Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ু ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা জি২০ সম্মেলনে

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১:৫২ এএম


‘বিপজ্জনক জোট’ প্রশ্নে পোপের হুঁশিয়ারি
ইনকিলাব ডেস্ক : বিক্ষোভের মধ্যেই জার্মানির হামবুর্গ শহরে গতকাল পর্দা নেমেছে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের এবারের আসরের। নানা বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মতানৈক্যের মধ্যেও শেষ মুহূর্তে সম্মেলনের একটা চূড়ান্ত বিবৃতি তৈরিতে কাজ করেন মধ্যস্থতাকারীরা। কর্মকর্তারা বলছেন, এক্ষেত্রে একমাত্র অমীমাংসিত ইস্যু ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি।
এবারের সম্মেলনকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভøাদিমির পুতিন এবং রজব তাইয়্যেব এরদোগান তিন নেতাই সম্মেলনের সাইডলাইনে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভøাদিমির পুতিন। তবে তিনজনকে নিয়েই অস্বস্তি রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের। তারপরও যৌথ বিবৃতি প্রকাশের জন্য একটা ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করেন কর্মকর্তারা। গতকাল দিনশেষে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করার কথা।
এরইমধ্যে বাণিজ্যনীতি নিয়ে একমত হন সদস্য দেশগুলোর নেতারা। সবগুলো দেশই সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেছেন, শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
প্রথম দিন শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সঙ্গে সকালের খাবার খান আয়োজক দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল। তিনি এবারের সম্মেলনকে ‘খুবই কঠিন’ বলে মন্তব্য করেন।  
গতকাল অবশ্য সম্মেলন নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। তারা জানান, সম্মেলনের ফলাফল ইতিবাচক। আমাদের একটি ইশতেহার রয়েছে। এটি হচ্ছে অনিষ্পন্ন জলবায়ু ইস্যু।
গত শুক্রবার সকালে সম্মেলনের প্রথম দিনেই করমর্দনের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎ করে স্বল্প সময়ের জন্য কথা বলেন ট্রাম্প ও পুতিন। এরপর তাদের মধ্যে আরও দীর্ঘ আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, ৩০/৪০ মিনিটের বৈঠকের কথা থাকলেও দুই নেতার মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিট কথা হয়েছে।
ম্যারাথন বৈঠকে মার্কিন নির্বাচনে হ্যাকিং এবং এতে রুশ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগসহ পুতিন ও ট্রাম্প অনেক বিষয়ে কথা বলেন। ইউক্রেইন, সিরিয়াসহ অন্যান্য সমস্যা এবং কিছু দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে তাদের কথা হয়। আলোচনায় উঠে আসে সাইবার নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গও। তবে আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিলো গত বছরের মার্কিন নির্বাচনে ‘রুশ হ্যাকিং হস্তক্ষেপ’ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টি।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ‘মার্কিন নির্বাচনে রুশদের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না, পুতিনের এমন মন্তব্য মেনে নিয়েছেন ট্রাম্প।’ তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন বলেছেন, ‘ব্যাপারটি এখনও স্পষ্ট নয়, যেহেতু এই অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে, তারপরও এই ঘটনাটি নিয়ে রুশদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী একটি সমঝোতায় আসতে হবে।’
এদিকে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের প্রতিবাদকারীদের অনেকে মানবিক কারণে ‘ফ্যাসিস্ট অ্যামেরিকার’ বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অনেকে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ব্যানার দেখা গেছে জার্মানির রাজপথে। তবে সবকিছু সামলে নিয়ে এবারের সম্মেলনের একটা সুন্দর ইতি টানতে চান আয়োজকরা। সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিই বলে দেবে তাদের সে চেষ্টা বাস্তবে কতটা সফল হয়েছে!
জি২০ভুক্ত দেশগুলোর বিপজ্জনক জোট’ প্রশ্নে পোপের হুঁশিয়ারি
পোপ ফ্রান্সিস সতর্ক করে বলেছেন, জার্মানীতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন তাকে ‘উদ্বিগ্ন’ করে তুলছে। কারণ সেখানে ক্ষমতাধর বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক জোট’ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশেষ করে শরণার্থীদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। ইতালির লা রিপাবলিকা পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গতকাল তিনি একথা বলেন। পোপ বলেন, ‘আমি শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে বিপজ্জনক জোটের ব্যাপারে অত্যন্ত শঙ্কিত, যাদের মধ্যে এক ধরনের বিধ্বংসী মনোভাব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আমেরিকা ও রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া এবং সিরীয় যুদ্ধ নিয়ে, পুতিন ও বাশারের মধ্যকার ঐক্যের কথা তুলে ধরেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার এ উদ্বেগ অভিবাসীদের নিয়ে যারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি ওই সব দেশের প্রতি ইঙ্গিত করেন যারা ‘এইসব দরিদ্র ও দুর্বল শরণার্থীদের ব্যাপারে শঙ্কিত।’
পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেন, ‘এজন্যই আমি জি২০ সম্মেলন নিয়ে উদ্বিগ্ন। যা মূলত অভিবাসীদেরকেই আঘাত করবে সবচেয়ে বেশি।’
এর আগে গত শুক্রবার তিনি টেকসই বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যে কাজ করতে জি২০ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহŸান জানান। একইসঙ্গে পোপ বিশেষত ইয়েমেন ও আফ্রিকায় সংঘাত ও দুর্ভিক্ষের কবলে থাকা তিন কোটি লোকের দুরবাস্থার কথা তুলে ধরেন।
বাবার শূন্য আসনে বসলেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প!
জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের এক বৈঠকে বাবার আসনে বসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। শনিবার ওই বৈঠক শুরুর সময় ইন্দোনেশিয়ার নেতার সঙ্গে অপর এক বৈঠকে ট্রাম্প অংশ নেয়ায় তার ফাঁকা আসন পূরণ করেন ইভাঙ্কা।
বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প। জি-২০ সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের শূন্যতা তৈরি হলে উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা সেই শূন্যতা পূরণ করার নিয়ম রয়েছে।
শনিবারের বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রাম্প হাজির হন। পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মাঝের আসনে বসেন তিনি।
তবে বাবার অনুপস্থিতিতে বৈঠকে আফ্রিকান অভিবাসন ও স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হলেও তেমন কোনো আলোচনা করেননি ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই বৈঠকের একটি ছবি রাশিয়ার এক কর্মকর্তার পোস্ট করার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ইভাঙ্কা ট্রাম্প নির্বাচিত কোনো নেতা নন। এ ধরনের একটি কূটনৈতিক বৈঠকে উপস্থিতিতে ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মালিক ইভাঙ্কার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
হামবুর্গে মোদী-জিনপিং সাক্ষাতে কি কমবে সীমান্তের উত্তেজনা
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই জার্মানিতে ব্রিকস বৈঠকের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা হল নরেন্দ্র মোদীর। ডোকালা-র প্রসঙ্গ সামনে না এলেও শান্তিপূর্ণ উপায়ে আঞ্চলিক সংঘাত মেটানোর ওপর জোর দিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। ব্রিকস দেশগুলির বৈঠকে নাম না করে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তে ডোকালায় তিন সপ্তাহের ওপর ভারতীয় ও চীনা সেনা মুখোমুখি দাড়িয়ে। চীনের গণমুক্তি ফৌজ ওই এলাকায় রাস্তা তৈরির চেষ্টা করায় বেড়েছে উত্তেজনা। দু’দেশের মধ্যে চলছে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। এরই মধ্যে চমক এল জি-টুয়েন্টি বৈঠকের ফাঁকে ব্রিকস সম্মেলনে।
হামবুর্গে আলাদা কথা হবে না দুই রাষ্ট্রনেতার। বলেছিল বেজিং। কিন্তু, বাস্তবে তার উল্টোটাই হল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে মোদী-জিনপিংয়ের আলাদা কথা হয়েছে বলে টুইটে জানিয়েছেন। নানা বিষয়ে দুই নেতার কথা হয় বলে জানালেও ত্রিদেশীয় সীমান্ত সঙ্কট নিয়ে কথা হয়েছে কিনা তা অবশ্য জানাননি তিনি। সূত্রের খবর, দুই নেতার প্রায় পাঁচ মিনিট কথা হয়।
ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তে ডোকালায় চীনের দখলদারি নিয়ে সরব দিল্লি। একইভাবে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব গোটা দুনিয়া। এ দিন ব্রিকস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আঞ্চলিক সংঘাত ও সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ব্রিকস দেশগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। আর্থিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য জি-২০ যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে, দেখতে হবে তাও।
ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আর্থিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সন্ত্রাস দমনে জোর দেন। হামবুর্গে মোদী-জিনপিং সাক্ষাতের পর ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তে উত্তেজনা কতটা কমে এখন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা ভারত। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ