পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৪ চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষর
ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা এ বছরের মধ্যেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে গতকাল আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর দু’দেশ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। দু’নেতার আনুষ্ঠানিক বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হক জানান, ‘প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন’।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যত দ্রæত সম্ভব মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে উভয় দেশ আলোচনা ও পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা হবে কোন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম এফটিএ চুক্তি। এর আগে উভয় নেতার উপস্থিতিতে ভাতৃপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে অর্থনীতি, কৃষি, জাহাজ শিল্প, উচ্চ শিক্ষা, তথ্য, প্রযুক্তি এবং মিডিয়া বিষয়ে একটি চুক্তি ও ১৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কারো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই। যদি ২০১৭ সালের মধ্যে এই এফটিএ সম্পন্ন হলে এটিই হবে কোন দেশের সঙ্গে প্রথম কোন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এর মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এফটিএ এর অভিজ্ঞতা লাভ করতে যাচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এফটিএ চুক্তিতে দুই দেশ লাভবান হবে। তবে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ অন্য যেসব দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে চাইছে সেগুলো করতে সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ব্যবসা বাণিজ্যের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায় জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ১৪টি দলিল সই হয়েছে। যার মধ্যে ৭টি বাণিজ্য ও ব্যবসা কেন্দ্রিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রের সাফল্য বিশেষ করে বীজ উৎপাদনে বিপ্লব সাধনের বিষয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের নেপথ্য কথা জানার আগ্রহ ব্যাক্ত করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, চুক্তিগুলো এবং দুই দেশের যৌথ ঘোষণা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতাই নির্দিষ্ট করে এবং যাতে দুই দেশের ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করণেরও ইঙ্গিত বহন করে। সফর বিষয়ে শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্টের বক্তব্য তুলে ধরে শহীদুল হক বলেন, প্রেসিডেন্ট এ সফরকে ঐতিহাসিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পকের একটা নব যাত্রা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা- কলম্বো ১৪ চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষর
ঢাকা এবং কলম্বো দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের অংশ হিসেবে অর্থনীতি, কৃষি, জাহাজ শিল্প, উচ্চ শিক্ষা, তথ্য, প্রযুক্তি এবং গণমাধ্যম বিষয়ে একটি চুক্তি ও ১৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার উপস্থিতিতে এই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়। দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবি করুনানায়েকে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি সম্পর্কিত দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত একমাত্র চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে- কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা, উচ্চশিক্ষা, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, দু’দেশের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দু’দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সহযোগিতা, ফরেন সার্ভিস ইন্সটিটিউটের মধ্যে এবং বাংলাদেশের বিস ও শ্রীলঙ্কার লক্ষণ কাদিরগামা ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিসের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, রেডিও, ফিল্ম ও টিভির স¤প্রচারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) ও শ্রীলঙ্কা স্ট্যান্ডার্ডস ইন্সটিটিউশনের (এসএলএসআই) মধ্যে সহযোগিতা, দু’দেশের সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ফ্যাশন ইন্সটিটিউট ও শ্রীলঙ্কা টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল ইন্সটিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্টমন্ত্রী রবি করুনানায়েকে, কৃষি প্রতিমন্ত্রী ওয়াসান্তা আলুউইরা, বন্দর এবং জাহাজ চলাচল বিষয়ক উপমন্ত্রী নিশান্ত মুথুহেট্টিগামা, উচ্চশিক্ষা এবং মহাসড়ক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহন লাল গ্রিরো, অর্থ এবং গণমাধ্যম বিষয়ক উপমন্ত্রী লাসান্তা আলাইগিয়াওয়ান্না এবং বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুণাসেকেরা শ্রীলঙ্কার পক্ষে চুক্তি এবং স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বিডা’র (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম এবং বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান চুক্তি ও স্মারকগুলোতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন মৈত্রীপালা সিরিসেনা। তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথমে একান্তে ও পরে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন সিরিসেনা। শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে তিনদিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেন মৈত্রীপালা সিরিসেনা।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সাথে স্পিকারের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি গতকাল স্থানীয় একটি হোটেলে সফররত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎকালে তারা দু’দেশের সংসদীয় প্রক্রিয়া, আসন্ন ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশন (সিপিএ) সম্মেলন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১৩৬তম ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন (আইপিইউ) এসেম্বলী, সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ ও দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ। প্রেসিডেন্টের এ সফরের ফলে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে দু’দেশের সংসদ সদস্যগণ একসাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং দু’দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। স্পিকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের গতিশীল নেতৃত্বের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। তিনি বিগত আইপিইউ ও সিপিএ নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশকে সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বলেন, প্রেসিডেন্টের এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে শ্রীলঙ্কার যে সকল চুক্তি ও এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে দু’দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। সফররত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বলেন, দু’টি বৃহৎ সংসদীয় বিশ্ব সংস্থা সিপিএ ও আইপিইউ এর নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে-যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলি’র সফল আয়োজনের জন্য স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামী নভেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ৬৩তম সিপিএ সম্মেলন সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ গঠনের জন্য স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, দু’দেশের সংসদ সদস্যদের সফর বিনিময় ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত হবে এবং নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। সূত্র : বাসস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।