পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : সেমাই ছাড়া যেন বাঙালির ঈদই হয় না। ঈদে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে রান্না করা হয় বিভিন্ন ধরনের সেমাই। বেশি চাহিদার এ সুযোগে নিয়ে ঈদের সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল সেমাই বিক্রির উৎসবে মেতে উঠে। পুরনো অবিক্রিত সেমাইও ঈদের সময় নতুন মোড়কে চালিয়ে দেয়া হয় নতুন বলে। নিন্মমানের সেমাই দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্যান্ডের প্যাকেট ভরে ভেজাল সেমাই পৌঁছে দেয়া হয় সারা দেশে। এছাড়া ঈদের সময় মসলার চাহিদা থাকে অনেক বেশি। এ সুযোগে প্রতিবছরই ঈদকে ঘিরে ভেজাল মসলার রমরমা বাণিজ্য করে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
ভেজাল মসলা ও সেমাইয়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমা শাহীন বলেন, ভেজাল মসলা ও সেমাই মানুষের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। ভেজাল মসলায় রং অথবা টেক্সটাইল রং ব্যবহার করলে তা ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। এছাড়া কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। সেমাইয়েও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্তিম রং ব্যবহার করা করে। যা স্বাস্থের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে বলেও তিনি জানান।
রমজানে ভেজাল সেমাই ও মসলা রোধে রাজধানীতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও র্যাব। তবুও অধিকাংশ ভেজাল কারখানাই এখনও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন অসংখ্য কারখানা আছে রাজধানীর আশপাশে। অভিযোগ রয়েছে, মূলত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং টাকা দিয়ে প্রশাসনের মুখ বন্ধ করে এ দুই উপায়ে চলে ভেজাল সেমাই ও মসলা উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ৩০০ কারখানায় ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। যার বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে এবং ঈদকে ঘিরে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নামে প্যাকেটে লেবেল লাগিয়ে তা বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এক সময় পুরান ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ ও কামরাঙ্গিরচর এলাকায় ভেজাল সেমাই কারখানা গড়ে উঠলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে কদমতলী, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, মিরপুরসহ রাজধানীর আনাচে-কানাচে।
সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি সেমাই তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে,নোংরা পরিবেশে, ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে অস্বাস্থ্যকর স্থানে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা ও চিকন সেমাই। যার ওপরে মাছি ও তেলাপোকা হাঁটতে দেখা গেছে। এছাড়া ঘামঝরা শরীর নিয়ে শ্রমিকরা ময়লা মেঝেতেই ময়দার মধ্যে পানি দিয়ে সেমাইয়ের খামির তৈরি করছে। আর এসব সেমাই আরও অতিরঞ্জিত করতে মেশান হচ্ছে কৃত্রিম রং। পরে খামির মেশিনে দিয়ে সেমাই কাটা শেষে ফেলে রাখা হচ্ছে খোলা উঠান বা কারখানায় বাঁশের তৈরি নোংরা মাচাতে। সেমাই শুকানোর কাজ শেষে নিয়ে আসা হচ্ছে ভাজার জন্য। কড়াইতে আগের পোড়া পাম তেলের মধ্যে ডালডা দিয়ে ভাজা হচ্ছে সেমাই। এরপর তুলে রাখা হচ্ছে নোংরা ঝুড়িতে। সব শেষে চকচকে বিএসটিআই-এর ভুয়া সিল লাগানো মোড়কে প্যাকেটজাত করে কারখানার গোডাউনে রাখা হচ্ছে। পরে ট্রাক ও ভ্যানযোগে এসব সেমাই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বাজারগুলোতে ভেজালে মসলায় পরিমাণ বেড়ে গেছে। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত এসব মসলা এখন মৃত্যুঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফালোভী মনোভাবের জন্য স্বাদবর্ধক এ মসলায় এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে অসাধু এই ব্যবসায়ীরা ভেজাল মসলা উৎপাদন ও বিক্রি করছে। মূলত মিল থেকেই মসলায় ভেজাল মেশানো হচ্ছে। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মসলায় ভেজাল আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, মসলায় পচা ভুট্টা, পচা গম, ঘাসের বীজ, পাখির খাবার, ভুট্টা গাছের গুঁড়ো, টেক্সটাইল রং (কাপড়ের বিষাক্ত রং), দুর্গন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়ো, ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়ো, মটরের ডাল, সুজি ইত্যাদি মেশানো হচ্ছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভূঁঞা বলেন, মসলার বাজারে দীর্ঘদিন মনিটরিং না থাকায় ভেজাল ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীর কাওয়ান বাজার ও শ্যাম বাজারে অভিযান চালানো জরুরি হয়ে গেছে।
ঈদ উপলক্ষে দেশের বাজারে প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যপক চাহিদা থাকে। এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠে নকল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবসায়ী বিভিন্ন চক্র। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের মোড়কে মোড়ানো কসমেটিকস পণ্য সহজেই কিনছেন ক্রেতারা। তবে নামি দামি ব্র্যান্ডের মোড়ক আসল থাকলেও ভেতরে থাকছে ভেজাল জিনিস। এসব প্রসাধনীর বেশির ভাগই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কাছ থেকে মান নির্ণয় পরীক্ষা করানো হয় না বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।