Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এশিয়াকে গড়ে তোলা অর্থনৈতিক মডেল ভেঙে পড়ছে

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভেঙে পড়ছে এশিয়াকে গড়ে তোলা অর্থনৈতিক মডেল। চীনের প্রত্যন্ত জিনজিয়াং অঞ্চল কোরলা। এর বাইরে বিস্তৃত মরুভূমিতে কারখানা গড়ে তুলছে জিনসেং গ্রæপ। জিনসেংয়ের কারখানাটি প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ বর্গফুটবিশিষ্ট, যার ভেতরে এম্পায়ার স্টেট ভবনের পাঁচগুণের বেশি জায়গা রয়েছে। কিন্তু এত বিশাল কারখানাটির প্রতি শিফটে মাত্র কয়েকশ’ উৎপাদন কর্মী প্রয়োজন। কারখানার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান জুয়েপিং জানান, এক সময় বস্ত্র শ্রমনিবিড় শিল্প ছিল। আমরা এ মুহূর্তে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি; যেখানে নিকটবর্তী কোনো সস্তা শ্রমের দেশে উৎপাদন সরিয়ে নেয়ার পরিবর্তে এ শিল্প এখন মানুষবিহীন কারখানা গড়ে তুলতে পারে। প্যানের কোম্পানি এমন একটি প্রবণতার পথদ্রষ্টা, যা এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোর জন্য বিধ্বংসী ফলাফল বয়ে আনতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও অন্যান্য দেশ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে অর্থনীতির প্রথম ধাপ হিসেবে আঁকড়ে ধরেছিল পোশাক, জুতা ও এ ধরনের স্বল্প খরচে উৎপাদিত শিল্প। কয়েক দশক ধরে একটি পরিচিত ধাঁচে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করে আসা হয়েছে। প্রথম দিককার উদ্যোগী দেশগুলোর অর্থনীতিগুলো যখন ইলেকট্রনিকসের মতো আরো পরিশীলিত শিল্পে স্থানান্তরিত হচ্ছে, তখন দরিদ্র দেশগুলো বস্ত্র শিল্পে তাদের জায়গা গ্রহণ করেছে। যেখানে এই দেশগুলো সে ধরনের সস্তা শ্রমই প্রদান করেছে, যা সাধারণত নিম্ন প্রযুক্তির কারখানার জন্য প্রয়োজন পড়ে। অনুন্নত দেশের সস্তা শ্রমের কারণে বিশ্বজুড়ে ওয়ালমার্ট ও টেসকোতে কম দামে পণ্য সরবরাহ করার সুযোগ পেয়েছে ম্যানুফ্যাকচারাররা। আর দরিদ্র দেশগুলো প্রথমবারের মতো ব্যাপকহারে শিল্পভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ পেয়েছে। নাগরিকদের সামনে খামারের কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প হাজির করতে পেরেছে। কিন্তু উদীয়মান দেশগুলোর জন্য এ পথ বন্ধ হতে চলেছে। অতীতে চীন যে সুযোগ পেয়েছিল এ দেশগুলো আর সে সুযোগ পাবে না। বর্তমানে কম্বোডিয়া, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলো অর্থনীতির সেই প্রাথমিক ধাপে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যন্ত্রনির্ভরতা তাদের সে উত্থানের প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে। এসব দেশে শ্রমিকনির্ভর কারখানা প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে চীনা কোম্পানিগুলো স্থানীয়ভাবে রোবটনির্ভর কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। শ্রমনীতি বিষয়ে চীন সরকারের উপদেষ্টা জনমিতিবিদ চাই ফ্যাং বলেন, উদীয়মান দেশগুলো আর চীনের মতো অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণের সুযোগ পাবে না। এ পরিবর্তন দ্রæতই ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, আর মাত্র দুবছর পরে কম দক্ষ শ্রমিকদের স্থান দখল করবে রোবট। আইএলওর গবেষক চ্যাং জায়েহির মতে, সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৮০ শতাংশের বেশি পোশাকশিল্প শ্রমিক অটোমেশনের কাছে কর্মসংস্থান হারানোর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ে গাড়ি ও জেট ইঞ্জিনের মতো বৃহৎ পণ্য উৎপাদনের অনেকটাই রোবটের দখলে চলে গেছে। তবে গামছা বয়ান বা পোশাক সেলাইয়ের মতো সূ² কাজে যন্ত্রের ব্যবহার দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। পোশাক সেলাই সূ² শ্রমনির্ভর কাজ। একটি সাদাসিধা বুকপকেটওয়ালা শার্ট বানাতে ৭৮টি আলাদা ধাপ প্রয়োজন। মানুষের হাতের নিপুণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে এমন যন্ত্র এখনো বিরল আর ব্যয়বহুল। এছাড়া প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র গÐির শিল্পের জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরি করতে তেমন উৎসাহীও নয়; বিশেষ করে যেসব শিল্পে সস্তা শ্রমের প্রচুর সুযোগ ও সংবেদনশীল যন্ত্রপাতির পেছনে ব্যয়ের জন্য অল্প নগদ অর্থ রয়েছে। বস্ত্র শিল্পের জন্য এ কারণটি কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনতে পারে। ভারতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সাহিল ধামিজা বলেন, এখন পর্যন্ত হস্তনির্মিত পণ্য উৎপাদন করতে পারার মতো কোনো যন্ত্র নেই। তবে এর উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে কেবল এশিয়ায়ই শিল্পের গতিপথ প্রভাবিত হবে না। যদি শ্রম ব্যয় বড় কোনো কারণ না হয়ে থাকে, তাহলে উৎপাদকরা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মতো জায়গায়, যেখানে তাদের সবচেয়ে বেশি গ্রাহক রয়েছে সেসব স্থানে কারখানা স্থানান্তর করবে। দীর্ঘ দশক ধরে উচ্চ মজুরির কারণে এসব দেশে কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিছিয়ে এসেছে উৎপাদকরা। সমীকরণ থেকে অধিকাংশ শ্রমিক সরিয়ে নেয়া হলে অনুন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির ভবিষ্যত্ চিত্রই বদলে যাবে। বøুমবার্গ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ