Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইহুদি চক্রান্ত রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম সাখাওয়াত হুসাইন
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর ইহুদিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের কচুকাটা করতে থাকে। তাদের অত্যাচারে জর্জরিত আরবরা জীবন বাঁচাতে দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এ সত্তে¡ও তখনও বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের দখলে ছিল। কিন্তু আরবদের দুর্বলতার মুখে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে তা মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের আবাসভ‚মি ও আল-কুদ্স (বায়তুল মুকাদ্দাস) উদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। তাদের সংগ্রামে দিশেহারা হয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনী জনগণের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর জন্য ফিলিস্তিনের একটি ক্ষুদ্র অংশে সীমিত স্বায়ত্ত¡শাসনের কথা বলে কিছু সংখ্যক নেতাকে বিভ্রান্ত করে। তথাকথিত শান্তি আলোচনার সুযোগে তারা একে একে ফিলিস্তিনের প্রকৃত সংগ্রামী নেতাদের হত্যা করে চলেছে এবং ফিলিস্তিনের নতুন নতুন এলাকা দখল করে ইহুদি বসতি স¤প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে, এমনকি ফিলিস্তিনে মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছাতে পর্যন্ত বাধা দিচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনের গাযা ভুখন্ডে বার বার বিমান হামলা চালিয়ে নারী ও শিশু-বৃদ্ধসহ এ পর্যন্ত কয়েক হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে এবং হাজার হাজার বাড়িঘর, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল ধ্বংস করেছে। ইহুদিদের ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসলীলা আজ ফিলিস্তিনী ভূখÐে সীমাবদ্ধ নেই। সমগ্র মধ্যপাচ্যে, বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক, ইয়ামেন, লিবিয়া, বাহরাইনসহ গোটা আরব বিশ্বে মুসলিম দেশ সমূহে যায়নবাদী আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়েছে।
চির প্রতারক-সন্ত্রাসী ইহুদিবাদীদের পরিকল্পনা ছিল গোটা আরব বিশ্ব দখল করার। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের দীর্ঘ সংগ্রামের পাশাপাশি অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের জনগণও আজ জেগে উঠেছে। তারা নিজ নিজ দেশে শান্তি ও মুক্তির সংগ্রামের পাশাপাশি ফিলিস্তিনীদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইহুদি আগ্রাসনের শুরুর দিন থেকেই কোন না কোন গ্রæপ প্রতিরোধ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ওআইসি, ন্যাম, জাতিসংঘ সবসময়ই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করে আসছে। বিশ্বজনমত আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং আরব বিশ্বের ক্যান্সার খ্যাত ইসরাঈলের বিপক্ষে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও আল কুদ্স মুক্তির দাবীতে সোচ্চার বিশ্বের সকল ইসলামী পক্ষ। শিয়া-সুন্নী, আরব-অনারবসহ সবাই বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও আল কুদ্স-ফিলিস্তিনের মুক্তির কথা বলে। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনের মুক্তি ও বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং এ বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) মসজিদুল আক্বসাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনের মুক্তির লক্ষ্যে মুসলিম উম্মাহকে প্রতি বছর রামাযানের শেষ শুক্রবারকে ‘আল-কুদ্স দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য আহŸান জানান এবং সেই থেকে প্রতি বছর সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এরই পাশাপাশি ইহুদিবাদী চক্রের এজেন্টরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীসমূহ সৃষ্টি করেছে। যারা পরস্পরকে কাফির ফতোয়া দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব জঙ্গী গোষ্ঠী নিজেদেরকে ইসলামী বলে দাবী করলেও ফিলিস্তিন-আল কুদ্স এর ব্যাপারে যেমন কোন কথা বলে না তেমনি ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাÐেরও প্রতিবাদ করে না। উপরন্ত মধ্যপ্রাচ্যে তাদের উগ্র হাঙ্গামার কারণে ফিলিস্তিন ও আল কুদ্স ইস্যু ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এতে আল কুদ্সের মুক্তির ব্যাপারটা মুসলমানদের দৃষ্টির অন্তরালে চলে যাচ্ছে। আবার ইসলামের দোহাই দিয়ে মাযহাবী বিতর্ক চাঙ্গা করে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্ব›দ্ব ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশুদেরকেও নির্বিচারে হত্যা করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন নতুন দল ও উপদল সৃষ্টি করে সমরাস্ত্র, অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে যুদ্ধের বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে মুসলমানদের শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টায় নিয়োজিত হয়েছে। এমতাবস্থায় মুসলিম উম্মাহর উচিত ইহুদিবাদীদের গভীর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং তাদের প্রচার-প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়ে আল-কুদসের মুক্তি সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া।
লেখক: সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন