পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু , বগুড়া ব্যুরো
বগুড়ায় শাজাহানপুরসহ কয়েকটি স্থানে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির পরীক্ষামুলক চাষের পর স্থানীয় বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। তবে অসময়ের বলেই এই ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা দরে। জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ফুলকপির চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শাজাহানপুর উপজেলার শাহ্নগর সোনারপাড়া গ্রামের চাষী পরিবারের ছেলে আপেল মাহমুদ। আপেল মাহমুদের দেখানো পথে স্থানীয় অন্যরাও এখন গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে, যোগাযোগ করছে উপজেলা কৃষি অফিসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহ্ নগর সোনারপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদের পুত্র আপেল মাহমুদের পরিবার পুরোপুরি কৃষিজীবী। ফলে কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজি চারা উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন আপেল মাহমুদ। এজন্য প্রতিষ্ঠা করেণ নাহিদ নার্সারি নামের একটি খামার। শাজাহানপুর শাহ্নগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতির সাথে তিনি কাজও শুরু করেন। গতবছর একটি কৃষিপ্লট পরিদর্শন করার জন্য শাহ্নগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতির ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঠাকুরগাঁও জেলা সফর করেন। সেখানে তারা মালিকস্ ফার্মস্ এর প্রদর্শনী প্লটে পরিদর্শনকালে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি হোয়াইট লাভ, হোয়াইট ফিজিওম ও হোয়াইট এ্যাকশন’ প্রজাতির চাষাবাদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে মাটি এবং আবহাওয়ার গুণাগুন বিবেচনা করে শাজাহানপুরের জন্য ‘হোয়াইট এ্যাকশন’ প্রজাতির ফুলকপি নির্বাচন করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে আপেল মাহমুদ ‘হোয়াইট এ্যাকশন’ প্রজাতির ফুলকপির পরীক্ষামূলক চাষ করে সফলতা পান। এই ফুলকপিই তিনি চাষাবাদ করে খোলা বাজারে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। এখন ফলন শেষের দিকে বলে প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৫০ টাকা দরে। প্রতিটি ফুলকপি শুরুতে ৪০০ গ্রাম ওজন হলেও এখন সেই ফুলকপির ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামে দাঁড়িয়েছে। অসময়ের ফুলকপি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছে আপেল মাহমুদের খামারে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রীষ্মাকালীন ফুলকপি চাষ সম্পর্কে আমরা প্রাসঙ্কি তথ্য জানাতে পারি। সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। পরে সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও হয়। সমিতির সদস্য আপেল মাহমুদ গত মার্চ মাসে নিজ মালিকানাধীন ‘নাহিদ নার্সারি’তে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ২৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ফুলকপির চাষ করেন আপেল মাহমুদ। বৈরী আবহাওয়া (সূর্যের প্রখর তাপ, ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি) সত্তে¡ও ৪৫ দিন থেকে ৫০ দিনের মাথায় হলুদ রঙের ফুলকপিতে ভরে ওঠে আপেল মাহমুদের সবজি ক্ষেত। ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিটি ফুলকপির ওজন হয়েছে ৪০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত। রঙ এবং আকারে এগুলো শীতকালীন ফুলকপির মতোই। বিষয়টি জানাজানি হলে ফুলকপির জমিটি একনজর দেখতে শাহ্নগর গ্রামে ভির জমাতে থাকেন আশপাশ এলাকার উৎসুক কৃষকেরা। ৫০ দিনের পর থেকে ফুলকপিগুলো সে বাজারে বিক্রি করতে থাকে। স্থানীয় অনেক কাঁচা সবজির ব্যবসায়ী এই ফুলকপি কিনে থাকে।
গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষী আপেল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার একটি সবজি চারা উৎপাদনের নার্সারি রয়েছে। গতানুগতিক ফসল চাষের পরিবর্তে ভিন্নধরণের কিছু একটা করে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় তিনি সব সময় তৎপর ছিলেন। অপরদিকে কৃষিজ উৎপাদনে বৈচিত্র্যতা এনে কিভাবে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির চাষ করেন। অসময়ের সবজি হওয়ায় বাজারে এরদামও অনেক বেশি। জেলা শহর বিভিন্ন এলাকায় এই ফুলকপি পাইকাররা নিয়ে গেছে। পাইকারি দামটা একটু কম হলেও কোলা বাজারে প্রথমে ৮০ টাকা কেজি, পরে ৭০ টাকা এবং বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ৩ দফা ফলন তোলা হয়েছে। এখন ফলন একেবারে শেষের দিকে। আপেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ২৫ শতক জমি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকার মত। সে চাষ খরচ বাদে সেই জমি থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর এলাকার নজরুল ইসলাম জানান, আপেল মাহমুদ গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছে। তার সাথে পরামর্শ হয়েছে আগামী বছর বীজ এবং চাষ পদ্ধতি বিষয়ে সে সহযোগিতা করবে। তার ফুলকপির ক্ষেত পরিদর্শন করছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কৃষি কর্মকর্তারাও দেখেছেন। অসময়ে ফুলকপি সবজি হিসেবে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। প্রচন্ড রোদেও সবজির কোন ক্ষতি হয়নি।
বগুড়ার শাজহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মোঃ শামসুদ্দিন ফিরোজ জানান, গ্রীষ্মকালীন এই ফুলকপি রোগ-বালাই প্রতিরোধ, খরা সহিষ্ণু এবং বৈরী আবহাওয়ায় টিকে থাকতে সক্ষম। উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে কম। অপরদিকে অসময়ের এই সবজির বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবে। শাজাহানপুরে সে ফুলকপি চাষ হয়েছে তার ওজন ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের। দেখতে শীতকালীন ফুলকপির মতই। কৃষি বিভাগ থেকে সবজি চাষিদের বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের সংবাদ ছড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে কৃষি অফিসে জেলার বাহিরের কৃষকও যোগাযোগ করছে। তারা জানতে চাইছে বীজ সংগ্রহ করে তারা চাষাবাদে আগ্রহী। তাদের সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি ফুলকপির চাষ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।