিনি তাঁর পিতা কিম ইল স্যুং এর মতো অতো বড় মাপের নেতা না হতে পারলেও তাঁর আমলেই উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী হয়। তিনি মৃত্যুর আগে তাঁর প্রথম দুই পুত্রকে বাদ দিয়ে তৃতীয় পুত্র কিম জং উনকে উত্তর কোরিয়ার নেতা নির্বাচিত করেন। হয়তো তিনি তাঁর ছোট ছেলের মধ্যেই তাঁর পিতা কিম ইল স্যুং এর প্রতিকৃতি দেখতে পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে কিম জং উন নিজেই তার দাদা কিম ইল স্যুং-এর যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরপর উত্তর কোরিয়ার দিকে নজর দেয়। রেক্স টিলারসন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরপরই উত্তর কোরিয়ার প্রতি প্রথমে হুশিয়ারি দেন। দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে তিনি উত্তর কোরিয়ার প্রতি সতর্ক বার্তা পাঠান। পরবর্তীতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ উত্তর কোরিয়া অভিমুখে রওনা দেয়। উত্তর কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, কোরিয় উপদ্বীপে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র তার যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নেয় এবং কূটনৈতিক ব্যবস্থার কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার মুরুব্বী বলে খ্যাত চীনের স্মরণাপন্ন হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে উত্তর কোরিয়াকে থামানোর অনুরোধ জানান এবং সেই সাথে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণা দেন। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একসাথে কাজ করবে। তারপরও প্রশ্ন, ট্রাম্প প্রশাসন কি সত্য সত্যই উত্তর কোরিয়ায় সামরিক অভিযান চালাতে পারবে? সম্ভবত না। কারণ রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছেদ করা কিংবা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা বিষয়টি ভেবে দেখার মতো। উত্তর কোরিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া মানে একেবারে গোড়া ধরে টান অর্থাৎ চীন ও রাশিয়ার সাথে বিবাদে জড়ানো। এ ঝুঁকি সম্ভবত সে নেবে না। অবশ্য ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট তখন অসম্ভবও সম্ভব হতে পারে বৈকি!
লেখক: কবি ও সাবেক কর্মী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, আইসিডিডিআরবি, ঢাকা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন