পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ঘটনার ১৬ মাস পার হয়েছে। এই সময়ে রিজার্ভ চুরি তদন্তে অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রথমে প্রাথমিক রিপোর্ট। পরে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়। একাধিকবার এই রিপোর্ট প্রকাশের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু ঘোষনাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে রিজার্ভ চুরির রহস্য। অপরদিকে টাকা উদ্ধারেও একাধিকবার আশ্বাস দেয়া হয় সব টাকা পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ দীর্ঘ দিনেও চুরি যাওয়া অর্থের বেশিরভাগ অংশই উদ্ধার হয়নি।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়েছে ১৬ মাস আগে। দীর্ঘ এ সময়ে উদ্ধার হয়নি বেশিরভাগ অর্থ। অথচ অর্থ উদ্ধার ও তদন্তের নামে ব্যয় হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ঘন্টায় প্রায় ৪০০ ডলার ব্যয়ে ১ হাজার ৪০০ ঘন্টা তদন্ত করেছে ফায়ার আই নামক একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাকেশ আস্তানা নামে ভারতীয় এক নাগরীক। কিন্তু এ ব্যয় বহুল তদন্তের ফলাফল কি তা আদৌও জানেনা দেশের জনগন। আবার ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তারাও দফায় দফায় ভ্রমন করেছেন। কিন্তু ১৬ মাসেও চুরি যাওয়া অর্থের বেশিরভাগ অংশই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
আবার রিজার্ভ চুরির ১৬ মাসেও কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। জানা গেছে, সুরক্ষিত সুইফট সিস্টেমের সাথে আরটিজিএস নামক একটি সফটওয়্যার সংযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর থেকে কেউ কেউ অতিউৎসাহী ছিলেন। আরটিজিএস সংযোগের পরেই রিজার্ভ চুরি হয়। কারা অতিউৎসাহী ছিলেন নতুন এ সফটওয়্যার সুইফটের সাথে সংযোগ দিতে তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-এফবিআই বলেছে-
‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়’ নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। আর বিষয়টি জানলেও স্বপদেই বহাল আছেন ওই সব কর্মকর্তারা। এমনকি রিজার্ভ চুরি তদন্ত সংস্থা সিআইডি বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কর্মকর্তাসহ ২০ জনের প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পায় রিজার্ভ চুরির সাথে। ২০ জনের বাকি ১২ জন ফিলিপাইন, জাপান ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী।
আবার ফিলিপাইনের দৈনিক পত্রিকা ইনকোয়েরার’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়। চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনের জুপিটার শাখায় ছিল ৯ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত। সেখান থেকে অর্থের বড় অংশ চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে (জুয়ার আসরে)। ক্যাসিনোতেও সেই অর্থ ছিল ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ আরও ২০ দিন। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারকে আগ থেকে অবহিত করলে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব ছিল কী না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, এ অর্থের বেশিরভাগই ফেরত আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু কেন সরকারকে জানানো হলো না, কারা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে ঘটনাটি জানাতে পরামর্শ দিয়েছিল তা আদৌও জানা যায়নি।
এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানার পর পরই তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে ফিলিপাইনে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ওই প্রতিনিধি দল কোনো প্রকার সরকারি আদেশ (জিও) ছাড়া কীভাবে বিদেশ ভ্রমণ করে। একই সঙ্গে সেখান থেকে আসার পর এ-সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন কেন দেয়নি এ প্রশ্নের উত্তর আজও পায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি এ প্রশ্নের সন্তোষজনক কোনো উত্তর পায়নি রিজার্ভ চুরির উপর তদন্তে নিয়োজিত সিআইডি কর্মকর্তারাও। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, সিআইডি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। তবে সাবেক গভর্নর এর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়টি সাথে সাথে সরকারকে অবহিত করলে হয়তো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হতো। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুরি হওয়া অর্থ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক অবহিত হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ অর্থ চুরির অবহিত হওয়ার পরও অর্থ ফিলিপাইনের ব্যাংকিং সিস্টেমে ছিল দুই দিন (৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি)। এর পর এক টানা বিশ দিন ফিলিফাইনের জুয়ার আসরে অর্থ ঘোরা ফেরা করে। সরকারকে জানালে অর্থ উদ্ধার কীভাবে সম্ভব হতো ? এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যখন চুরি যাওয়া অর্থ ব্যাংকে ছিল তখন সরকারকে জানালে এবং সাথে সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ফ্রীজ বা টাকা উত্তোলন বন্ধ করা যেতো। এরপর জুয়ার আসরে যাওয়ার পরেও সরকারকে অবহিত করলে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব ছিল। যেমন, সরকার টু সরকার পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা যেতো। প্রয়োজনে তাৎক্ষনিকভাবে টাকা উদ্ধারের জন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া যেতো।
কিন্তু এতোগুলো সম্ভাবনা থাকার পরেও কেন বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে আগে ভাগে জনগণের অর্থ উদ্ধারে অবহিত করলো না। এ দায়ে ইতোমধ্যে সরকারের চাপে গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আরও দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকে অপসারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া পদত্যাগ পত্রে ড. আতিউর রহমান নিজেই লিখেছেন, ‘চুরি হওয়া ঘটনা পরবর্তী কার্য দিবসেই বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর কাছে বিষয়টি অবহিত করি এবং অর্থ পুনরুদ্ধার, জড়িত পক্ষগুলো সনাক্ত করবার এবং অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করার বিষয়গুলোর দিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিই।’ তার পদত্যাগপত্রের ভাষা দেখে বুঝা যায়, তিনি বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর পরই বিএফআইইউকে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু বিএফআইইউ কেন সরকারকে অবহিত করলো না এটাই এখন বড় রহস্যের বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান এর আগে সাংবাদিকদের জানান, চুরি হয়ে যাওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে আগেই শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার আমরা পেয়েছি। আর ফিলিপাইন থেকে আরও ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার আমরা হাতে পেয়েছি। বাকি অর্থ ফেরত পেতে আলোচনা অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে সে বছর মার্চের শুরুতে। এরপর ১৫ মার্চ এ ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আদালতের নির্দেশে ওই মামলার তদন্তভার পেয়ে দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ শুরু করে সিআইডি। একটি অংশ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত দেশীয় সূত্রগুলো নিয়ে তদন্ত করতে থাকে। আরেকটি অংশ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশী সূত্রগুলো নিয়ে কাজ করছে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলংকায় প্রবেশ করা ২ কোটি ডলার আগেই ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের বড় অংশই এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। এ অর্থ থেকে এখন পর্যন্ত ফেরত পাওয়া গেছে মাত্র দেড় কোটি ডলার। যদিও সিআইডি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলো পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সবগুলো বিভাগের একটি সমন্বিত টিম রিজার্ভ চুরির এ তদন্ত কাজ চালায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।