Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মামলা তদন্তে গতি নেই গ্রেফতার হয়নি কেউ

মির্জা ফখরুলের উপর হামলা

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলার মামলা তদন্তে গতি নেই। অভিযুক্ত আসামীরা এখনও প্রকাশ্য ঘুরছে। ভয়ঙ্কর এই সন্ত্রাসী হামলার ১৬ দিন পরও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে আসামীরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য না দিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফলে আলোচিত এই হামলার ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে কি না-তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত রাঙামাটিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে যাওয়ার সময় গত ১৮ জুন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী গোচরা বাজার এলাকায় বিএনপির মহাসচিবের গাড়ি বহরে হামলা করে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। এ হামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ৬ নেতা আহত হন। ভাঙচুর করা হয় মির্জা ফখরুলকে বহনকারী গাড়িসহ তিনটি গাড়ি।
এ হামলার ঘটনায় গত ২১ জুন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বাদি হয়ে আদালতে দ্রæত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অন্তত ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসাবে আসামী করা হয়। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে মামলাটি তদন্ত করে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার এক পক্ষকাল পরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র টিম রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে মামলা তদন্তে এখনও কোন অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থার একজন কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে মামলার বাদি অ্যাডভোকেট এনামুল হক গতকাল (সোমবার) ইনকিলাবকে বলেন, আইন সবার জন্য সমান বলা হলেও এক্ষেত্রে তার প্রমাণ মিলছে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলার ১৬দিন পরেও হামলাকারীদের কাউকে গ্রেফতার না করার ঘটনা প্রমাণ করে আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। তিনি বলেন, পুলিশের সামনেই হামলা হয়েছে, হামলাকারী কারা তাদের সবাই চেনে, পত্র-পত্রিকায় তাদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। মামলার এজাহারেও তাদের নাম-ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।
অথচ তারা কেউ গ্রেফতার হয়নি। ঘটনার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থেকে শুরু করে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা বলেছিলেন হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। অথচ বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আমরা মামলা তদন্তের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত। তিনি বলেন, আমরা এখনও অপেক্ষায় আছি, দেখি আদালতে তারা (পিবিআই) কি প্রতিবেদন দেন। তার উপর ভিত্তি করেই আমরা পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আইনী লড়াই চালিয়ে যাব।
মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা হাতে আসার পরই আমরা মামলার তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। তদন্ত কর্মকর্তাকে সহায়তা করতে কয়েক জন সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সঠিক ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি বলেন, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে এ পর্যায়ে আসামীদের গ্রেফতার করার বিধান নেই। আদালতের নির্দেশা মতেই মামলার তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হবে। আদালত ১৭ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন তার আরও সময় প্রয়োজন তিনি আদালতের কাছে আরও সময় চাইতে পারেন।
দ্রæত বিচার আইনে মামলার তদন্ত শেষ করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রæত সময়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক অটোরিকশা চালকের করা মামলার বিষয়ে এখনও আদালতের কোন নির্দেশনা পাননি বলেও জানান পিবিআই কর্মকর্তা আবদুর রহিম।
মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলার পর পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনাকে ঘটনা তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তিনি হামলায় জড়িতদেরও গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। তবে ঘটনার পর কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল হামলার ঘটনায় মামলা না হওয়ায় তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তবে মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশের সামনেই ঘটনা ঘটেছে। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রয়োজন পড়ে না। পুলিশ তাৎক্ষণিক হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে পারত। বরং পুলিশ তা না করে হামলাকারীদের তখন পাহারা দিয়েছে। আর এখন আসামীরা এলাকায় থেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য দিতে বাধা দিচ্ছে।
এদিকে পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) জুলফিকার আলী হায়দারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রায় সবাই ওইদিন বিএনপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলার কথা জানান তদন্ত টিমের সদস্যদের। তবে হামলাকারী কারা তাদের নাম বলতে চাননি অনেকে। তদন্ত দলে থাকা পিবিআই’র একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুনেছি। কারা হামলায় জড়িত তাদের ব্যাপারেও একটি ধারণা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে হামলার ধীরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছে বলে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, মামলার এজাহারে যাদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের অনেককে হামলায় অংশ নিতে এসব ছবিতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অনেকে হামলাকারীদের চিনলেও ভয়ে তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করছে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ঘটনা প্রমাণ করার মতো সাক্ষ্য ও আলামত সংগ্রহ করা হবে। পিবিআই টিমের সাথে ছিলেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পরিদর্শক শেখ মোঃ এহতেশামুল ইসলাম। তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। মামলা তদন্তকাজে তাকে সহযোগিতা করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম ও পুলিশ পরিদর্শক আবু জাফর মোঃ ওমর ফারুক।



 

Show all comments
  • রাজ্জাক ৪ জুলাই, ২০১৭, ১১:৫৮ এএম says : 0
    মির্জা ফখরুলের উপর হামলা। তাই মামলা তদন্তে গতি নেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ