পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : জনগণ তাদের ইচ্ছায় ভোট দেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, এই স্লোগান কিন্তু আমরাই শুরু করেছি। আমরা সবসময় নির্বাচনে বিশ্বাসী। নির্বাচন চেয়েছি। এবারও নির্বাচনে জনগণ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার আশাবাদ জানিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তার সরকারের আমলেই উদযাপন হবে বলে আশা করেন তিনি।
এছাড়া ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীও নিজের শাসনামলে উদযাপন করতে চান প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অতীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করার তাগিদ দিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা অতীত ভুলে যাই, পরে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখি। ক্ষমা করা যায়, কিন্তু অতীত ভুলে যাওয়া উচিত নয়। অতীত একেবারে ভুলে গেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় না বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর কী পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন করেছে সেটা আর্কাইভে রাখা দরকার। সবার জানা দরকার। তারা কারাগারে ঢুকেও আমাদের নেতাকর্মী মেরেছে। আমরা অতীত ভুলে যাই, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখি। তিনি বলেন, অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হয়। এ জন্য অতীত একেবারে ভুলে গেলে চলে না। জিয়াউর রহমানের সময় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার করেছিল, সেই ইতিহাসটা এদেশের মানুষের জানা উচিত। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের বলবো, প্রতিটি এলাকায় আমাদের টিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আছে। ওই টিমের নেতৃত্বে এলাকাভিত্তিক কাজ করে দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে। এগুলো আমাদের আর্কাইভে রাখা দরকার। মানুষকে জানানো দরকার।
সামরিক শাসনের সময়ে দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতা দখলকারীরা রাজপথে আন্দোলন করা আওয়ামী লীগ ও দলটির অনুসারীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা ছিল জেলে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে মেরে গুম করে দিয়েছে, পরে খোঁজও পাওয়া যায়নি। সে সময় দলের নেতাকর্মীদের ওপর এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল যে সেই নির্যাতিতরা আর বেশী দিন বাঁচেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করেও আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে। এ সময় বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ ভোটের মালিক। জনগণ ভোট দেবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব এই সেøাগান কিন্তু আমরাই শুরু করেছি। আওয়ামী লীগ সময় সময় নির্বাচনমুখী। নির্বাচনে বিশ্বাসী বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় সেটা প্রমাণিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা যেসব কাজ হাতে নিয়েছি যেসব কাজ বাস্তবায়ন করেছি, যেসব মহাপ্রকল্প হাতে রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আরও এক টার্ম ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ সময় তিনি আরও বলেন, আমি চাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে।
খন্দকার মোশতাকের শেষ পরিণতি বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বেঈমানরা বেশী দিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে তাকে অন্যরা ব্যবহার করে, কিন্তু বেশী দিন ক্ষমতায় রাখে না। খুনী মোস্তাক ও পলাশীর যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের ইতিহাস এক।
স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করল, মানুষ মারল, গণহত্যা করল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তারাই ক্ষমতায় এলো। বেঈমান খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতায় বসাল। কিন্তু বেশিদিন রাখল না। তাকেও সরিয়ে দিল যারা বেঈমানি করিয়েছে তারাই।
তিনি আরও বলেন, এরপর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলেন। তার ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে অপশক্তি রাষ্ট্র পরিচালনায় আসে। দেশ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে। দুর্নীতি-লুটতরাজ শুরু হয়। অন্য স্বৈরশাসকদের মতো তিনিও এলিট শ্রেণি তৈরি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেন। আইয়ুব খানও এমনই করেছিলেন। এভাবে ২১ বছর দেশ অন্ধকারে ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হয়। দেশের মানুষের যে উন্নতি হওয়ার কথা ছিল সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। একই সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের সহায়তায় এলিট শ্রেণি গড়ে ওঠে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতা দখরকারীরা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা চালায়।
তিনি বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন শুরু করি। জনগণের জীবনমান যেন উন্নত হয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করি। জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করি। সে কাজের সুফল মানুষ এখন পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখন খাদ্যের অভাবে হাহাকার নেই। একসময়কার মঙ্গাপীড়িত এলাকায় মঙ্গা নেই, দুর্ভিক্ষ নেই। মানুষ পেট ভরে খেতে পারে। বেকারত্বের হার কমে গেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, মাগুরা নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের বিএনপির একক নির্বাচন জনগণ দেখেছে। ষড়যন্ত্র করে ২০০১ এর নির্বাচনেও আমাদের হারিয়ে দেয়া হয়। তারপর আবার দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়। আমরা ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে এ দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করি।
বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বন্যার্তদের পাশে নেতাকর্মীদের দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে হবে। বিএনপি দেশ শাসন করতে নয়; ভোগ করতে, লুটপাট করতে ক্ষমতায় আসে এটাও জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন করে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে; এটা প্রমাণিত।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, নির্বাচন এলে তারা বিভিন্ন রকম টালবাহানা শুরু করে। এসবও জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। ভোট জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে বলে আমরা মনে করি।
আমাদের সরকার হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া ভবন তৈরি করেনি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইশতেহার হাতে নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করি। এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে ২০১৯ সালে আরও বড় আকারে বাজেট দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বলে উন্নয়নের সুফল জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছি। সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।
২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনি আইনে আছে, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়া যায়। এই আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।