Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বন্যার্তরা

| প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘পানি জীবন পানিই মরণ’ প্রবাদটি হারে হারে টের পাচ্ছেন বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। পানি যন্ত্রণায় রান্নাবান্না করতে না পারায় তারা আছেন তীব্র খাদ্য সংকটে। একদিকে খাবার জন্য সুপেয় পানি পাচ্ছেন না; অন্যদিকে বন্যার পানি তাদের জীবন করে তুলেছে দুর্বিসহ। সম্পদের ব্যপক ক্ষতি ছাড়াও অনেক কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বন্যা। বন্যার পানিতে চরম বিপর্যস্ত মানুষগুলো তাকিয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। তাদের বিশ্বাস আত্মমানবতার সেবায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কারো তুলনা চলে না। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে (বন্যা) তিনি দুর্গতদের দুর্ভোগ যন্ত্রণা লাঘবে এগিয়ে আসবেন।
বৃষ্টির পানিতে গতকাল ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় পথচারীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগ। ঘর থেকে বের হয়ে পানির কারণে মানুষকে যে কত ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সে বিবরণসহ সচিত্র খবর মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে। রাজধানীতে বসবাসরত মানুষের ‘পথের সাময়িক পানির দুর্ভোগ যন্ত্রণার’ সঙ্গে তুলনা করুণ বন্যায় সাপ্তাহ-মাস পানির নীচে থাকা গ্রামগঞ্জের দুর্গত এলাকায় বসবাসরত মানুষের দুর্ভোগ-যন্ত্রণার কথা! দেশের কয়েকটি জেলার মানুষ বন্যাকবলিত। সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলার উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বিপন্ন হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুশিয়ারা, সুরমা নদীর আশপাশের শত শত গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে সম্পদের। বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমনকি হাটবাজার তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। উজানের ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে তিস্তা নদী, ব্রক্ষèপুত্র নদ ও যমুনা নদীর ভাঙ্গনে নিলফামারী-রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট-গাইবান্ধা-বগুড়া-সিরাজগঞ্জ জেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত। বন্যার পানিতে যেমন তালিয়ে গেছে ঘরবাড়ি; তেমনি নদী ভাঙ্গনে হারিয়েছেন ফসলি জমিসহ মাথা গোজার ঠাই আবাসস্থল। নীচু এলাকাগুলোয় কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও বুক পর্যন্ত পানি। পানির মধ্যে এ সব এলাকার মানুষ চরম দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন অথচ কারো ঘরে খাবার পানির নেই। দুর্গত মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রধানামন্ত্রী তাদের পাশে থাকবেন সে প্রত্যাশা সবাই। দুর্গতরা জানেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত উদ্যোগই কেবল পারে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে। কারণ জনগণের সাহার্য্য সহায়তার নামে বিদেশ থেকে যে এনজিওগুলো ডলার আনে তাদের কেউ দুর্গতদের পাশ দাঁড়াচ্ছে না। কয়েকমাস আগে হাওরে বন্যার সময় যেমন ফসল হারানো মানুষের পাশে এনজিওগুলোকে দেখা যায়নি; তেমনি এখনো বন্যার্তদের পাশে তাদের দেখা যাচ্ছে না। আর আগে যেমন দুর্গত মানুষের সাহার্য্য সহায়তার জন্য সমাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে আসতেন; রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও সাংস্কৃতির সংগঠনগুলো গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে সে অর্থ দুর্গতদের মানে বিলিয়ে দিত; ক্লাব-পাঠাগার ও সংস্কৃতি সংগঠনের তরুণরা অর্থ সংগ্রহ করে দুর্গতদের মাঝে ছুটে যেতেন; সে দৃশ্য এখন চোখে পড়ে না। এনজিওগুলো বাংলাদেশের বন্যার পানির চিত্র এবং মানুষের দুর্ভোগের চিত্রের খবরের পত্রিকা কাটিং ও টিভি খবরের ভিডিও দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনছে ঠিকই; কিন্তু সে টাকা দুর্গতদের কাছে পৌঁছে না। নিজেরাই তারা ওই টাকা দিয়ে গাড়ী বাড়ী করছেন, ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়াচ্ছেন এবং সম্পাদশালীদের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাচ্ছেন। আবার দুর্গতদের সহায়তায় ঢাক-ঢোল পিঠিয়ে প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং মন্ত্রী-এমপিদের আদের্শ নির্দেশ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয় ঠিকই; তাতে দুর্গতদের দুর্ভোগ কমে না। টিভি ক্যামেরার সামনে লোক দেখানো কিছু ত্রাণ দেয়া হয় ঠিকই; কিন্তু বন্যার পানিতে যারা সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব তাদের ঘরে কমই পৌঁছে সেই ত্রাণ সহায়তা। সে কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, বগুড়ার বন্যা দুর্গত মানুষ তাকিয়ে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন বন্যা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। একই সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আগষ্টের শেষ দিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। এ বন্যা মোকাবিলায় সরকারের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। যে কোনো দুর্যোগে প্রতিটি বিভাগকে দায়িত্ব পালন ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় দুর্গতরা প্রহর গুনতে শুরু করেছেন কখন তারা সহায়তা পাবেন সে প্রত্যাশায়। কারণ প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং মিডিয়ায় ত্রাণ-সহায়তার প্রচারণা আর বাস্তবতা এক জিনিস নয়। সেটা কয়েক মাস আগে হাওড় অঞ্চলে আগাম বন্যার সময় দেখা গেছে। ভারতের পানিতে হঠাৎ সুনামগঞ্জ-সিলেট-নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জের হাওরে বন্যায় লাখ লাখ কৃষকের জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল হারিয়ে চরম দুর্দশায় পড়েন লাখ লাখ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা ছুটে গিয়ে দুর্গতদের দুর্দশার চিত্র দেখে তাদের সহায়তার উদ্যোগ নেন; সহায়তা করেন। অথচ হাওরের মানুষকে সহায়তার লক্ষ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিব এবং এমপিদের দৌঁড়ঝাপ মিডিয়ার বদৌলতে মানুষ দেখেছে। কিন্তু হাওরের কম দুর্গতর ঘরেই ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেছে। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে রমজান মাসে হাওরের অনেক মানুষ খেয়ে না খেয়ে রোজা করেছেন। আর ঈদের দিন তাদের অনেকের ঘরে খুশি না।
আত্মমাবনতার সেবায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্য কারো তুলনা চলে না। যাদের কেউ নেই তাদের পাশে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই হয়তো তাঁর পক্ষ্যে এটা সম্ভব হচ্ছে। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে স্মরণকালের ভয়াবহ আগুনে দুই বোন রুনা ও রত্মার আপনজন হারানো কথা স্মরণ আছে? রুণার বাগদানের কথা ছিল। ওই অগ্নিকান্ডে বরপক্ষ্যের লোকজনসহ ৭ জন প্রাণ হারায়। ওই রত্মার ও রুনাকে ‘মায়ের মমতায়’ কাছে টেনে নিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু মায়ের মমতা দেননি; তাদের বিয়ে দিয়েছেন এবং এখনো যাবতীয় খরচ বহন করেছেন। এখন পর্যন্ত ওই রুনা-রত্মাদের মা তিনি। এ ধরণের আরো অনেক মহানুভবতার গল্প শেখ হাসিনা নামের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর একটি বাড়ি একটি খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, সবার জন্য বিদ্যুৎ, আশ্রয়ন প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম, বিনিয়োগ বিকাশ, পরিবেশ সুরক্ষা, সমুদ্র পাড়ের জেলেদের ৪০ দিনের খাদ্য কর্মসুচি ইত্যাদি কর্মসূচিতে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তাইতো তিনি (শেখ হাসিনা) কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘জনগণের সেবার জন্যই আমরা রাজনীতি করি। শুধু সরকারি দলে থাকলেই নয়, বিরোধী দলে থাকতেও আমরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি’। দুর্গতরা চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের পাশে দাঁড়ালে তাদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ