Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেমিট্যান্স নিম্নমুখীতার পাঁচ কারণ

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দীর্ঘদিন থেকেই প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্সে) নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। এটা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগের পরও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। যা গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রবাসী আয়ের এই ধ্বস উদ্বিগ্ন করছে সরকার, অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এদিকে প্রবাসী আয় কমার পেছনে ৫টি কারণ দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের সঙ্গে বেশকিছু দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দরপতন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে স্থায়ী হওয়া, সৌদি আরবে আকামা (বসবাসকারী পরিচয়) সংক্রান্ত খরচ এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহারের কারণেই প্রবাসী আয় কমছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি ডলারের হিসাবে রেমিট্যান্স প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য যে সব দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে- সে সব দেশের স্থানীয় মুদ্রা ডলারের তুলনায় অবমূল্যায়ন হয়েছে। আর তাই প্রবাসী আয় কমছে।
এদিকে আরব দেশগুলোর অর্থনীতি জ্বালানি তেলের ব্যবসা নির্ভর। এসব দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার ধাক্কারও প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম কমায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কমে এসেছে। তাই শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে এবং কোথাও কোথাও নতুন নিয়োগও বন্ধ রয়েছে।
একই সঙ্গে এক সময় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তবে এখন তাদের অনেকেই সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন। ব্যবসা করতে গিয়ে তারা সেখানে বিনিয়োগ করছেন। কোনো কোনো দেশে নিয়মের আওতায় সেদেশের নাগরিকদের ব্যবসায় অংশীদার হিসেবে রাখতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে একটু ছাড় দিতেও হচ্ছে। এসব ব্যবসায়ীরা পরিবার নিয়ে ওই দেশগুলোতে স্থায়ী বসবাস করছেন। এতে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা হারাচ্ছে।
অপরদিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে নতুন লোক নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে সৌদি আরবে আকামার একটা সুযোগ রয়েছে। এই আকামার কাগজ বের করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যা প্রভাব ফেলছে রেমিট্যান্সে।
এছাড়া মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহারের কারণে অবৈধ পথে দেশে টাকা আসছে। বেশ কয়েকটি দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে ভুয়া এজেন্ট সেজে এদেশের এক ধরনের অসাধু এজেন্টের কাছে তথ্য দিয়ে ক্যাশ ইন করে টাকা পাঠানো হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা দেশে অর্থ পাঠালেও তা রেমিট্যান্স হিসেবে যোগ হচ্ছে না।
এসব কারণ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স অনেক কমেছে। তবে এই কমে যাওয়া রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জুনে রেমিট্যান্স সেবার মান বাড়াতে দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ৫টি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- প্রতিটি শাখায় রেমিট্যান্স হেল্প ডেস্ক চালু করা; প্রবাসী আয়ের বেনিফিসিয়ারিকে (উপকারভোগী) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেমিট্যান্স সংক্রান্ত তথ্য প্রদান নিশ্চিত করা; গ্রাহক হয়রানি রোধে প্রতিটি শাখায় প্রবাসী বা প্রবাস আয়ের বেনিফিসিয়াশিদের জন্য আলাদা খাতায় ক্রমানুসারে অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা; পাক্ষিক ভিত্তিতে অভিযোগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগকে জানানো এবং প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকের নিজস্ব ও সরকারের সব ধরনের বিনিয়োগ সেবার প্রচার করা ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স নেওয়ার সুবিধা প্রচার করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে আমরা বেশ কিছুদিন ধরে নানা উদ্যোগ নিয়ে আসছি। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহার রোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রোভাইডারকে দিয়ে এই বিষয়ে সতর্ক হতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। আমাদের দূতাবাসকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। বিদেশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিয়ে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, কয়েকটি দেশে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। প্রবাসী আয় বিতরণের সঙ্গে যুক্ত দেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কিছু এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। আমরা সার্ভিস প্রোভাইডারদেরকেও সতর্ক করেছি। ব্যাংকগুলোকে তাদের সার্ভিলেন্স বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আমরাও পরিদর্শন করছি।
শুভঙ্কর সাহা বলেন, জনসচেতনতা তৈরিতে বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ করেছে। সরকারও এক্ষেত্রে কাজ করছে। রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের যে খরচ হচ্ছে- সেটাতে সাবসিডি দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। এই বিষয়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মতামত চেয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohammed Saleh Bablu ৭ জুলাই, ২০১৭, ১১:৪৫ এএম says : 0
    এই পর্যন্ত কোন সরকার ই প্রবাসী দের কল্যানে ভালো কোন পদক্ষেপ নেয় নাই ? আমরা প্রবাসীরা যখন দেশে ছুটিতে যাই , প্রতি পদে পদে আমাদের হয়রানির শিকার হতে হয় , এয়ারফোটে হইতে বাড়ি পর্যন্ত ? বাসা বাড়িতে চুরি ডাকাতি ছিনতাই , চাঁদাবাজি তো আছেই ? বিদেশ আমরা যারা কর্মরত আছি , কোন কাজের প্রয়োজনে যদি বাংলাদেশ মিশন গুলতে যাই ঐ সব মিশনের কর্মকর্তার আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে না ? রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠালে সময় লাগে , রেইট কম দেয় , এবং পাঠাতে টাকা খরচ হয় , আর মোবাইলে বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে দ্রুত সময়ে ভালো রেইটে বিনা খরচে টাকা পাঠানো যায় ???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ