Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্মস্থলে ফেরা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে : রাজধানী এখনও ফাঁকা

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক
ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। বুধবার থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকায় ঢাকায় ফিরেই কর্মব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়েছ অনেকেই। তবে গত সপ্তাহে ঢাকায় ফেরা মানুষের সংখ্যা ছিল খুবই কম। গতকাল শুক্রবার থেকে ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যা বাড়লেও ঈদ কাটিয়ে এখনো জমেনি ঢাকা। বেশিরভাগ সড়ক এখনও ফাঁকা। সচল হয়নি ট্রাফিক সিগন্যাল। আগের তুলনায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। গণপরিবহন চলাচল এখনও কম। মার্কেট-বিপণিবিতান খুলতে শুরু করেছে। বসছে কাঁচাবাজার। অন্যদিনের তুলনায় রাজধানীর লঞ্চ, বাস টার্মিনাল ও নদীবন্দরে লোক সমাগম বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ফেরি কম হওয়ায় শিমুলিয়া, কাওড়াকান্দি, পাটুরিয়াসহ অন্যান্য ঘাটগুলোতেও পরিবহনের কিছুটা বাড়তি চাপ আছে। ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের কাছ থেকে টিকেট যুদ্ধ ছাড়া তেমন কোন ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু করে মানুষ। সাপ্তাহিক ছুটিসহ পাঁচ দিনের সরকারি ছুটিতে ঢাকা ছাড়তে শুরু হয় মানুষের ঢল। গার্মেন্টে ছুটির পর রাজধানী একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়।
বুধবার থেকে সরকারি অফিস-আদালত চালু হয়েছে। তবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গার্মেন্টসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ থাকায় নগরে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষই এখনো ফেরেনি। বুধ-বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস খোলার পাশাপাশি বেশিরভাগ বেসরকারি অফিসও চালু হয়ে গেছে। আগামীকাল রোববার থেকে খোলা হবে গার্মেন্ট। এর মধ্যেই খোলা হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকা পুরনো রুপে ফিরে আসবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে ৩০ লাখ লোক রাজধানী ছেড়েছে। এ কারণে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায় রাজধানী। রাজধানীর বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড থেকে বেশিরভাগ বাসই ছেড়ে যাচ্ছে খালি। তবে ফিরছে টইটম্বুর হয়ে। রেল স্টেশনের দৃশ্যও একই। সকাল থেকেই দূর দূরান্তের মানুষ বাস ট্রেন লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। সকালে রাজধানীর সদরঘাট, ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন, গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদে বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের রাজধানীতে ফেরার দৃশ্য দেখা গেছে। ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকা আবার কর্মব্যস্ত হতে চলেছে।
তবে ঈদের আগের ভিড় আর টিকিট পাওয়ার ঝামেলা এড়াতে আগে যারা পরিবার নিয়ে বাইরে যাননি, তারা ঈদ পরবর্তী ছুটি কাটাতে ঢাকা ছাড়ছেন। এই আসা-যাওয়ার মাঝে রাজধানীতে ফেরা মানুষের ভিড়ই এখন স্টেশন ও টার্মিনালগুলোতে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
যারা ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তারা রাজধানী ঢাকায় আসতে শুরু করলেও রাজধানীর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে। ঢাকার প্রধান সড়কগুলো এখনও ফাঁকা। মানুষ ও যানবাহনের চলাচল সীমিত। হোটেল, রেস্টুরেন্ট খোলেনি। অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। মূলত জনবহুল রাজধানী এখনও অনেকটাই ফাঁকা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক পথে আসতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। এখনও সড়ক মহাসড়কে যানজট শুরু হয়নি। বিশেষ করে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল কম থাকায় যানজট খুব একটা হচ্ছে না। তাছাড়া সিটি সার্ভিস ও লক্কড়ঝক্কড় পরিবহনগুলোও মহাসড়কে এখন নেই। তবে টিকেট পেতে ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করতে হচ্ছে বাসের টিকেট। কোন কোন রুটে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
টাঙ্গাইল থেকে নিরালা পরিবহনে আসা যাত্রী মোহাম্মদ মনিরুল মহাখালী বাস টার্মিনালে জানান, ২৩ জুন প্রায় ১০ ঘণ্টার যানজট ঠেলে বাড়ি গেলেও ফিরতে কোন সমস্যা হয়নি। কোথাও যানজট হয়নি। গাড়ির চাপও কম। চন্দ্রা এলাকাতেও কোন সমস্যা হয়নি। অপর যাত্রী নিহারুল জানালেন, টিকেট পেতে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। এছাড়া আর কোন ভোগান্তি হয়নি। ময়মনসিংহ থেকে আসা এনা পরিবহনের যাত্রী সাদের জানান, রাস্তার অবস্থা ভাল। দুই ঘণ্টায় ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা এলাম। কোথাও যানজট বা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। তবে সার্ভিস ভাল হওয়ায় ময়মনসিংহ কাউন্টারে যাত্রীর ভিড় অনেক বেশি।
গাবতলী বাস টার্মিনালে উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা আসছেন দলে দলে। আমিনবাজার ব্রিজ থেকে আসাদগেট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের নামতে দেখা গেছে। শ্যামলী, এসআর ট্রাভেলস, ডিপজল পরিবহন, হানিফসহ বিভিন্ন কাউন্টারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরে ফেরা মানুষের চাপ কমছে। এখন ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে খুব একটা যাত্রী মিলছে না। আসার পথে যাত্রী চাপ বাড়ছে। দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসা মানুষের ভিড়ও আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, দিন যাচ্ছে; চাপ বাড়ছে ঢাকায় ফেরা মানুষের। সকাল থেকে প্রতিদিন বিকেলে বেশি যাত্রী হওয়ার কথা জানান তিনি। আগামী সপ্তাহ থেকে যাত্রী বাড়বে; এ জন্য বাসগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ঢাকায় ফেরা মানুষের রাস্তায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। ঈদের পর পর বলেই রাস্তায় এখনও হাট-বাজার তেমন একটা বসেনি।
ঢাকা নদীবন্দরেও দিন দিন ভিড় বাড়ছে মানুষের। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে লঞ্চগুলো সময়মতো আসছে। প্রায় ৬০টি রুটে নিয়মিত লঞ্চ চলে ঢাকা থেকে। তবে নদীবন্দরে ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌযানগুলোকে পণ্য খালাস করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে যেন কারও কোন মাথাব্যথা নেই। গতকাল শুক্রবার লঞ্চ টার্মিনালে বড়-বড় নৌযানের ফাঁকে ফাঁকে ছোট নৌকাগুলোকে ঝুঁকি নিয়ে চলতে দেখা যায়।
কমলাপুর রেলস্টেশনে বেশিরভাগ ট্রেন আসছে সময়মতো। মোহনগঞ্জ থেকে আসা হাওড় এক্সপ্রেসের যাত্রী কাউসার জানান, টিকেট পেতে মানুষের হিমশিম খেতে হচ্ছে। নেত্রকোনার জন্য মূলত ট্রেনটি দেয়া হলেও ময়মনসিংহের টিকেট বেশি। জেলা সদরের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৬০টি টিকেট। রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে নামার পর বাসায় ফিরতে গণপরিহন সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সবাইকে। যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে তাদের ক্ষেত্রে কোন কথা নেই। সিএনজি কিংবা ট্যাক্সি পেতে কষ্ট হয়। তার ওপর আবার চড়া দাম তো আছেই। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ