Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গাজীপুরে মাল্টিফ্যাবস-এ বয়লার বিস্ফোরণ সাত কারণ চিহ্নিত করে তদন্ত

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কমিটির রিপোর্ট পেশ
গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে ভবন ধস ও হতাহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেফটি বাল্বের যান্ত্রিক ত্রæটিই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন তদন্ত কমিটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং করে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এ সময় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মাহমুদ হাসানসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তদন্ত কমিটির কোন সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
ব্রিফিংকালে জেলা প্রশাসক জানান, ঘটনার দিন জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নির্ধারিত সাত কার্যদিবসের মধ্যেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে তারা সাতটি কারণকে চিহ্নিত করেন। তার মধ্যে পাঁচটি হলো যান্ত্রিক ও বাকি দুইটি হলো প্রশাসনিক ত্রæটি। এর মধ্যে প্রধান কারণই হচ্ছে সেফটি বাল্বের যান্ত্রিক ত্রæটি। রিপোর্টে বলা হয় যান্ত্রিক ত্রæটিগুলোর মধ্যে সেফটি বাল্বের যান্ত্রিক ত্রæটি ও সেফটি বাল্ব সঠিক ভবে কাজ না করা। ফিজিক্যাল ফ্লাগে ত্রæটি, মেটালিক ক্ষয়, পেশার গেজে ত্রæটি ও বৈদ্যুতিক সিগন্যালে ত্রæটি।
বয়লারে প্রেসার গেজটি নষ্ট হয়ে যাওয়া, ডেলিভারী লাইন বন্ধ থাকা, লিভারটিতে ¯øট কাটা না থাকায় বয়লারের কম্পনে ডেড ওয়েট উচ্চ চাপের দিকে সরে গিয়ে ওভারপ্রেসার সিচুয়েশন তৈরী হয়েছিল এবং অপারেটর কর্তৃক প্রেসার রিলিজ করতে ব্যর্থ হওয়া ও বয়লার মেইনটেন্যান্স কর্তৃপক্ষের বয়লার অপারেটরদের উপযুক্ত তদারকির অভাব ছিল।
প্রশাসনিক ত্রæটি দুইটি হলো- প্রশাসনিক অবকাঠামোগত এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রæটি। এসব কারণেই বয়লারটি বিস্ফেরিত হয়েছে বলে কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
তিনি জানান, বিষ্ফোরিত বয়লারটি ১৯৯৬ সালে জার্মানীর অমনিকা কোম্পানী কর্তৃক নির্মিত হয়। ১৯৯৮ সালে ইউরোপ এশিয়াটিক কোম্পানী কর্তৃক স্থাপন করা হয়েছিল। যার রেটিং ছিল ৯৬৮ বর্গফুট। বয়লারটি প্রথম ২০০৩ সালের ১০ জুন বয়লার পরিদর্শক কর্তৃক পরিদর্শন করা হয় এবং রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে। সর্বশেষ প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট ১০ বারে এ বছর ২৪ জুন পর্যন্ত চালানোর অনুমতি প্রদান করে। ১৯ জুন এটির নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। বিষ্ফোরণের দিন বয়লারটির রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ উত্তির্ণ হলেও বয়লারের আয়ুষ্কাল উত্তির্ণ হয়েছে এমনি বলা যাচ্ছে না।
তদন্ত কমিটির ২০ দফা সুপারিশ
প্রতিবেদনের তদন্ত কমিটি ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। তার মধ্যে স্টীম কনজামশন ক্যাপাসিটি অনুযায়ী দেড়গুন স্টীম প্রোডাকশন ক্ষমতা সম্পন্ন বয়লার ক্রয় করা এবং ডেড ওয়েট সিস্টেম বয়লার সেফটি ভাল্ব প্রতিস্থাপন করে স্পিং লোডেড/ আধুনিক সেফটি ভাল্ব স্থাপন করা, চার ঘন্টা অগ্নিপ্রতিরোধক ইট দিয়ে দেয়াল নির্মাণ এবং দুই ঘন্টা অগ্নিপ্রতিরোধক দরজা স্থাপন করা। বয়লার রুম ম্যানুয়াল অনুয়ায়ী নির্মাণ করা। অনুমোদিত প্রেসারে বয়লারের সেফটি ভাল্বের সেটিং প্রেসার নিশ্চিত করা। বয়লার ওভার হেড’র উপরে ছয় ফুট ফাঁকা রেখে আরসিসি ছাদ নির্মাণ করতে হবে। সাত দিনে একবার সেফটি ভাল্ব-এর প্রেসার চেকআপ এবং সেফটি ভাল্বের সেফটি ভাল্ব বেøা-আপ চেক করা, বেøা-ডাউন-ভাল্ব মাসে একবার চেক করা। প্রতিবছর একবার হাইড্রোস্টাটিক ও হ্যামার টেস্ট করা, স্বল্প শিক্ষিত/ অশিক্ষিত বয়লার অপারেটরদের ন্যূনতম দুইমাসের একটি নিবিড় থিউরি এবং প্রাকটিকেল প্রশিক্ষণের আয়োজন করা, কারখানায় ন্যূনতম একজন বিএসসি প্রকৌশলী নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা এবং বয়লার বন্ধ ও চালু করার সময় প্রকৌশলীর উপস্থিত নিশ্চিত করা ও তার লিখিত প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক থাকা। বয়লার, জেনারেটর, টারবাইন, কেমিক্যাল গোডাউনসহ ঝুঁকিপূর্ণস্থানের নিরাপত্তা তদারকি মালিক নিজে বা তার নিজস্ব তত্ববধানে সম্পন্ন করা। বয়লার ও টারবাইন তদারকির জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন, বয়লারে আধুনিক সেফটি বাল্ব ব্যবহার। বিদ্যমান বয়লার আইন ১৯২৩ সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে যুগোপযোগী করে সংশোধন করা সহ ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত কমিটি ২৮ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে এর সঙ্গে ৯১ পৃষ্ঠা সংযুক্তি দেয়া হয়েছে তদন্তে ২৯ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তিনি জানান, ওই কারখানায় ৫ টন ও ১০ টনের ২টি বয়লার ছিল। এর মধ্যে ৫ টনের বয়লারটি বিষ্ফোরিত হয় এবং ১০ টনের বয়লারটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তদন্তে কারখানার ৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। তদন্তে এ বিষ্ফোরনের জন্য বয়লার অপারেটরকে দায়ি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই বয়লারটির বিষ্ফোরণ হলে ওই দিনই গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষ্ফোরণে ১৩ জন নিহত ও অন্তত ৭০জন আহত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ