Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেতারের আধুনিকায়ন দরকার

| প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এমন একটা সময় ছিল, যখন রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা এবং বাংলাদেশ বেতার ছিল এ অঞ্চলের প্রধান গণমাধ্যম। পাকিস্তান আমলে হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদপত্রের বিপরীতে খবর ও বিনোদনের একটি বড় উৎস ছিল বেতার। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরও গণমাধ্যমের ভূমিকায় বেতার ছিল অগ্রগণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশেও বহু বছর বাংলাদেশ বেতার দোর্দন্ড প্রতাপের সঙ্গে এর অস্তিত্ব ঘোষণা করে আসছিল। কিন্তু ক্রমেই বাংলাদেশ বেতারের ভূমিকা নিষ্প্রভ হতে থাকে। বস্তুত টেলিভিশন ও সংবাদপত্রই এখন হয়ে উঠেছে তথ্য ও বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। অথচ বাংলাদেশ বেতারকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করা এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। সেই চেষ্টা না করে বরং বাংলাদেশ বেতারের ভেতর এমন কিছু ঘটানো হচ্ছে, যা এই গণমাধ্যমটিকে দিন দিন আরও দুর্বল করে তুলছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যে ভূমিকা, তা চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। অথচ এখন সাধারণ শ্রোতাদের কাছে বেসরকারি এফএম রেডিওই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
যদিও কিছু ‘শ্রোতা ক্লাব’ গঠন করেই দায়িত্ব সেরেছে বেতার! কিন্তু বেতারের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীই বেতারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তরিক নয়! এখনও মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তি দিয়েই চলছে এর সকল কার্যক্রম। পুরাতন অপ্রচলিত ও অ্যানালগ যন্ত্রপাতির পরিবর্তে আধুনিক ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বেতার জাতি গঠনমূলক তথ্য ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সারাদেশে স¤প্রচার করতে পারে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাধারণ জীবণকাল ১০ থেকে ১২ বছর ধরা হলেও জাতীয় স¤প্রচার কেন্দ্রসহ আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলোর বয়স প্রায় ৩০ বছরেরও বেশী! এই গণমাধ্যমটি পরিচালনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা অনিয়ম ও ত্রুটি। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে ফুটে উঠেছে এর বেহাল দশা। স¤প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রায় অবিশ্বাস্য এই তথ্য যে, নিয়মিত মহাপরিচালক, উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান), পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ইত্যাদি ছাড়াই চলছে এই জাতীয় স¤প্রচার মাধ্যমটি। অনিয়মগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পরও অফিস চালিয়ে যাওয়া, একই পদের বিপরীতে দুই ব্যক্তির বেতন উত্তোলন, সাধারণ ক্যাডারের পদে প্রকৌশলী পদায়ন ইত্যাদি। যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের চেতনায় বিশ্বাসী দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সবচেয়ে বড় এ প্রচারমাধ্যমটি।
বাংলাদেশ বেতারের প্রতি দিতে হবে বিশেষ দৃষ্টি। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের স্বায়ত্তশাসনের দাবিটি অনেক পুরনো হলেও এখনও সেই দাবি পূরণ হয়নি। সরকারের উচিত বাংলাদেশ বেতার যাতে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক গণমাধ্যমের ভিড়ে যোগ্য মাধ্যম হিসেবে টিকে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেয়া। আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর চেয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর পরিচালনা পদ্ধতি বেশি আধুনিক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। ‘সরকারী মাল দরিয়া মে ঢাল’- কথাটা বাংলাদেশ বেতারের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই খেটে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এই গণমাধ্যমের পরিচালনা পদ্ধতির ত্রুটিগুলো সারিয়ে তোলার দায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের। একই সঙ্গে এর অনুষ্ঠানাদিতে আনতে হবে আধুনিকতা। মেটাতে হবে যুগের চাহিদা। আমরা চাই, বেতার বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক অনুষ্ঠান এবং উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ ও উৎসাহ প্রদান সম্পর্কিত অনুষ্ঠান প্রচার করুক। বেতারের কার্যক্রমগুলো দারিদ্র হ্রাস, জেন্ডার বৈষম্য হ্রাস, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে গুরুপূর্ণ ভূমিকা রাখুক। বাংলাদেশ বেতারের ডিজিটাল যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভিশন ২০২১ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হোক। বেতারের একজন একনিষ্ঠ শ্রোতা ও ভক্ত হিসেবে সে প্রত্যাশাই করি...
মেনহাজুল ইসলাম তারেক
পার্বতীপুর, দিনাজপুর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন