Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো.ওসমান গনি : সময়ের সাথে তালমিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। সাথে সাথে পরিবর্তন এসেছে আমাদের দেশের কৃষকদের কৃষিপ্রযুক্তিতেও। যার কারণে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে  আমাদের কৃষিব্যবস্থাও। একজন কৃষককে এখন আর তার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। ফসলের সমস্যা ও তার সমাধান এখন হাতের মুঠোয়। কৃষি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন অ্যাপস ছাড়াও রয়েছে কৃষি কল সেন্টারসহ নানা তথ্য প্রযুক্তি সেবা। যার মাধ্যমে কৃষক ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় কৃষি সেবা পাচ্ছে। আমাদের দেশে নিবন্ধিত কৃষকের সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। তার মধ্যে কতজন কৃষক প্রযুক্তির সহায়তা পাচ্ছে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। এ ছাড়া পুরোপুরি সুফল পেতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকের দক্ষতা বাড়াতে হবে। যাচাই-বাছাই করে কৃষককে মানসম্পন্ন তথ্য দিতে হবে। যেন সেই তথ্যের উপর কৃষক আস্থা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি উৎপাদনে আজ অনেক চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব, ফসলের নায্যমূল্য প্রাপ্তি, পানির স্বল্পতা, জমির উর্বরতা হ্রাস, ভূমি ক্ষয়সহ নানা সমস্যা। প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সহজেই এ সবের অনেকাংশের সমাধান দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ক্যাটালিস্টের এক জরিপ মতে দেখা গেছে, আমাদের দেশে ৮৪ শতাংশ গ্রামীণ কৃষক মোবাইল ব্যবহার করছে। একাধিক মোবাইল ব্যবহার করছে ৬৬ শতাংশ কৃষকের পরিবার। একের অধিক মোবাইলের সিম ব্যবহার করছে ৭৩ শতাংশ কৃষকের পরিবার। আর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার পরিবার উপকৃত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতি পরিবারে আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। তবে কতজন কৃষক অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে তা জানা যায়নি। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি বছর ‘কৃষকের জানালা’, ‘কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা’ ও ‘বালাইনাশক নির্দেশিকা’ নামের যে তিনটি অ্যাপস্-এর উদ্বোধন করেছে তা ব্যবহার করতে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন লাগবে। ফলে খুবই অল্প সংখ্যাক কৃষক এসব অ্যাপস্ ব্যবহার করতে পারছে। এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৮৬১ জন কৃষক তাদের মোবাইলে অ্যাপসগুলো আপলোড করেছেন। তারা এর সুফল পাচ্ছেন। যতক্ষণ না সব কৃষকের কাছে অ্যাপসগুলোর সুবিধা পৌঁছানো যাবে ততক্ষণ কাক্সিক্ষত সাফল্য কৃষকরা পাবে না। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ দেয়া হবে কর্মীদেরও।  চীনের সাথে একটি যৌথ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
অ্যাপসগুলো ব্যবহারে কৃষকের সামনে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। ‘কৃষকের জানালা’ কৃষকদের ফসলের নানা সমস্যার দ্রুত ও কার্যকরভাবে সমাধান দেয়ার একটি ডিজিটাল প্রয়াস। ফসলভিত্তিক নানা সমস্যার চিত্র যৌক্তিকভাবে সাজিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে ছবি দেখে কৃষক নিজেই তার সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারে এবং চিহ্নিত ছবিতে ক্লিক করলেই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকসহ কৃষি সম্পর্কিত সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ‘বালাইনাশক নির্দেশিকা’ নামে ওয়েবপেজ ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। আর ‘কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা’ অ্যাপসে ১২০টি ফসলের উৎপাদনের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। এই আ্যাপস ব্যবহার করে জমিতে বা ঘরে বসেই কৃষক ফসল উৎপাদনের সব ধরনের তথ্য পাবে।
কৃষিতে দিনদিন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ফুল, ফল, সবজি চাষ থেকে শুরু করে মধু চাষ পর্যন্ত প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছে। কৃষকরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপদেশ নিচ্ছে। কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ভিডিও এবং অডিও সতর্ক বার্তা ও উপদেশ দিচ্ছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে।
আজ থেকে গত কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে সবসময় খাদ্যঘাটতি ছিল। বর্তমানে কৃষকরা অতিসহজে নামমাত্র মূল্যে কৃষি সামগ্রী হাতের নাগালে পাওয়ায় কৃষিকাজে উৎসাহী হয়ে তাদের ফসল ফলাচ্ছে। ফলনও হচ্ছে আগেকার চেয়ে কয়েকগুন বেশি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন