Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারাদেশে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত : ৬ লক্ষাধিক ভিজিএফ কার্ডধারী

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সারা দেশে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ৬ লক্ষাধিক ভিজিএফ কার্ডধারী হত দরিদ্র মানুষ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীর ৫ লক্ষাধিক হতদরিদ্র মানুষের জন্য এবছর ঈদ আনন্দ অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠির ঈদের আনন্দ অনেকটাই মাটি হয়ে গেছে। বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মুল্য বৃদ্ধি, জীবন যাত্রার ব্যায় বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি এ বছর সরকার হতদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ’র চাল বরাদ্দ দিতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা থেকে ৫৭ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দূরত্বে অবস্থিত নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলা ও ৫টি পৌর শহরে বেসরকারী হিসেব মতে কমবেশী ৩০ভাগ হতদরিদ্র মানুষ রয়েছে। এই জনসংখ্যার মধ্যে বেশীরভাগই হচ্ছে কৃষি শ্রমিক, শিল্প শ্রমিক এবং বেকার জনশ্রেণী। প্রতি বছর ঈদ এলে সরকার এই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠিকে ভিজিএফ’র চাল দিয়ে সহায়তা করে। একেকটি হত দরিদ্র পরিবার ঈদের সময় ২০ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল পেতো। এতে ঈদের সময় তাদের পরিবারের খোরাকের জন্য চিন্তা করতে হবে। নৈমিত্তিক রোজগার থেকে টাকা বাঁচিয়ে তারা ঈদের বাজারে সামান্য কিছু টাকা ব্যয় করতে পারতো। কিছু পরিবার কিছু সেমাই ও চিনি কিনতে পারতো। কিছু পরিবার কেজিখানেক পোলার চাল কিনে তেল দিয়ে পোলাও রেধে একটি ব্রয়লার মুরগীর ঝোল রান্না করে খেতে পারতো। কিন্তু এ বছর এসব পরিবারগুলোর জন্য এ খাওয়াটাও কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। বাজারে চালের মূল্য কেজি প্রতি ১০/১২ টাকা বৃদ্ধি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল বেড়ে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে কয়েকগুন বেশী। যার ফলে দৈনন্দিন আয় থেকে এসব পরিবারগুলো পক্ষে টাকা বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিতভাবে ভিজিএফ’র চাল না পাওয়ায় তাদের নৈমিত্তিক আয় দিয়ে তাদের পরিবারের খোরাক কিনে খেতে হচ্ছে। যার ফলে এ বছর তাদের নৈমিত্তিক আয় থেকে ঈদের খরচ যোগাড় করা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। ঈদের মৌসুমে সরকার ভিজিএফ’র চাল বরাদ্দ দিলে প্রতি বছর উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ভিজিএফ’র চালের কার্ড বিতরণ করতো বিধায় দরিদ্র মানুষেরা এবার তাদের দুয়ারে দুয়ারে কার্ডের জন্য ধর্ণা দিয়েছে। ধর্ণা দিয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ী বাড়ী পর্যন্ত। কিন্তু কেউ তাদেরকে ভিজিএফ’র কার্ড দিতে পারেনি। তারা জানিয়ে দিয়েছে এবছর ভিজিএফ’র চাল পাওয়া যাবে না। সরকারের গোডাউনে চালের মজুদ না থাকায় সরকার এ বছর ভিজিএফ’র চাল বরাদ্দ দিতে পারেনি। ্দাতাদের মুখ থেকে এ খবর শুনে দরিদ্র মানুষেরা হুতাশাগ্রস্থ হয়ে বিষন্ন বদনে ফিরে গেছে। এসব বঞ্চিত হত দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা না খেয়ে থাকলে কারো কাছে হাত পাততে পারে না। এসব পরিবারগুলোর কষ্ট অনেক বেশী। তারা ইফতার খেয়েছে কষ্ট করে, সেহরী খেয়েছে কষ্ট করে, এবার ঈদেও তাদেরকে সীমাহীন কষ্টের শিকার হতে হচ্ছে। আর ঈদ এলে চোখের পানিতে ওদের বুক ভাসে।
আমাদের ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, মেয়র ও কাউন্সিলরদের দ্বন্দের কারণে এবার ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌরসভার ১৫৪০ জন দুস্থ মানুষ ভিজিএফ এর গম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঈদের দুই দিন বাকী থাকলেও পৌরসভা এখনো কোন তালিকা করতে পারেনি। ফলে প্রায় ২০ মেট্রিক টন গম গুদামে পড়ে আছে। যথা সময়ে তালিকা দিতে না পারলে হতদরিদ্রদের জন্য এই গম দেওয়া সম্ভব হবে না বলে হরিণাকুন্ডু খাদ্য বিভাগ জানিয়ে দিয়েছে। হরিণাকুন্ডু পৌরসভার সচিব সন্তোষ কুমার খবরের সত্যতা স্বীকার করে গতকাল বিকালে জানান, এখনো হতদরিদ্রদের তালিকা ও মাস্টার রোল তৈরী করা যায় নি। এ সংক্রান্ত কমিটির ৩২ জন সদস্যের মধ্যে ১৭ জন সাক্ষর করেছেন। ফলে কোরাম সল্পতার কারণে আইনী জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, মেয়রের সাথে কাউন্সিলরদের দ্বন্দ চলছে। এ কারণে এবারের ঈদে হয়তো ভিজিএফ কর্মসুচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। ফলে পৌর এলাকার ১৫৪০ জন হতদিরদ্র মানুষ ১৩ কেজি করে গম প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। জানা গেছে, হরিণাকুন্ডু পৌরসভায় নিয়োগ ও টেন্ডার নিয়ে ৯ জন কাউন্সিলরের সাথে মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টুর দ্বন্দ চলে আসছে। এই দ্বন্দের জের ধরে গত ২২ মে ঝিনাইদহ শহরের পোষ্ট অফিস মোড়ে বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর এসোসিয়েশন ঝিনাইদহ জেলা শাখা মেয়র রিন্টুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এই মানববন্ধনে হরিণাকুÐুু পৌরসভার সকল পুরুষ কাউন্সিলর যোগদান করেন। সূত্র মতে হরিণাকুন্ডু পৌরভার কাউন্সিলররা মেয়রের কোন কাজেই সহায়তা করছেন না। ।
আমাদের ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান,
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে চাল সংকটের কারণে ও সরবরাহ করতে না পারায় ভিজিএফ তালিকার ৭৩ হাজার ৫৮৮ জন দুস্থ ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রতিবছর সরকারি ভাবে ঈদ উপলক্ষে দুস্থদের মাঝে বিশেষ ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। ঈদের জন্য ১০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কিন্তু চলতি বছর উপজেলায় ৭৩ হাজার ৫৮৮ জন তালিকাভুক্ত দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রায় দুই হাজার ৭৩৭ টন চালের প্রয়োজন থাকলেও স্থানীয় খাদ্য বিভাগের কাছে মজুদ আছে মাত্র ১৯৮টন চাল। ঊপজেলা খাদ্য বিভাগ ভিজিএফএর জন্যে চাহিদা প্রদান করলেও সরবরাহ করতে না পারায় ঈদ উপলক্ষে দুস্তদের মধ্যে চাল বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনে চলছে বিভিন্ন আলোচনা।
দেশের নি¤œাঞ্চলে ফসলডুবির কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি থাকায় সরকারি খাদ্যগুদামে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করতে চুক্তি করে নি। কিছু মিল মালিক খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করলেও তা টার্গেটের চেয়ে অনেক কম। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় এক হাজার ২৮ টন সেদ্ধ ও ৩৭৯ টন আতপ চাল কেনার কথা থাকলেও চুক্তি হয়েছে মাত্র ৩০০ টন সেদ্ধ ও ১০০ টন আতপ কেনার চুক্তি করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল এখনও খাদ্য বিভাগে জমা না হওয়ায় ঈদ উপলক্ষে দুস্থদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা যাচ্ছে না।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আলাউদ্দিন বলেন, চাল মজুদ না থাকায় চাহিদা মাফিক সরবরাহ না পাওয়ায় ঈদের আগে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরবর্তীতে সরবরাহ হলে সাথে সাথে তা বিতরণ করা হবে।
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফুলবাড়িয়া উপজেলায় পর্যাপ্ত চাল খাদ্য বিভাগের কাছে মজুদ না থাকায় ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দকৃত বিশেষ ভিজিএফের চালের পরিবর্তে গম হতদরিদ্র কার্ডধারীদের মাঝে ১৩ কেজী করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের প্রায় ৮৫ হাজার দুস্থ পরিবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গতকাল শনিবার পর্যন্ত ফুলবাড়িয়া খাদ্য গুদামে গম মজুদ না থাকায় ঈদের আগে আর ভিজিএফ বিতরণ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন গুদাম কর্মকর্তা আরিফ রাব্বানী।
উপজেলার সাড়ে ৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ঈদ আনন্দে প্রতিবছরের ন্যায় ফুলবাড়িয়া পৌরসভাসহ ১৩ ইউনিয়নে প্রায় ৮৫ হাজার হতদরিদ্র ভিজিএফ কার্ডধারী ঈদ উদযাপনের জন্য ১০ কেজি করে বিনামূল্যে চাল পেয়ে থাকে। এবারের ঈদেও প্রতিবারের মতো চাল বিতরণের পরিবর্তে দুঃস্থদের মাঝে গম বিতরনের নির্দেশনা আসে উপজেলা প্রশাসনে। নির্দেশনায় তোলপাড় শুরু হয় পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন সচিবদের মাঝে। সচিবরা পূর্বের দুঃস্থ তালিকা নিয়ে জমা দেয়ার লক্ষে দৌড়ঝাপ শুরু করে। অনেকে আবার তালিকা নিয়ে জমাও দেন খাদ্য গুদামে।
ফুুলবাড়িয়া পৌরসচিব হারুন অর রশিদ জানায়, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে হতদরিদ্র ৩ হাজার ৮১জন কার্ডধারীর তালিকা খাদ্য গুদামে পৌছানোর পর গুদাম কর্মকর্তা জানায় গুদামে গম নেই। গতকাল শনিবার পর্যন্ত খাদ্য গুদামে ভিজিএফের গম না পাওয়ায় ঈদের পরেই বিতরন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুটিজানা ইউনিয়ন সচিব ইদ্রিস আলী।
উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আরিফ রাব্বানী জানায়, আমরা দুঃস্থদের বরাদ্দ গম খাদ্য গুদামে মজুদের অপেক্ষায় শনিবার পর্যন্ত বসে আছি তবে যে কোন সময় এসে পৌছলেও ঈদের আগে বিতরন সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ