Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনন্তকাল সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্দিষ্ট থাকতে পারে না -অর্থমন্ত্রী

বাজেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : অনন্তকালের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্দিষ্ট থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে সমাপনী বক্তৃতায় এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদের হারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে সুদের হার বাড়ে আর মূল্যস্ফীতি কমলে সুদের হার কমে। এ কারণে সঞ্চয়পত্রের সুদের বিষয়ে আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সঞ্চয়পত্র হতে অধিক ঋণ গ্রহণ করার ফলে সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনার ওপর একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। এই বাস্তবতার বিষয়টি আমি বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপন করেছি। তিনি বলেন, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণের কারণে কোনও পেনশনভোগী, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত কেউ যাতে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।  আমরা চাচ্ছি সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, তা যেন সঠিক ব্যক্তিরা পায়। এজন্য আমরা এর একটি পুর্ণাঙ্গ তথ্য-ভান্ডার তৈরি করবো, যেখানে ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের তথ্যকে সম্পৃক্ত করা হবে। পাশাপাশি আর্থিক বাজারকে আধুনিকীকরণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাজেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো গণমানুষের কাছে উপস্থাপন করতে পেরেছি এবং বাজেট প্রক্রিয়ায় জনগণকে অধিকতর সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। অর্থমন্ত্রী বলেন,গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের পর সংসদ সদস্যগণের গঠনমূলক আলোচনা ও মতামত এই বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্তকরণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এজন্য তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বস্তরের জনগণ, রাজনীতিবীদ, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা এবার বাজেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটের পক্ষে-বিপক্ষে যেভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়েছে তা ইতিবাচক মনে হয়েছে। আমাদের সরকার জনগণের সরকার। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর জনগণের মতামত সঠিক পথে চলার নির্দেশনা দেয়। মন্ত্রী বলেন, বাজেট উপস্থাপনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সব দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় দু’ চারটি শুল্ক বা কর হারে বৃদ্ধির প্রস্তাবাবলী। ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবের উপর শুল্ক বৃদ্ধি ছিল একটি বিতর্কের বিষয়। তবে মনে হয়  যেন তখন অনেক সংসদ সদস্য এবং গণমাধ্যম ভুলেই গিয়েছিলেন যে, এই শুল্কটি ২০০২ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বললেন যে, এই বাজেটটি একটি শ্রেষ্ঠ তামাশা। আরো কেউ কেউ বললেন যে, মূল্য সংযোজন কর এদেশে প্রবর্তিত হয় ১৯৯১ সালে। সেটা পুরোপুরি সংশোধন করে একটি খসড়া ২০০৮ সালেই প্রস্তুত হয়। আমরা এই আইন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, ডায়ালগ, বিতর্ক ইত্যাদি অনুষ্ঠান করে ২০১২ সালে আইনটি পাস করি। তবে বলে দিই যে, এইটি কার্যকরী হবে ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালে এর কার্যকারিতা আরো এক বছর পিছিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু তাতেও মনে হয় করদাতাদের আমরা সন্তুস্ট করতে পারি নি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৭.৪ শতাংশ। এটি অর্জনের বিষয়ে অনেকই সংশয় প্রকাশ করেছেন।  ২০১৫-১৬ সালে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.০৫ শতাংশ । এর বিপরীতে আমরা ৭.১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.২ শতাংশ। এর বিপরীতে বিবিএস এর সাময়িক হিসাবে আমাদের প্রবৃদ্ধি এসেছে ৭.২৪ শতাংশ। আমরা বিগত ২ বছর যাবৎ আমাদের লক্ষ্যমাত্রার  চেয়ে বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এপ্রিল নাগাদ আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৭ শতাংশ এবং একই অর্থবছরের মে নাগাদ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.২১ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫.৫৯ শতাংশ।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদন সূচক বৃদ্ধি পাচ্ছে\
তিনি বলেন প্রবৃদ্ধি নির্দেশক অন্যান্য চলকগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদন সূচক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষভাবে ম্যানুফেকচারিং ও মাইনিং খাতের উৎপাদন সূচক চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর নাগাদ  ৭.৪১ শতাংশ ও ২.৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার ও হার ব্যবধান  অব্যাহতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়বে। আবার চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে নীট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০.৭ শতাংশ। মূলত দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা, নীতি কৌশলগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা ও এগুলোর সুসমন্বিত প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অব্যাহত সরকারি উদ্যোগ ইত্যাদির প্রভাবে ব্যবসায়ী/বিনিয়োগকারীসহ সকল স্তরের জনগণ দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ক্রমেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন যা ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথকে প্রস্ত করেছে।
এডিপি বাস্তবায়ন ৬৪.৭২ শতাংশ\
অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৪.৭২ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬১.৮৫ শতাংশ। এটি সরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাশাপাশি, বিনিময় হার বিগত বছরের জুন মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুন মাসে ২.৭ শতাংশ অবমূল্যায়ন (উবঢ়ৎবপরধঃরড়হ)  হয়েছে যা দেশের রপ্তানি খাতকে উজ্জীবিত করবে।
কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি \
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেনা মর্মে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন। একথা সত্য, ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার পর বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে এটি আমাদের দেশে পরিলক্ষিত হয়নি। স¤প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ত্রৈমাসিক শ্রমজরিপ ২০১৫-১৬ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ২০১৩ সালের ৪.৩ শতাংশ হতে ২০১৫-১৬ সালের শেষ প্রান্তিকে ৪.০ শতাংশে  নেমে এসেছে।
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় আমি কোন প্রস্তাব রাখিনি। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত হতে আমাদের নীট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা যেখানে এপ্রিল, ২০১৭ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। অনন্তকালের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্দিষ্ট থাকতে পারে না।  মন্ত্রী  বলেন, রুপকল্প অনুযায়ি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের বাজেটের আকার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করতে হবে। কাজেই আমাদের বাজেট কিছুটা উচ্চাভিলাষী হবে সেটাই স্বাভাবিক।
রাষ্ট্রায়াত্ত¡ ব্যাংকসমূহের মূলধন নিয়ে বিতর্ক আছে \
মন্ত্রী বলেন, সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সরকার দেশের বৃহত্তম কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ ব্যাংকগুলোর কোন কোনটিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে এবং সে সব বিষয়ে মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছে এবং বিচারাধীন আছে যা এর আগে কখনো হয়নি। দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ\
অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক মাননীয় সংসদ সদস্যই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সরকারের অর্জন তুলে ধরার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ  খাতের বরাদ্দ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।  বিগত বছরগুলোর মতোই আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরেরও বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ সার্বিক মানব সম্পদ উন্নয়নকে আমরা সর্বোচ্চ গুরত্ব দিয়েছি।  ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি  খাতে বরাদ্দ ছিল ৫২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে  ৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। জিডিপি’র অনুপাতেও এ বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল জিডিপির ২.৬ শতাংশ যা আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে জিডিপির ২.৯ শতাংশে।
দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান \
মন্ত্রী জানান, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকারের কি পরিকল্পনা রয়েছে তা অনেকে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এমন একটা পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যেখানে শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে টিকে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগামিতা ধরে রাখাও প্রায় অসম্ভব। তাই আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ