পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিবেশবিদের মতে, ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়ায় বিপুল পরিমাণ পানির সাথে আসে বালিও, যার ফলে চার দশক ধরে পদ্মার বুকে বালি জমতে জমতে তলদেশ প্রায় আঠারো মিটার ভরাট হয়ে গেছে। শঙ্কায় শহররক্ষা, তৎপর হয়ে উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড
রেজাউল করিম রাজু : শেষ আষাঢ়ের বর্ষায় মরা পদ্মায় প্রাণ ফিরছে। বর্ষণ সীমান্তের ওপার থেকে আসছে পানি। বাড়ছে ঘোলা পানির ¯্রােত। প্রতিদিন পানি বাড়ছে। যদিও বিপদ সীমার অনেক নিচেই আছে। তারপরও পদ্মাতীরবর্তী এলাকার কোন কোন স্থানে ইতোমধ্যেই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নতুন ঘোলা পানিতে মাছের আশায় ডিঙ্গি নৌকা ভাসিয়েছে। তবে তাতে কিছু কুঁচো চিংড়ি ও ছোট মাছ মিলছে। নদী তীরবর্তী মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বর্ষায় বৃষ্টিপাত ও মরণবাঁধ ফারাক্কার গেটগুলো একটু বেশী খোলায় নদীতে পানি বাড়ছে। ওপারের বর্ষণ আর বন্যার পানি চাপ সামলাতে এক সময় একশো নয়টি গেটের সবগুলো খুলে দেয়া হয় প্রতি বছর। মরা পদ্মা তখন ক্ষনিকের জন্য যৌবনবতী হয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। মাস দুয়েকের জন্য এমন খেলা চলে। বর্ষা মওসুম শেষ হবার সাথে সাথে আবার নদী মরে বালিচরের নীচে চাপা পড়ে ঘুমিয়ে থাকে পরবর্তী বর্ষা মওসুমের জন্য। নদীর এমন গতি প্রকৃতির সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারাও প্রায় সারা বছর ঘুুমিয়ে থাকলেও নদী ভরে যাবার সময় তারাও জেগে ওঠে। শুরু হয় নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে শহর রক্ষার জন্য। এবারো তার ব্যাতয় ঘটেনি। মরা পদ্মায় পানি আসতে শুরু করায় তারাও তৎপর হয়ে উঠেছে। কদিন ধরে চলছে শহর রক্ষার মুল গ্রোয়েন টি-বাঁধ এলাকায় বালিভর্তি ব্যাগ ফেলা। গত বর্ষায় পদ্মা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। পৌছে গিয়েছিল বিপদ সীমার কাছাকাছি। দুপাড়েই ভাঙ্গনের তান্ডব চালিয়েছে। বর্ষণ ও শ্রোতে টি-বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধের পশ্চিমাংশের গোড়া থেকে ইট ও তারের জালি সরে যায়। বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। ভাঙ্গন শুরু হয়। তখন জরুরীভাবে বালির বস্তা ফেলে কোন রকম ভাঙ্গন ঠেকানো হয়েছিল শহর রক্ষার এ মূল গ্রোয়েনটি। এরপর পানি কমতে থাকায় বড় বিপদ হয়নি। কথা ছিল শুকনো মওসুমে এটিকে সংস্কার করে মজবুত করা হবে। এজন্য নাকি পাঁচকোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল ঢাকায়। প্রকল্পের বাজেট কমিয়ে তা অনুমোদন পেলেও সময়মত কাজ শুরু করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা দায় এড়াতে বলছেন দরপত্র আহবানের অনুমতি পেতে নাকি পার হয়েগেছে শুকনো মওসুম। ফের শুরু হয়েছে বর্ষা মওসুম। পানি উন্নয়ন বোর্ডও তড়িঘড়ি করে শুরু করেছে বাঁধ রক্ষার কাজ। গ্রোয়েনের আশেপাশে ফেলা হচ্ছে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষায় তারা আগে ভাগেই শুরু করেছেন টি-বাঁধের ক্ষত মেরামতের কাজ। নগরবাসী তাদের সাথে একমত হতে পারছেন না। তারা এটিকে দেখছেন নদী ভাঙ্গন রোধের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিরাচারিত খেলা হিসাবে। এ সময় বালির বস্তা ফেলা আর নদীর ¯্রােত গোনা একই কথা। তাদের দেয়া তথ্যমতে এবার বাঁধের একশো সত্তর মিটার এলাকাজুড়ে সাড়ে তের হাজারের বেশী বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এজন্য খরচ হবে দু’কোটি ষোল লাখ টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে মূলত এ বর্ষা মওসুমে নদীর পানির ¯্রােত কমানো এবং যাতে বাঁধের উপর চাপ কম পড়ে সেজন্য এমন কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পেরিয়ে এ প্রক্রিয়া শেষ করে এপ্রিলে দরপত্র আহবান এবং মে মাসে এ এস কনস্ট্রাকশন নামে এক প্রতিষ্ঠানকে কাজের অর্ডার দেয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাষ্য হলো এখনও এ বাঁধ নিয়ে শংকার সৃষ্টি হয়নি। নদীর পানির ¯্রােত ও বর্ষার পানি বাঁধের নীচের মাটিতে পকেটের সৃষ্টি করে। যা টি-বাঁধের জন্য ক্ষতিকর। এবার যাতে পকেট সৃষ্টি না হয় সেজন্য আগেভাগে ফেলা হচ্ছে এই বালিবর্তি জিও ব্যাগ। এতে করে টি-বাঁধ সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এমন কর্মকান্ডের সঙ্গে একমত হতে পারেননি সরকারের পানি বিষয়ক টাক্সফোর্সের সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল। তিনি টি-বাঁধ পরিদর্শন করে এসে বলেছেন এখন যে কাজ চলছে তার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই। গবেষনা না করেই সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এটি স্থায়ী কোন সমাধান নয়। আর তাই এতে ভাঙ্গনের ঝুঁকিমুক্ত থাকছেনা টি-বাঁধ। পদ্মা তীরের মানুষও বলছে স্থায়ীভাবে সংস্কার হোক শহর রক্ষার এ মুল গ্রোয়েনটি।
নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন ভারত ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মাকে মেরে ফেলেছে। বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ কমাতে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়ে বিপুল পরিমান পানি এপারে ঠেলে দেয়। এর সাথে আসে বালিও। চার দশক ধরে পদ্মার বুকে বালি জমতে জমতে তলদেশ প্রায় আঠারো মিটার ভরাট হয়ে গেছে। প্রতি বছর বাড়ছে এর বিস্তৃতি ও পুরুত্ব। শহরের তলদেশের অনেক উপরে চলে গেছে বালিচর। আল্লাহ না করুক পানির তোড়ে টি-বাঁধ ও শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেলে শহর তলিয় যাবে কয়েক ফুট পানির নীচে।
এদিকে পশ্চিমে বুলনপুরে থেকে পূর্বে শ্যামপুর পর্যন্ত সতের কিলোমিটার দীর্ঘ শহর রক্ষা বাঁধের অবস্থা ভীষণ নাজুক। বালি দস্যুদের দাপটে বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করছে বালি বোঝায় ট্রাক। এতে বাঁধ আরো দুর্বল হয়েছে। অবৈধ দখলে কোথাও কোথাও বাঁধের অস্তিত্ব হারিয়েছে। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এখনো বাঁধ দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ চলছে। বাঁধের জমি বিক্রিও হচ্ছে। কোথাও মার্কেট নির্মানের প্রস্তুতিও চলছে। এনিয়ে নগরবাসী শঙ্কিত হলেও বাঁধের মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড রহস্যজনক নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বছরের পর বছর ধরে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজান আমরা অবৈধ দখলদারদের তালিকা করেছি। শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান চলবে। দখলকারীরা বলছেন তারা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সব করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।