Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারী উদ্যোগের প্রভাব পড়েনি চালের বাজার এখনও অস্থির

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা
রমজানের শুরুতেও চালের দাম ছিল কেজি প্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মাঝামাঝিতে একটু ভালো মানের চালের দাম গিয়ে ঠেকে ৬২ টাকায়। হঠাৎ করে বেসামাল চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানি শুল্কহার কমানো, ব্যবসায়ীদের জন্য বাকিতে এলসি খোলার সুযোগ এবং ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির ঘোষণা দেয় সরকার। এসব উদ্যোগের ফলে ঈদের পর দাম কেজি প্রতি কমপক্ষে ৬ টাকা কমার আশা করলেও এখনও অস্থির চালের বাজার। সরকারের এসব উদ্যোগের কোনোটার প্রভাব এখনও বাজারে পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের বাজারে ঈদের আগে যে অস্থিরতা ছিল এখনও তা রয়ে গেছে। তবে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে অর্থাৎ ভিয়েতনাম থেকে চাল দেশে পৌঁছানোর পর চালের দাম কেমন হবে তা জানা যাবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মহাখালী, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বর্ণা, আটাশ পাইজাম, চায়না ইরির মতো ভালো মানের মোটা চাল ঈদের আগের মতো চড়া দামে অর্থাৎ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর নিম্নমানের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা দরে। এ বিষয়ে শেওড়াপাড়া বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা আশরাফুল বলেন, ঈদের পরের চালানে চালের দাম কমার কথা। কিন্তু আমরা আগের চাল এখনও বিক্রি করছি। তাই দাম আগের মতোই আছে। চালের আড়তদারদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, খোঁজ নিয়েছি ঈদের পরও চালের দাম কমেনি। এমন কি মিল মালিকরাও চালের দাম এখনও কমায়নি। তবে আশা করছি শিগগির চালের এ দাম কমবে। এদিকে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশর (টিসিবি) হালনাগাদ প্রতবেদন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবারের খুচরা বাজারদরের মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, ওই দিন রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ঈদের আগের মতোই ৪৬ থেকে ৪৭ টাকায়, পাইজাম এবং লতা উন্নত মানের চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, পাইজাম ও লতা নিম্ন মানের ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। নাজিরশাইল ও মিনিকেট উন্নত মানের ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাধারণমানের চালের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। এছাড়া সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। টিসিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের আগের সপ্তাহেও এসব চালের দাম ছিল এমন। আর এক মাস আগে ছিল অধিকাংশ ৫ থেকে ৭ শতাংশ কম। এছাড়া একবছর আগে ছিল কিছু কিছুক্ষেত্রে অর্ধেক। অর্থাৎ কয়েক মাস থেকেই চালের বাজারে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে। হাওরাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় ফসল নষ্ট, এটা পুঁজি করে মিল মালিকদের চালের দাম বাড়িয়ে দেয়া ও সময় মতো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মজুদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব না দেয়াকে এ অস্থিরতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মজুদ ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি ছিল তা মেটাতে দেরিতে হলেও সরব হয়ে উঠেছে সরকার। ঈদের আগেই চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শেষে জানানো হয়, ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশে আসবে ১৫ দিনের মধ্যে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের জন্য বাকিতে এলসি খোলারও সুযোগ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের এমন তৎপরতার পর বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখনও এসব উদ্যোগের প্রভাব চালের দামে পড়তে শুরু করেনি। তবে ক্রেতাদের অনেকেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন দাম কমে আসবে।
পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, সরকারের এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে চালের দাম অবশ্যই কমে আসবে এবং মিল মালিকরাও নড়েচড়ে বসবেন। এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির স্বত্ত¡াধিকারী মোহাম্মদ সায়েম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোর প্রভাব বাজারে পড়তে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে এই মুহূর্তে আগের দামেই চাল কেনা বেচা হচ্ছে। মিল মালিক আড়তদার কেউ দাম কমায়নি। বিশেষ করে ভিয়েতনাম থেকে চাল আসার পরই বোঝা যাবে চালের দাম কেমন হবে। তবে চালের দাম কিছুটাতো কমবেই। ####



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ