ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
আমাদের মাঝে বিশেষ একটা ভুল ধারণা আছে যে, ছোট ছোট শিশুদের মসজিদে নেয়া যাবে না কিংবা নেয়া গেলেও তাদের সবার পিছনে অথবা এক পাশে দাঁড়াতে দিতে হবে। তাতে যতটা না সমস্যা, তার চেয়ে বেশি সমস্যা এমনভাবে এটা বলা হয় অথবা এমন ব্যবহার তাদের এবং তাদের সাথের অভিভাবকের সাথে করা হয় যাতে অভিভাবকরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। অথচ আমরা জানি যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর নাতিদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.) তাঁর ঘাড়ে চড়ে বসতেন। এমনকি তাদের এ খেলায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে সে কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদাতে বিশেষ সময় ক্ষেপণ করতেন। সাহাবীরাও তা প্রত্যক্ষ করতেন। এমন কোন হাদিস পাওয়া যায়না যে, রাসুল (সা.) শিশুদের মসজিদে নিতে অনুৎসাহিত কিংবা নিষেধ করেছেন। বরং হযরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে পাই, তিনি (সা.) তাদের মসজিদে এবং ঈদের মাঠে নিতে আদেশ করেছেন। এ ছাড়াও মসজিদে নববী ছিল তখনকার পাঠশালা/স্কুল/মাদরাসা/ কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, শিশুরা সবাই শিক্ষা গ্রহণ করতেন। মসজিদ ছিল সকল প্রকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের স্থান। সেখানে শিশুদের অবাধ চলাফেরাও ছিল স্বাভাবিকভাবে।
হ্যাঁ একটা যুক্তি হয়ত দেয়া যেতে পারে যে, ছোট শিশুদের মসজিদে নিলে তারা পেসাব-পায়খানা বা নোংরা করে দিতে পারে। এমন আশঙ্কা থাকলে সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে। তাই বলে তাদের মসজিদে নেয়া যাবে না তা কখনই হতে পারে না। এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করা উচিৎ। অপরপক্ষে একটা কথা চিন্তা করুন, ছোট বাচ্চাদের যদি এ বয়সেই মসজিদে নেয়ার অভ্যাস না করি তাহলে ওদের অভ্যাসটা কীভাবে হবে? যেদিন তাদের উপর সালাত ফরজ হবে সেদিন সকালে উঠেই যদি বলেন ‘চলো মসজিদে যাই’ আর ওমনি সে আপনার সাথে মসজিদে যাবে এমন ভাবা কতটা যৌক্তিক হবে বিবেচনা করুন। অন্যভাবেও চিন্তা করে দেখুন, যে সময়টা সে আপনার সাথে মসজিদে যাবে, আসবে এবং সালাতসহ অন্যান্য কাজে মগ্ন থাকবে সে সময়টাতে হয়তো সে বাসায় পড়ালেখার পাশাপাশি টিভি দেখা, কম্পিউটারে কিংবা মোবাইলে গেম খেলায় ব্যস্ত থাকতো। ভার্চুয়াল জগতের আজকের শিশুদের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনে অভ্যস্থ করতে তাদের ছোটবেলাতেই মসজিদমুখী করতে হবে।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে তাদের মসজিদে নিলে একটা বিশেষ শিক্ষা তারা পাবে, যাতে তারা আরো জীবনমুখী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ইসলামের শিক্ষাটাও তেমন। চিন্তা করে দেখুন, বাংলা নববর্ষের দিন, কিংবা অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে শিশুদের তাদের বাবা-মা কিংবা অভিভাবকরা ঘাড়ে চড়িয়ে নিয়ে যায়। অপরপক্ষে, ইসলামী অনুশাসনের বেলায় তাদের সাথে এমন আচরণ করা হয় যা তাদের ইসলাম থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। তারা হয়ত এসব ইসলামী কার্যক্রমের কথা জানতেই পারে না।
আমি মালয়েশিয়ায় থাকাকালীন আইআইইউএম-এর মসজিদে দেখেছি ছোট ছোট বাচ্চারা (ছেলে-মেয়ে উভয়ই) তাদের বাবা মায়ের সাথে ইতিকাফ পর্যন্ত করতে। কা’বার চত্তরে তাওয়াফ করতে, সাঈ করতে, কাতারে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখিছি অনেককে। এটাই তো ইসলামের শিক্ষা। এ শিক্ষা থেকে আমরা আমাদের সন্তান, ভাই-বোনদেরকে দূরে রাখছি বলেই শিশুরা, যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে অপসংস্কৃতিতে, ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে। এসবের প্রতিকার এখন অবশ্যম্ভাবী।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।