Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৃষ্টি হলেই বন্যার অবনতি

| প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতের উজানে বৃষ্টিপাত হ্রাস-বৃদ্ধি : দেশে বর্ষণ আপাতত কম : ব্রহ্মপুত্র-যমুনা  সুরমা-কুশিয়ারাসহ নদ-নদী অপরিবর্তিত : ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে


ইনকিলাব ডেস্ক : দেশের পাঁচটি নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আবার কোথাও কমছে কোথাও বাড়ছে। বৃষ্টিপাত আপাতত কমেছে। নদ-নদীর উজানের অববাহিকায় ভারতে কম বৃষ্টি হচ্ছে। তবে গত কয়েকদিনে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বানভাসী মানুষ না পায় আশ্রয়, না পায় খাদ্য। বন্যা কবলিত এলাকায় বানভাসী মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট :
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, বৃষ্টিপাতের ঘনঘটা আপাতত কমেছে। আষাঢ় শেষের বাকি কয়েকদিনে ঘোর বর্ষণ হলেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। এখন বিপদসীমার উপরে কিংবা ফুঁসে থাকা নদ-নদী আরও ফুলে-ফেঁপে উঠবে। আর তা না হলে প্রথমদিকে স্থিতিশীল ও এরপর ধীরে ধীরে বন্যার উন্নতি হবে। তাই আপাতত শঙ্কা বৃষ্টি নিয়েই। বন্যা আরও দীর্ঘায়িত হওয়া না হওয়ার ভাগ্য এখন নির্ভর করছে বৃষ্টিপাতের মাত্রার উপরই। বিশেষত চলতি সপ্তাহের অবশিষ্ট দিনগুলোতে উজানভাগে (ভারতে) ও ভাটির দিকে অস্থায়ী ও স্বল্প বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যার উন্নতির ধারা বজায় থাকবে এমনটি আশা করা যায়। তবে উজানে আসাম, মেঘালয়, অরুণাচলসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে মৌসুমি বায়ু কম-বেশি সক্রিয় থাকায় আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতে তারতম্য অর্থাৎ হ্রাস-বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সেখানে (অববাহিকায়) ১০-১১ জুলাই কম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার এবং ১২-১৩ জুলাই মাঝারি কিংবা অতিবর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে এক সপ্তাহে (৯ থেকে ১৫ জুলাই) মোটামুটি সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হাল্কা (৪-১০মিলিমিটার) থেকে মাঝারি (১১-২২ মিমি) ধরনের অনেকটা অস্থায়ী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে এ সপ্তাহে কোথাও কোথাও হতে পারে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ধরনের ভারী (২৩-৪৪ মিমি) থেকে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) বর্ষণ। গতকাল (রোববার) আবহাওয়া ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সূত্র থেকে একথা জানা গেছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, সুরমা-কুশিয়ারাসহ বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর নদ-নদীর পানি উজান থেকে নামার হার অব্যাহত রয়েছে। বেশিরভাগ পয়েন্টে গত ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে পানির সমতল কিছুটা বৃদ্ধি পায় অথবা কোথাও কোথাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। কিছু পয়েন্টে খুব ধীরে হ্রাস কিংবা কম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও রয়েছে স্থিতিশীল। সর্বশেষ তথ্যমতে, পাঁচটি নদী ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর ৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার নীচে সতর্কতার পর্যায়ে ছিল। এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি গতকাল পর্যন্ত ছিল সার্বিকভাবে অপরিবর্তিত।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টায় যমুনা নদের পানি অপরিবর্তিত থেকে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ২৫ সেমি উপরে, কাজীপুর পয়েন্টে আরও বেড়ে ২৫ সেমি উপরে এবং সিরাজগঞ্জে আরও বেড়ে গিয়ে ৩০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে গতকালও প্রায় অপরিবির্তত থাকে এবং বিপদসীমার মাত্র ৭ সেমি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ডালিয়া পয়েন্টে আরও কিছুটা কমেছে তিস্তার পানি। বিপদসীমার কাছে ৩০ সেমি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঘাগট গাইবান্ধায় গতকাল অপরিবর্তিত থেকে বিপদসীমার মাত্র ২ সেমি নীচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। টাঙ্গাইলের ঈশানঘাটে ধলেশ্বরী আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অন্যদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর সিলেট বিভাগে সুরমা নদী কানাইঘাটে গতকাল ৩০ ঘন্টায় আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা সিলেটে আরও কমে ২২ সেমি নীচ দিয়ে বইছে। কুশিয়ারা নদীর প্রবাহ আবারও বেড়ে গিয়ে এখন শেওলা ও অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ৮২ ও ৭১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদী শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার আরও ২ সেমি কমে গিয়ে ৪ সেমি নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কংস নদী (নেত্রকোনায়) জারিয়াজঞ্জাইলে গতকাল কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৩৬ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।
পাউবোর বন্যা তথ্যকেন্দ্রের মোট ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার ব্যবধানে পানি বৃদ্ধি পায় ৫১টিতে, শনিবার ছিল তা ৪৯টি। এরমধ্যে সর্বশেষ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল নদ-নদী ৯টি পয়েন্টে। পানির সমতল অপরিবর্তিত রয়েছে একটি পয়েন্টে। হ্রাস পায় ৩৩টি পয়েন্টে। যা বন্যা পরিস্থিতি সার্বিকভাবে অপরিবর্তিত থাকারই সূচক বা দিক-নির্দেশ করে।
এদিকে সর্বশেষ বন্যা ও নদ-নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার উজান থেকে পানি নেমে আসার মাত্রা খুব ধীরে ধীরে কমে আসছে। ভারতের বন্যা কবলিত বিভিন্ন অংশে পানি কমে আসছে। এরফলে দেশের প্রধান বিশেষ করে বন্যা কবলিত এলাকার নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধির হার এখন পর্যন্ত কম রয়েছে। কোথাও কোথাও পানির সমতল অপরিবর্তিত রয়েছে কিংবা কিছুটা হ্রাসও পেয়েছে। তবে এখন সবকিছু নির্ভর করছে বৃষ্টিপাতের উপর। সামনের কয়েক দিনে তেমন বেশি বৃষ্টিপাত না হলে বা স্বল্প ও অস্থায়ী বৃষ্টিতে উজানে এবং দেশের অভ্যন্তরে নদ-নদী অববাহিকায় পানি আর তেমন বৃদ্ধি পাবে না। তবে উজানভাগে যদি এ ক’দিনে হঠাৎ করে অবিরাম ভারী বর্ষণ শুরু হয় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। তখনই বন্যার অবনতি ঘটবে। বৃষ্টি ছাড়া আপাতত আর কোন শঙ্কার কারণ নেই বলে তিনি জানান।
যমুনার পানি বিপদ সীমার ওপরে : বগুড়ার সার্বিক বন্যার অবনতি
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, বগুড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গতকাল যমুনার পানি বিপদ সীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাঙালী নদীর পানিও বাড়ছে। তবে তা এখনো বিপদসীমার নীচে রয়েছে। যমুনার পানি বাড়ায় যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দি উপজেলার নি¤œাঞ্চলের আরো কিছু নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বগুড়ার যমুনা তীরবর্তী ৩ উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হলেও সবচেয়ে বেশি এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলা। এখানকার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নেরই আংশিক এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, ও কামালপুর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত গ্রামের সংখ্যা বেশি। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রায় ১০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছে। প্রতিদিনই বাঁধে আশ্রয় নেয়া বন্যার্তদের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কারণে শিক্ষাদান বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে ৫টি। প্রায় ৩ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমির জমির আউশ, রোপা আমন, পাট ও সবজি আবাদ বন্যায় বিনষ্ট হয়েছে।
সিলেটে দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিপ্রস্থ : ভোগান্তির শেষ নেই
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, সিলেটের আটটি উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যার পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত এলাকার পানিও নামতে শুরু করেছে। তবে পানি কমার সঙ্গে স্বস্তির সন্ধানে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন। গতকাল রোববার বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের আট উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিপ্রস্থ হয়েছিল। ওইসব উপজেলায় মোট ৫৬ টি ইউনিয়নের ৪৬৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। এসব এলাকার ১৭ হাজার ৮৫৮ পরিবারের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাছাড়া ৪ হাজার ৪৯১ টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও আমনের বীজতলাসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে দু’শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এ পর্যন্ত হয়েছে ২৭৫ মেট্রিক টন ত্রাণ ও ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো খাবারও।
কুড়িগ্রামে লক্ষাধিক মানুষ ৫ দিন ধরে পানিবন্দী : ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি সামান্য হ্রাস পেলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট, অষ্টমীর চর, রমনা, রানীগঞ্জ, চিলমারী ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বেগমগহ্ম, রৌমারী উপজেলার শৌলমারী, দাতভাঙ্গা, বন্দবের ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার যাত্রাপুরসহ ২০ ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলসহ চরাঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। এসব এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। বানভাসীদের হাতে কাজ না থাকায় খাদ্য সংকটে পড়লেও এখনো কোন সরকারী বা বেসরকারী ত্রান তৎপরতা শুরু হয়নি। বন্যা কবলিত এলাকাবাসী জানান, এ অবস্থায় ঘরে খাবার ও হাতে কাজ না থাকায় দুঃচিন্তায় আছি। মেম্বার চেয়ারম্যানও কোন সাহায্য করছে না। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বাঁচার উপায় থাকবে না।
ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপরে বইছে : বাড়ছে ভাঙন
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা, করতোয় নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ফুলছড়ির নিকট বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা উপজেলা নদীর তীরবর্তী নি¤œঅঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাধের কয়েকটি স্থানে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল রোববার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে নদীর পানি বৃদ্ধি না পেলেও ব্রক্ষপুএ নদীর পানি বিপদ সীমার ১৪ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছে।
যারা চরাঞ্চালে অবস্থান করছেন তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে আসার মত পরিস্থিতি তৈরী হয়নি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ চরাঞ্চল বেষ্টিত ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ১৩০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনের সম্মুখিন হয়ে পড়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ফুলছড়ি তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি না পেলেও এখনও বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে হচ্ছে। এরেন্ডাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, কয়েকদিনের ভাঙনে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জিগাবাড়ি, পশ্চিম জিগাবাড়ি, হরিচন্ডি, পাগলারচর এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে ১৩০টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। হুমকির মূখে রয়েছে জিগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিগাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ও জিগাবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিক। তিনি বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এখনও সরকারি কোন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয় নাই।
টাঙ্গাইলে পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত শনিবার সকাল থেকেই নদীর পানি বাড়তে থাকে। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নলীন পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ভূঞাপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও গোপালপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিন পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়।
পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে এবং সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষ বাড়ি ঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি
জামালপুর থেকে নূরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পাশাপাশি জেলার ৪ উপজেলার ৪৫ সহস্রাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদ সীমার ৩৭ সিন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
পানি বাড়ার সাথে সাথে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার অন্তত: ১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৪ উপজেলার কমপেক্ষে ৪০ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবরিত এলাকায় মানুষের ঘরে ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবার রান্না করতে পারছে না। বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
তবে জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বন্যাত্তোদের মাঝে বিতরনের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েেেছ।
ফরিদপুরে পদ্মায় পানি বাড়ছে : তীব্র স্রোতে ধসে গেছে সেতু
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, পানি বাড়ছে পদ্মায়। গতকাল গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি ২৪ ঘন্টায় ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় পানি বাড়ার ফলে বিভিন্ন শাখা নদী খাল বিল দিয়ে ফরিদপুরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
গতকাল ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের যোগাযোগস্থাপনকারী গোলডাংগীর পুরাতন সেতুটি পদ্মার তীব্র স্রোতে ধসে গেছে। ভোর ছয়টার দিকে বিকট শব্দে সেতুটির পূর্ব পাশের বড় অংশটি ধসে যায়। ফলে ভোর থেকেই ফরিদপুর শহরের সাথে নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, গোলডাংগী পুরাতন সেতুটির পাশে বড় একটি সেতুর নির্মান কাজ চলছে। কাজের কারনে পদ্মা নদীর উৎসমুখটি বাশ, মাটি দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে বন্ধ থাকা অংশে পানির চাপ বাড়তে থাকে। গতকাল ভোরে পানির তীব্র স্রোতে সেতুটি ধসে যায়। এছাড়া একটি মসজিদসহ কয়েকটি বাড়ি এখন হুমকির মুখে রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ