ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. তোফাজ্জল বিন আমীন : চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ঘরে ঘরে ছড়িয়া পড়েছে। এডিস মশাবাহিত এই রোগটি ইতোমধ্যে রাজধানীর সীমানা অতিক্রম করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। দেশবাসীর কাছে আতংকের নাম এখন চিকুনগুনিয়া। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী মশাই এখন চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়াচ্ছে। গাও-গেরামের অনেকে একে ল্যাংড়া জ্বর বলে অভিহিত করে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে প্রথমদিন থেকেই বেশি তাপমাত্রায় জ্বর ওঠে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। চিকুনগুনিয়া রোগের কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা শোনা না গেলেও তা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে চিকিৎসরা জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত হলেও এই রোগ হঠাৎ করে এসেছে বা বেড়েছে তা কিন্তু নয়! কয়েক বছর আগে এর সংক্রমণ দেখা দিলেও আমাদের দেশে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর সংক্রমণ ভয়াবহ রূপে জানান দিয়েছে। তাই এ রোগ সম্পর্কে অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ১৯৫২ সালে ম্যাকন্ডি নামক জনগোষ্ঠীর জ্বরাক্রান্ত মানুষের রক্তরসের মধ্যে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ প্রথম নির্ণয় করা হয়। এই জনগোষ্ঠীর প্রধান বসবাস মূলত মোজাম্বিক ও তানজানিয়ার সীমান্তবর্তী একটি মালভূমিতে। চিকুনগুনিয়া শব্দটি ম্যাকন্ডি শব্দ ‘বেঁকে যাওয়া’ (to become contorted) হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনো বাংলাদেশী পাওয়া যায়নি। পরে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়ার আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল। আইইডিসিআর এর ভাষ্যমতে, চিকুনগুনিয়া প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সালে আফ্রিকায়। পরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ রোগের বিস্তার ঘটে। ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এ রোগ দেখা গেলেও পরে বিচ্ছিন্ন দুই-একজন রোগী ছাড়া এ রোগের বিস্তার আর বাংলাদেশে লক্ষ করা যায়নি।
একটা সময় এমন ছিল যে, ডায়রিয়া হলেই মানুষের জীবন বিপন্ন হতো। এখন আর তেমনটা শোনা যায় না। ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু এখন অনেকটা পরিচিত রোগ। রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুই সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করলে ভুল হবে না। দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কার দোষে চিকুনগুনিয়ার আর্বিভাব আর কোথায় বা যায় মশা মারার টাকা এই বিষয়টি রাষ্ট্রের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে (জুলাই ২০১৬ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত) মশক নিধন বাবদ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ব্যয় করেছে ৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ব্যয় করেছে ১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও নতুন করে আরও কিছু ওষুধ কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। মশার ওষুধ কেনা ও এর সঠিক ব্যবহার নিয়ে চলছে এক শুভংকরের ফাঁকি যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
চিকুনগুনিয়ার কথা সবার মুখে মুখে শোনা গেলেও রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে তাকে মোকাবেলা করার মতো জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের কোনো নজির দেখছি না। তবে আমাদের অসচেতনতার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। আর দূষিত পরিবেশের কারণে মনুষ্যসৃষ্ট রোগে দেশের মানুষ ১২ মাসই ভুগছে। ক্ষমতাসীন সরকারের মুখে উন্নয়নের যত রূপ কাহিনী শোনা যায় তত যদি সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপের কথা শোনা যেত তাহলে চিকুনগুনিয়ার মতো রোগে দেশের নাগরিকদের জীবন এভাবে বিপন্ন হতো না। সরকার স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলে, কিন্তু কার্যকর করার বিষয়ে আন্তরিক হতে দেখা যায় না। সরকারের পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বিশেষ করে বৃষ্টির পানিতে বাড়ির আশেপাশে জলাশয়ে, ডোবা-নালায়, ডাস্টবিনে, ঝোপ-জঙ্গলে যেন মশামাছি জন্মাতে না পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। রাত ও দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমানো, জানালায় নেট ব্যবহার করা, প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খোলা না রাখা। বাসার আশপাশে পানি জমতে পারে এমন কোনো উপকরণ না রাখা। কারণ জমে থাকা পানিতেই এডিস মশা প্রজনন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।