Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সাভারে র‌্যাবের ১১ ঘণ্টার রুদ্ধদার অভিযানে চার জঙ্গির আত্মসমর্পণ

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চার জঙ্গি সরোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য -মুফতি মাহমুদ খান
স্টাফ রিপোর্টার সাভার থেকে : ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় রাত থেকে ঘিরে রাখা সন্দেহভাজন জঙ্গী আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানের মধ্যে চারজন জঙ্গী আত্মসমর্পণ করেছে। তারা সরোয়ার-তামিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ফেলটেন্যান্ট কর্নেল মুফতি মাহমুদ খান বলেন, টিনশেড ওই বাড়িতে চারজনই ছিলেন বলে আত্মসমর্পণকারীরা জানিয়েছেন। গত শনিবার রাত ১টার দিকে র‌্যাব-৪ এর একটি দল সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের নয়ারহাট এলাকার চৌরাবালি এলাকায় ইব্রাহীম নামে এক ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রীরীর মালিকানাধীন ভাড়া দেয়া ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। গতকাল সকালে র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও বোমা নিষ্ক্রীয়কারী ও ফরেনসিক দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়।
সকাল ৯টার পর র‌্যাবের একটি এপিসি ওই বাড়ির কাছাকাছি যেতে দেখা যায়। আকাশে একটি হেলিকপ্টারও চক্কর দিতে দেখা যায়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটানা বেশ কিছুক্ষণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ আসে ওই বাড়ির দিক থেকে। এরই মধ্যে হ্যান্ড মাইকে বার বার ‘জঙ্গিদের’ আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রায় ১১ ঘণ্টা বাড়িটি ঘিরে রাখার পর সন্দেহভাজন চার জঙ্গী আত্মসমর্পণ করে।
র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান আরো বলেন, ওই চারজন জেএমবি’র সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য। ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়ে তারা ‘বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা’ করছিল।
এদিকে বেলা ১২টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে একে একে চারজনই ওই বাড়ি থেকে হাত উচু করে বেরিয়ে আসে। দুপুরের পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ওই বাড়ির ভেতরে কয়েকটি আইইডি (ই¤েপ্রাভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পাওয়া গেছে। বোমা নিষ্ক্রীয়কারী দল সেগুলো নিষ্ক্রীয় করার পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটক চার জঙ্গির নাম মোজাম্মেল হক, রাশেদুল নবী, এরফানুল হক ও আলমগীর হোসেন। তাদের মধ্যে মোজাম্মেলকে দলনেতা বলছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।
আজাদ নামের এক লোক গার্মেন্ট কর্মী পরিচয় দিয়ে গত মাসে আড়াই হাজার টাকায় টিনশেডের ওই বাসা ভাড়া নেন বলে বাড়ির মালিক ইব্র্রাহীম র‌্যাবকে জানিয়েছেন।
তবে স্থানীয় চাকল গ্রামের বাসিন্দা পরিবহন চালক মোহাম্মদ রিদয় সাংবাদিকদের জানান, ওই বাসায় গত তিন দিন আগে আসবাবপত্র নিতে দেখে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। তারা তাকে বলেছিলেন, সেখানে একটি এনজিওর অফিস খোলা হবে। সেজন্যই আসবাসপত্র নেওয়া হচ্ছে। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতে অভিযানের পরপরই বাড়ির মালিক ইব্রাহীমকে আটক করেছে র‌্যাব।
১১ ঘণ্টার রুদ্ধদার অভিযান : এক ব্রিফিংএ মুফতি মাহমুদ খান জানান, এপ্রিলের শেষ দিকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কয়েকজনকে আটক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পারেন, এই জঙ্গী দলের কয়েকটি গ্রুপ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। এরই সূত্র ধরে বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাবের গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়ানো হলে আশুলিয়ার এই বাড়ির সন্ধান মেলে। র‌্যাব-৪ এর একটি দল গত শনিবার রাত ১টার দিকে বাড়িটি ঘিরে ফেলে।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র‌্যাব-৪ এর অতিরিক্ত ডিআইজি লুৎফুল কবীর বলেন, রাত ৩টার দিকে বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গীরা’ র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপর গতকাল সকাল ৬টার দিকে আবারও গুলি করে তারা। কয়েকটি বোমাও ছোড়া হয়। জবাবে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন।
তিনি আরো জানান, বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসম্পর্ণ করার জন্য হ্যান্ডমাইকে বেশ কয়েকবার আহ্বান জানানো হলেও তখন তারা সাড়া দেয়নি। বরং র‌্যাব সদস্যদের ‘তাগুতির দল’ আখ্যায়িত করে তারা গালিগালাজ করে। পরে রাতেই নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের বাড়ির সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সকাল ৯টার পর র‌্যাবের একটি এপিসি ওই বাড়ির কাছাকাছি যেতে দেখা যায়। আকাশে একটি হেলিকপ্টারও চক্কর দিতে দেখা যায়। বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গিদের’ উদ্দেশে হ্যান্ড মাইকে বলা হয়, বেলা ১২টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে র‌্যাব চূড়ান্ত অভিযানে যাবে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাড়ির দিক থেকে একটানা বেশ কিছুক্ষণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ আসে। এরপর ১২টার দিকে একজন বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আত্মসমর্পণের পর সে জানায়, ভেতরে আরও তিনজন রয়েছে। কোনো নারী বা শিশু তাদের মধ্যে নেই। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যে একে একে বাকি তিনজনও বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের জীবিত ধরা, এ কারণে আমরা অভিযানে সময় নিয়েছি।
র‌্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর আবদুল হাকিম জানান, চারজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর র‌্যাবের বোমা নিস্কৃয়কারী দলের সদস্যরা সেখানে প্রবেশ করেন।
এদিকে সকালে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাইদুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) খোরশেদ আলম সেখানে পৌঁছেছেন। তবে র‌্যাব সদস্যরা সাংবাদিকসহ কাউকে ওই বাড়ির কাছাকাছি যেতে দেয়নি।
৪ জঙ্গীর আত্মসমর্পণ : র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ফেলটেন্যান্ট কর্নেল মুফতি মাহমুদ খান জানান, বাড়িটির ভেতর থেকে কয়েকটি বিস্ফোরক ছোড়া হলে ওই বাড়ির আশপাশের এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। সকালে চূড়ান্ত অভিযান শুরুর পর বেলা ১২টার দিকে ওই বাড়ি থেকে একজন বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে। সে জানায় ভেতরে আরও তিন পুরুষ অবস্থান করছে, তবে কোনো নারী বা শিশু নেই। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যে আরও তিন জঙ্গী একে একে আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ির মালিক ইব্রাহিমকে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ