Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় রুখতেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি -অর্থমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় রুখতেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী দুই বছরের জন্য নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের কার্যকারিতা স্থগিত করেছে করনা হয়েছে। অভিন্ন হারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল,এতে সংশোধনী এনে অর্থবিল-২০১৭ সংশোধিত আকারে পাশ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত দায়যুক্ত ব্যয় ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন  তিনি। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন ও স্বতন্ত্র রুস্তম আলী ফরাজী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দসহ ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। বিভিন্ন গনমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতি পূরণ, তহবিল সহায়তা, সুদ ভর্তুকি ও সরকারি  শেয়ারের অংশ ঠিক রাখতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ‘ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ খাতের বরাদ্দ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ওই অর্থ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ। দুর্নীতি ও ঋণ জালিয়াতির কারণে দুর্দশায় থাকা ব্যাংকগুলোকে এভাবে মূলধন জোগানো নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা রয়েছে।
বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাব তোলার সময় জাতীয় পার্টির নুুেল ইসলাম মিলন এমপি বলেন, আমাদের ব্যাংকের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। বেশিরভাগ ব্যাংক পরিচালক নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগ করে নিচ্ছে। মালিক ও পরিচালকরা টাকা গিলে খাচ্ছে। স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। অর্থই অনর্থের মূল। এখন পারিবারিকভাবে ডিরেক্টর হতে পারে। সরকারি ব্যাংক জনগণের টাকা দিয়ে পুষবেন। আবার  বেসরকারি ব্যাংকও একই দিকে যাচ্ছে। ব্যাংক কমিশন করেন। জোরালো ও কঠিনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফিরোজ রশীদ বলেন, এই যে বেসরকারি ব্যাংক এর সব ডিরেক্টর পারিবারিক, স্বতন্ত্র ডিরেক্টর নেই, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংক এখন লুটপাটের জায়গা হয়েছে। সরকারি ব্যাংকতো হয়েছেই। ব্যাংক আর ব্যাংক থাকবে না। মুদি দোকান হয়ে যাবে। ফখরুল ইমাম বলেন,  ডোরাকাটা দাগ থেকে বাঘ চেনা যায়। বাতাসের বেগ দেখে মেঘ চেনা যায়। এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামপুরে ইনভেস্ট করি। এক লাখ টাকায় ৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংকে রাখলে টাকা কেটে নেয়। এটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এটা বের করতে পারলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। এসব কথা জবাবে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, এখানে যেসব অভিযোগ এসেছে...প্রথমে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলো রেসপনসিবল নয়। এগুলো পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বতন্ত্র পরিচালক নেই। সুশাসন দুর্লভ। এই চারটি কথা বলা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালক সদস্য স্পন্সর আছেই। পারিবারিক সদস্যদের বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনটি সংসদের বিবেচনায় আছে। সংসদীয় কমিটি বিবেচনা করছে। তারা প্রস্তাব ও সুপারিশ দেবেন। তখন সংসদ পাস করবেন।  সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে সরকারি অবস্থান জানাতে পারব। এখনও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলোকে সরকার খামাখা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে এখানে। বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাত খুবই নাজুক। পরিস্থিতি নাজুক বলেই বিপর্যয় এড়াতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফখরুল ইমাম সাহেব বলেছেন, আসল সমস্যটা হলো সুশাসন। সরকার ব্যবসা করে কোনোদিনই ভালো করেনি। এজন্য সরকারকে ব্যবসা থেকে দূরে রাখি। ৮০ ভাগ ব্যবসা ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। ২০ ভাগ সরকার করে। যেহেতু ব্যবসায়ীরা ভালো করে, সেহেতু তাদের হাতে অর্থনীতির ৮০ ভাগ ছেড়ে দিতে চাই। আর সুশাসন শব্দটার সীমানা ব্যাপক। এখানে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আইন-কানুন সব আসে। আমাদের সরকার ব্যাংকিং খাত আর মানি মার্কেটের সুশাসনের জন্য মোটামুটিভাবে ন্যায়নিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছে। তার ফল মানি মার্কেটে দেখতে পাচ্ছেন। ব্যাংকিং খাতেও দেখতে পাবেন। দেশে ৫৮টি ব্যাংক প্রয়োজন আছে কি না- সেই প্রশ্ন যারা তোলেন, তাদের উদ্দেশে মুহিত বলেন, বিভিন্ন দেশে এভাবেই ব্যাংকের উন্নতি হয়েছে। ভবিষ্যতে কনসলিডেশন হবে। সেই ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আছি।”
সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন,  এ বারের বাজেটে আইনটি কার্যকর করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সংসদ সদস্যগণ তাদের প্রাজ্ঞ মতামত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।এই প্রেক্ষিতে আমি মূসক আইনের কার্যকারিতা স্থগিতের প্রস্তাব করছি। আগের ধারাবাহিকতায় কিছু সংশোধন করে ২০১২ সালের আইনই গত চার বছর ধরে যেভাবে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কর আরোপ প্রক্রিয়ায় মূল্য সংযোজন কর একটি উত্তম পন্থা, এ কথা আমি আগেই বলেছি। উল্লেখ্য,সব পণ্য বিক্রির ওপর অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট গত ১ জুন জাতীয় সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।



 

Show all comments
  • Dada Rahman ৩০ জুন, ২০১৭, ২:১৫ পিএম says : 0
    কলস যদি ফুটু হয় উপর হতে যতই ভরেন কলস কি ভরবে???
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Rafiqul Islam ৩০ জুন, ২০১৭, ২:১৬ পিএম says : 0
    why government bank is going to looser?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ