ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মোহাম্মদ আবু নোমান : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া অংশের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘মানুষজনকে আটক করে দোষী না নির্দোষ নির্ণয় করা, শাস্তি নির্ধারণ করা, এমনকি তারা বেঁচে থাকবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও যেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলেও বাংলাদেশের সরকার এই বিষয়ে আইনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না বলে দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের’।
গুম মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের সাথে স্পষ্টতই ব্যক্তি ও কোন পরিবারের প্রতি গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনও। গুম হত্যার চাইতে বেদনাদায়ক। হত্যা হলে লাশ পাত্তয়া যায়, গুম হলে লাশও পাত্তয়া যায় না। রাষ্ট্রের কাজ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কেউ এর শিকার হলে সরকারের উচিত এর বিচার করা। এ ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ করা। একথাতো ঠিক যে, গুমের ঘটনা বাড়ছে, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের ব্যাপার। পরিসংখ্যানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাই বেশি গুমের শিকার। কোনো মানুষেরই এমন পরিণতি হওয়া মোটেও গ্রাহ্য করা যায় না।
ইতোপূর্বে দেখা গেছে, ধরে নিয়ে যাওয়ার অনেক পরে লাশ মিলেছে। কাউকে আবার অনেক দিন পর হঠাৎ কোনো জায়গায় উদভ্রান্তের মতো চলাফেরা করতে দেখা গেছে। বরাবরই ভুক্তভোগীদের পরিবার বলে আসছে, তাদের স্বজনকে তুলে নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পরিচয় দেয়া। স্টিকার লাগানো গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এসব বিষয়ে থানায় জিডি করতে গেলে চরম অবহেলার শিকার হতে হয় স্বজনদের। এরপর জিডি নিলেও শুধু জিডি গ্রহণেই যেন শেষ হয়ে যায় তাদের কাজ। পরবর্তীতে নিখোঁজদের ফিরিয়ে আনার কোনো তাগিদ দেখা যায় না বলে স্বজনদের বরাবরই অভিযোগ রয়েছে।
এইচআআরডব্লিউর অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ, অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও আমাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা করেছে এই সংগঠনটি। তাদের বর্তমান প্রতিবেদনটিও সেই প্রচারণার অংশ। এইচআরডব্লিউ তার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ করেছে, তা সঠিক নয়। তিনি আরো বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা আছে। তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না। তারা (এইচআরডব্লিউ) এত গায়ে পড়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে কেন?
প্রত্যাখানের সংস্কৃতি আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়! আর প্রত্যাখ্যান না করে উপায় তো নেই! কেননা, মেনে নেয়াও যায় মনা। ক্ষমতাবানদের ভাবসাবটা এমন যে, দেশের মানুষ নিয়ে যা খুশি তা করবে ওনারা বলার কে! যেখানে রাষ্ট্রের কাজ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেখানে রাষ্ট্রই যখন অস্বীকার করে, তখন জনগণ বড়ই অসহায়।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে বারবার দাবি করে আসছে আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এই দাবিকে প্রায়ই সমর্থন দেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তারা। উল্টো তারা বলেন, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় গোপনে লুকিয়ে আছেন। এ ধরনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগও গ্রহণ করা হয়না। প্রশাসন ও দেশের রাজনৈতিকদের প্রতি জনগণের অবিশ্বাস, আস্থাহীনতার বড় কারণ এ ধরনের ঘটনা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে মোট ৩২০টি নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে অন্তত ৯০ জনের তথ্য রয়েছে, যাদের শুধু ২০১৬ সালেই গুম করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, আটক হওয়া ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে। আর নয়জনের অবস্থা অজানা। ৯০ জনের তালিকায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া তিন বিরোধী নেতার তিন সন্তান রয়েছে, যাদের একজন ছয় মাস পরে ফিরে এসেছেন। বাকিদের এখনো খোঁজ নেই। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে এক সপ্তাহ বা এক মাস গোপন স্থানে আটকে রাখার পর আদালতে হাজির করা হয়েছে।
‘এইচআরডব্লিউ গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে কেন’? আসলে ওরা গায়ে পড়ে বলেনি, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের গায়ে লেগেছে। ইতোপূর্বে ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে আমাদের দেশ ধারাবাহিক ৫ বার দূর্নীতির সূচকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তখনকার ক্ষমতাসীনরাও অভিযোগের প্রতিবাদ, অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছেন। আসলে যে যায় কংকায় সেই হয় রাবন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।