পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, দেশে এখন শাসনতন্ত্র মানা হচ্ছে না। আইনের শাসন মানা হচ্ছে না, বিচার ব্যবস্থার প্রতি ক্ষমতাসীনদের অবহেলা চলছে। ফলে আজকে ভাঙাচুরা সরকার, বেসামাল সরকার হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে শুধু বড় বড় প্রজেক্ট দিচ্ছে। বিচার বিভাগ নিয়ে পার্লামেন্টে যে ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে তা লজ্জাজনক। পার্লামেন্টারিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ পার্লামেন্ট মেম্বারদের জানা উচিত। গতকাল চ্যানেল আই-এ প্রচারিত তৃতীয় মাত্রার টকশোতে তিনি এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় টকশোতে মন্ত্রি পরিষদের সাবেক সচিব ড. সা’দাত হুসাইন বলেন, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ এই তিনটির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় চেক এন্ড ব্যালান্স অপরিহার্য।
সর্বচ্চো আদালতের ষোড়শ সংশোনধীর বাতিল রায় নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, যারা নিজেদেরকে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি মনে করে তাদেরকে মনে করতে হবে শাসনতন্ত্রের অধিকারী। শাসন তন্ত্র মেনে সংসদে এসেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ এই তিনটির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশের রাজনীতিকরা বিশ্বাস করতে চান না যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় দিক হলো- পলিটিশিয়ান ক্যান নট বি ট্রাস্টেড উইথ পাওয়ার। তারা অ্যাবসলিউ পাওয়ারের দিকে চলে যেতে চায়। সে জন্য শাসন বিভাগই বিচার বিভাগকে শাসনতন্ত্র রক্ষার দায়িত ¡দেয়।
পার্লামেন্টে যখন আলোচনা শুনি বিশেষ করে যে ভাষা ব্যবহার করা হয় তা লজ্জাজনক। পার্লামেন্টের একটা ভাষা আছে। যেটাকে পার্লামেন্টারিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বলা হয়। এটা পার্লামেন্ট মেম্বারদের জানা উচিত। যে ভাষায় কথাবার্তা বলা হয়েছে বিচার বিভাগকে নিয়ে এতে করে যারা বলেছেন তারা কিন্তু বিচারকদের ছোট করেননি। ছোট করেছেন নিজেদেরকেই। তাদের ভিতরে যে অসহনশীলতা এটা খুবই দুশ্চিন্তার ব্যাপার। আর বিচার বিভাগ এমন জিনিস তারা বিচার করার চেষ্টা করে। এটা খুবই স্পর্শকাতর। তাদেরকে খুবই খারাপ ভাষায় অসম্মান করা হয়েছে। এতে করে এটা প্রমান করা হয়েছে দেশে বিচার থাকুক এটা তারা চায় না। যদি তারা (এমপি) শাসনতন্ত্র মেনে এমপি হয়ে থাকেন তাহলে তাদেরকে অবশ্যই শাসনতন্ত্র মানতে হবে যে, সুপ্রিম কোর্টের স্থান এক অর্থে পার্লামেন্টের চেয়ে বড়। কারণ শাসনতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার একমাত্র বিচার বিভাগের আছে। পার্লামেন্টে যে আইন পাশ করা হয় সেই আইন সঠিক হয়েছে কিনা শাসনতন্ত্র সম্মত হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব পার্লামেন্টের। পার্লামেন্ট সরকারের উপর একটা ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করে। এটা মানতে হবে। তারা যদি বলে আমরা জনগণের প্রতিনিধি আমরা স্বার্বভৌম, এসমস্ত কথা লেখাপড়া জানা লোকে বলতে পারে না। শাসনতন্ত্র হলো সবচেয়ে বড়। তার আন্ডারে পার্লামেন্ট, তার আন্ডারে জুডিশিয়ারি। কিন্তু জুডিশিয়ারির স্পেশাল পজিশন হলো সে দেখে শাসনতন্ত্র অনুযায়ি দেশ চলছে কিনা। তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে বিচার বিভাগকে। শাসনতন্ত্র অনুযায়ি শাসনতন্ত্রের অভিভাবক করা হয়েছে বিচারপতিদের। সংসদ সদস্যরা যে সংসদে আছে তাদের ক্ষমতা সীমিত। জুডিশিয়ারির ক্ষমতা বিচার ও আইনের দিক থেকে ওয়াচডগ। আইন ঠিক মতো পাস না করলে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে এটা সংবিধানেই লেখা আছে।
ড. সা’দাত হুসেইন বলেন, তিনটা বিভাগ বলা হলেও কার্যকরভাবে বাস্তবে দুইটা বিভাগ। নির্বাহী ও আইন বিভাগে ইন্টারফেইস আছে। নির্বাহী বিভাগের প্রধান আবার সংসদ নেতা। এখানে এসে মিলে যাচ্ছে। এজন্য সংঘর্ষ হতে পারে না। দুইটা আলাদা হলে এই সমস্যা কোন সময় হতো। এখন সমস্যা দেখা দিচ্ছে বিচার বিভাগ ও সংসদের মধ্যে। সংবিধান বিচার বিভাগকে ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধানের ব্যাখ্যা, নাগরিক অধিকার এর প্রশ্ন আসলে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত শেষ সিদ্ধান্ত। এরপর কারো কিছু বলার নাই। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য একটি আলাদা বডি হওয়া উচিত বলে ড. সাদাত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি এর আগেও প্রস্তাব করেছি সুপ্রিম গভর্নেন্স কাউন্সিল জাতীয় কোন কিছু। ব্যবস্থাপনার বড় কথা হচ্ছে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়া উচিত না। কিন্তু বিচার বিভাগকে এটা দেয়া হয়েছে। নির্বাহী বিচার বিভাগকে এটা দেয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে যারা আছেন তারা সেল্ফ কন্ট্রোলড এবং নিজের বিবেক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। হাইকোর্ট আইন অনুযায়ি সব করবে। সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে বলা আছে কমপ্লিট জাস্টিস, উনারা সবকিছু বিবেচনা করে, দেশের স্ট্যাবিলিটি দেশের ভালমন্দ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।
আমাদের বিপক্ষে যখন রায় গেছে তখন আমরাও বলেছি আমরা মেনে নিছি। এটাই হওয়া উচিত। আমি মনে করি এটা আপনার খারাপ লাগবে কিন্তু দেশপ্রেমিক হিসেবে মেনে নেয়া উচিত। যাকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যদি সংবিধান বদলে ফেলা হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা।
পার্লামেন্টও তো নিজেদের গাড়ি নিজেরা এ্যালট করে নিয়েছে। সরকারের রাজস্বের টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে তারা সেই টাকা মওকুফ করে দিয়েছে। এই রাজস্ব মওকুফ করা কিন্তু অনেক বড় বিষয়। তারাও তো অনেক সুবিধা এভাবে নিয়েছে। যখন কারো সিদ্ধান্ত নিজেকে প্রভাবিত করে সেখানে সুপ্রিম গভর্নেন্স কাউন্সিল এর মাধ্যমে হওয়া উচিত। যেনো কারো সিদ্ধান্ত শুধু তিনি উপকৃত এবং অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সংসদ থেকে বলা হয়েছে প্রধান বিচারপতি ও উচ্চ আদালত দেশটাকে পাকিস্তানী করার চেষ্টা করছে এমন মন্তব্যের বিষয়ে ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, এটা অত্যন্ত ভয়াবহ কথা, দুঃখের কথা। দেশে এখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব নাই, রাজনীতিও নাই। এখন রাজনীতি করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসার জন্য রাজনীতি করে, ভাল থাকার জন্য করে। গরিব দেশের সংসদ সদস্য হয়ে সবচেয়ে ভালো গাড়িতে চড়ে। সংসদে যখন আইন পাস করা হয় সেই আইন সংবিধান অনুযায়ি হয়েছে কিনা সেটাতে তাদের (বিচারকদের) কোন লাভ বা লোকসান কোনটাই হয়না। তারা যখন বিচার করে তখন বিভিন্ন যুক্তি, অন্যান্য দেশের রায়কে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে রায় দেয়ার চেষ্টা করে। ভুল-ভ্রান্তি হবেনা সেটা বলা যাবে না। তারা নিজেরা কোন মামলা নেয় না, তাদের ব্যাপার নিয়ে বিচার করার জন্য দেয়া হয় না। অন্য জন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটার বিচার করে।
রাষ্ট্র গঠনের নেতৃত্ব অন্য রকম হতে হবে। বিচার ব্যবস্থা এমন একটা স্পর্শকাতর জায়গা, যেমন আপনি রাজনীতিবিদদের গালি দিতে পারেন, তর্ক-বিতর্ক করতে পারেন, ফুলে মালা কিংবা জুতার মালা দিতে পারেন, কিন্তু তাতে রাজনীতিবিদদের কিছু যায় আসে না। রাজনীতিবিদরা তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই থাকেন। কিন্তু একজন বিচারপতিকে নিয়ে আপনি তর্ক-বিতর্ক করতে পারেন না। এটা একখানে গিয়ে আপনাকে মানতে হবে। সাংবিধানিক কোড মানতে হবে।
বাংলাদেশে এখন পাকিস্তানী আমলের স্বৈর শাসন চলছে, এমনকি তার চেয়েও খারাপ চলছে। বিচার বিভাগ তাদের কাছে যে বিষয় নিয়ে যায় তার বিচার করে। সেখানে পাকিস্তান-ভারতের বিষয় আসে কেন। বর্তমান পার্লামেন্ট সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নাই। এটা অত্যন্ত সীমিত ক্ষমতার পার্লামেন্ট। শাসনতন্ত্র মেনে চলবে, মৌলিক অধিকার মেনে চলবে এবং সম্মান করবে, রুল অব ল মেনে চলবে। এটা সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের দায়িত্ব। একটা বিচার বিভাগে হাত দেয়া এতো সহজ নয়। ভারতে পিপলস হাউজে ইনিশিয়েট করা হয়। আগে স্পিকারকে আগে দেয়া হয়। একজন হাই স্কোরের বিচারপতি নিয়ে আলোচনা করা সারাদেশে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়। কারণ তাকে কিন্তু সহজেই বিতর্কিত করা উচিত নয়। এ সমস্ত কাজ চুপচাপ করতে হয়। ভারতে আপার হাউজে যাওয়ার পর একটা কমিটি করা হয় ওই কমিটি বিচার করে যে সে দোষি না নির্দোষ। তখন দুই হাউজ মিলে যখন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তাকে রিমুভ করা হয়। ভারতে এই দৃষ্টান্ত আছে। এটুকু পড়াশুনা যদি তারা না করে। আমাদের সংসদ সদস্যরা কিছুই মানতে চায় না। বিচার বিভাগের উপর আঘাত করা মানে তো মৌলিক অধিকারের উপর আঘাত করা। কারণ কেউ আক্রান্ত হলে কোর্টের কাছে যায়। আইনের শাসন দেখতে হবে। এই জিনিসগুলোকে আঘাত করা হচ্ছে। এটার মোটিভ ভিন্ন। রুল অব ল থাকবে না। আমি যেটা বলবো সেটা ল। মানবাধিকার থাকবে না। বিচার বিভাগকে যদি আপনি পদানত করতে পারেন তাহলে তো আর কিছুই থাকলো না। এই চিন্তাভাবনাটা পাকিস্তানী চিন্তাভাবনা।
সংসদ সদস্যরা এটা মানবেন না এ বিষয়ে তিনি বলেন, কোন দেশেই বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদরা এতো অসহনশীল হয় না। মনে রাখতে হবে রোমান সামাজ্যও কিন্তু চিরস্থায়ী হয়নি। কোন কিছুই চিরদিন থাকবে না। ক্ষমতা আজকে হোক কালকে হোক ক্ষমতা যাবেই। যারা মনে করে ক্ষমতা গেলে কিছুই না। বিচার বিভাগই কিন্তু রাজনীতিবিদদের বেশি কাজে লাগে। যখন তারা বিপদে পরে তখন তারা সেখানেই বেশি দৌড়াদৌড়ি করে। তাদের রক্ষা করে বিচারপতিরাই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যায় মানুষ হাহাকার করছে। খাবার নাই, চিকিৎসা পাচ্ছে না। মানুষ পানিতে ভাসছে। আমি হলে এই পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত রেখে এই বন্যা আক্রান্ত মানুষেল কাছে ছুটে যেতাম। এমপি, মন্ত্রীদের বলতাম তাদের সাহায্য করার জন্য। তারা এখানে বসে আলোচনা করছে কোন ডাক্তার গরু আর কোন ডাক্তার ছাগল। অত্যন্ত লজ্জার কথা। এটা হয়। বিবেক থাকলে কেউ এটা করতে পারে। আপনি যে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলছেন সেই জনগণ পানিতে ভাসছে আর আপনি এখানে বসে কথা বলছেন।
ড. সা’দাত হুসেইন বলেন, এটা হলে বিচারপতিরা বিচার করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হবেন। কারণ আমাদের অনেক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। তাদের বিরুদ্ধে যখন কোন বিচারপতি বিচার করতে যাবেন তখন তিনি ঘাবড়ে যাবেন। তিনি চিন্তা করবেন আমার কি হবে? পুরো বিচার বিভাগকে একটা আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয়া হবে। খুবই ভীতিজনক ছিল সেটা থেকে মুক্ত হয়েছে। ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গেছে। আমরা মেনে নিয়েছি। এই ক্ষমতা সংবিধান তাদের দিয়েছে। কিন্তু এখন তারা মানতে চান না। নিজের বেলায় আটিশাটি পরের বেলায় চিমটি কাটি। তখন তো কেউ বলেনি না এটা হয়েছে কেন? বা কিছু খারাপ বা ভাল হয়েছে।
ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বলেন, আজকে পার্লামেন্টে বিচারপতিদের নিয়ে যে ভাষায় আলোচনা হয়েছে, যদি ইম্পিচমেন্ট করার পাওয়ার তাদের হাতে থাকতো তাহলে তো তারা গালি দিয়ে ল্যাঙটা করে ফেলতো। এটা কল্পনা করতে পারেন। কারো কোন শাস্তি হয়নাই কিছুই হয় নাই। শুধু বলা হয়েছে তোমরা এটা করতে পারো না। পার্লামেন্টে তো বিচার করা যায় না। কারণ বিচারের উপর আস্থা থাকতে হবে। যেটা দরকার সেখানে কথা হয়না। জজদের নিয়োগের ব্যাপারে কথা হয় না। বিচারকদের আপনারা জাজ করবেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি দেখে তাহলে আপনারা কিভাবে বিচার করবেন। পার্লামেন্টে যারা বড় বড় কথা বলছে তারা শাসনতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে ভেঙেছে। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করছে। তাদের উপর কি আস্থা রাখা যায়।
ড. সা’দাত হুসেইন বলেন, পলিটিক্যাল মাস্টার্সরা যখন ক্ষমতায় আরোহন করে তখন নানা পারিপার্শ্বিক প্রবৃত্তির কারণে হোক কিংবা নিজের প্রবৃত্তির কারণে অনিয়ম করার প্রবণতা থাকে। এজন্যই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়েছে। ধরে নেয়া হয় তারা অনিয়ম করবে। পরিবেশ ও সীমাবদ্ধতার কারণে করবে। পার্লামেন্টে যারা থাকে তারা পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারা কিভাবে আসছে সেগুলো প্রশ্ন আছে। তাদেরকে ওইভাবে শতভাগ বিশ্বাস করা যায় না। এজন্য চেক এন্ড ব্যালান্স দরকার। তা নাহলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কি দরকার, মন্ত্রণালয় তাদের রিক্রুট করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের কি দরকার, মন্ত্রণালয় এটা করতে পারে। অডিটর কন্ট্রলার কি দরকার? ধরে নেয়া হয়, যেই ক্ষমতায় থাকুক পারিপার্শ্বিকতা এবং সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক সময় অনিময় করতে চেষ্টা করা হবে। অনিয়ম যাতে না করা হয় সেজন্য এই বডিগুলো রাখা হয়েছে চেকস এন্ড ব্যালান্স এর জন্য। বিচারকদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। নাহলে তো দেশ চলবে না।
ব্যারিষ্টার মইনুল বলেন, আমি বুঝিনা আমাদের রাজনীতিবিদদের কি হয়েছে। আমরা তো রাজনীতিবিদদের সম্মান করতে চাই। তারা কিভাবে বলে যে তাদেরকে বিশ্বাস করা যায়। তাদের অংশ বিশেষ হতে পারে। এই রাজনীতিবিদরাই কি করেনাই আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য। এটা কি একদলীয় সরকার করেনি। তাদেরকে কিভাবে আমারা বিশ্বাস করবো আস্থা রাখবো? বিচার বিভাগ তো ক্ষমতার জন্য লালায়িত না। তারা তো ক্ষমতা নিচ্ছে না। তারা কখনই ক্ষমতা নেয় না। গণতন্ত্রের মূল কথা হলো কাউকেই অ্যাবসলিউট পাওয়া দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, কোন দেশেই সেটা ব্রিটেন, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় কোথাও বিচারপতি রিমুভ করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে নাই। আপনি যদি কাউকে পার্লামেন্টে নিয়ে বলেন তুমি চোর, তুমি অপারাধী তাহলে তার বিচার কি হলো সেটা বড় কথা নয়, পাবলিকলি তাকে হেয় করা হলো এবং প্রতিষ্ঠানটিই ধ্বংস হয়ে যাবে।
মঈনুল হোসেন আরো বলেন, সরকার মনে হয় ভিন্ন ওয়ার্ল্ডে আছে। দেশে কেউ বলতে পারবে না কেউ নিরাপদ। সরকারের মন্ত্রীরাও বলতে পারবে না তারা নিরাপদ অনুভব করছে। দেশে শাসনতন্ত্র মানা হচ্ছে না, আইনের শাসন মানা হচ্ছে না, বিচার ব্যবস্থার প্রতি অবহেলা। ফলে আজকে ভাঙাচুরা সরকার, বেসামাল সরকার হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে শুধু বড় বড় প্রজেক্ট দিচ্ছে। জনগণের সরকারের বড় দায়িত্ব হলো মানুষের জীবনের নিরাপত্তা আনা। জীবনের নিরাপত্তা হলো আমার মৌলিক অধিকার। এই সরকার পুলিশের উপর এতো বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছে যে এই পুলিশও এখন জনগণের পুলিশ নাই। আজকে আমরা একটা নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে আছি। সরকার এগুলো নিয়ে কথা বলছে না। তাদের এমপি-মন্ত্রীদের জিজ্ঞেস করেন জানতে পারবেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন কিনা। তারা কয়টা পুলিশ নিয়ে চলাফেরা করে।
ড. সা’দাত হুসেইন বলেন, সুআইন থাকতে হবে। সেই সুআইনের সুশাসন থাকতে হবে। এটা হলে দেশ শান্তিপূর্ণ হবে। সবকিছুই এখন আইনের নামে হয়। সুচারুরূপে একটা নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন পক্ষপাতিত্ব হলে সেখানে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে না। একটা গ্রহণযোগ নিরপেক্ষা নির্বাচন করতে পারলে অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে। তারপর একটু একটু করে এগুতে হবে। আমরা প্রথম থেকেই পক্ষপাতিত্ব নির্বাচন করে দেই। এটা করলে একটা সংস্থার উপর নির্ভর করতে হয়। এই বাস্তবায়নকারী সংস্থা পরবর্তীতে নীতিনির্ধারণকারী ভূমিকা গ্রহণ করে। পলিটিক্যাল মাস্টার্সদের নির্দেশনায় যে সংস্থাগুলো কাজ করার কথা তারা যদি নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় নেমে যায় তাহলে পলিটিক্যাল মাস্টার্সরাও নিরাপত্তা বোধ করে না।
ব্যারিষ্টার মইনুল বলেন, এখন কোন বিভাগ ভাল মতো চলছে না, স্বাস্থ্য শিক্ষা কোনটাই না। ক্ষমতায় যারা যায় তাদের অ্যাবসলিউট পাওয়ার থাকে না। একটা সমাজ কতটা সভ্য তা নির্ণয় হয় তার বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন সেটার মাধ্যমেই। এখন যত বাজে লোক, চাটুকার, দুর্নীতি পরায়ন, সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার তালিকা প্রকাশ করেন না কেন। সেটা করবেন না। এই লোকগুলোর এখন শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করবে যাতে শেখ হাসিনা যাতে না হারে। কারণ শেখ হাসিনা হারলে তাদের পালাতে হবে। এজন্য তারা শেখ হাসিনাকে না হারানোর জন্য কাজ করবে। এটা শেখ হাসিনার জন্যই বিপদ হয়ে গেছে। গ্রামে-গঞ্জে গেলে দেখা যায় মানুষ কতটা কষ্টে আছে।
এখন জাতির জন্য দরকার জনজীবনে নিরাপত্তা আনা, বড় বড় দুর্নীতি দমন করা, বিশেষ করে উপরের দিকে বড় বড় দুর্নীতিগুলো। সহনশীল হন, কথা বলতে দেন। কোন সরকারের পতন হয়না ফ্রিডম অব স্পিচের কারণে। জনগণের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করেন। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। দোকানদাররা দোকানের ভাড়া দিতে পারছে না। তাদের আয় নেই। পুলিশ বিদেশীদের রেস্টুরেন্টে যেতে নিষেধ করছে নিরাপত্তা নাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।