ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
জালাল উদ্দিন ওমর : ইসলামে নামাজ রোজার মতই যাকাত একটি ফরজ ইবাদত। যাকাত হচ্ছে অর্থের ইবাদত। আর্থিকভাবে সচ্ছল মানুষদের ওপর যাকাত আদায় বাধ্যতামূলক। আর যাকাতের অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করতে হবে, সেটা ও ইসলাম নির্ধারন করে দিয়েছে। যাকাত আরবী শব্দ। এর অর্থ পবিত্রতা, প্রাচুর্যতা, ক্রমবৃদ্ধি এবং প্রশংসা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় যাকাত হচ্ছে সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ কোন অসহায় মুসলমানকে দুনিয়াবী স্বার্থ ছাড়া প্রদান করা। যাকাত হচ্ছে অসহায়, অভাবী, অক্ষম এবং সুবিধা বঞ্চিত মুসলিম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্রতা বিমোচনের মুল হাতিয়ার। যাকাত হচ্ছে একটি মানবিক সমাজ গড়নের হাতিয়ার এবং মানবকল্যাণই যাকাতের মুলমন্ত্র। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে একজন মানুষের সম্পদ পবিত্রতা অর্জন করে, আর সেই যাকাতের অর্থ দিয়ে বঞ্চিত মানুষের সমস্যার সমাধান হয়। যাকাত হচ্ছে ধনীদের সম্পদে গরীবের অধিকার, যা আদায় করতে ধনী ব্যক্তিটি বাধ্য। মহান আললাহ কোরান শরিফে সালাত আদায়ের সাথে সাথে যাকাত আদায়ের ও নির্দেশ দিয়েছেন। কোরান শরীফে তিনি মোট ৩২ বার যাকাত আদায়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আললাহ একক ভাবে ৭ বার আর সালাতের সাথে ২৫ বার, যাকাত আদায়ের কথা বলেছেন। প্রকৃত পক্ষে যাকাত হচ্ছে মুসলমানদের জন্য একটি ফরজ ইবাদত। কিন্তু মুসলিম জাতির দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মুসলমানেরা ঠিকমত যাকাত আদায় করে না । এমনকি যারা নামাজ পড়ে , রোজা রাখে তারা ও সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে না। সঠিকভাবে যাকাত আদায় করলে আদায়কৃত যাাকাতের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হত। একদিকে মুসলমানেরা ঠিক মত যাকাত আদায় করে না ,অপরদিকে সেই টাকা সঠিকভাবে সঠিক খাতে ব্যবহৃতও হয় না।ফলে যাকাতের উপকার থেকে সমাজ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আসুন সঠিক ভাবে যাকাত প্রদান করি এবং সেই যাকাতের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ গড়ে তুলি ।
ঈমান আনার পর ইসলামের বিধাসমুহকে পূর্নাঙ্গভাবে গ্রহন করতে হবে এবং পালন করতে হবে। আপনি কিছু বিধান পালন করলেন আর কিছু বিধান পালন করলেন না --এ রকম সুযোগ কিন্তু ইসলামে নেই। স্বাভাবিক ভাবেই নামাজ আদায়ের মত যাকাত ও আদায় করতে হবে। যাকাত আদায়ের পর সেই অর্থ যাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত খাত সমুহে ব্যয় করতে হবে।পবিত্র কোরানে বর্নিত যাকাত আদায় সম্পর্কিত আয়াতসমুহ থেকে আমি এখানে কয়েকটি আয়াত বর্ননা করছি। তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রান কর এবং রকুকারীদের সাথে রুকু কর (বাকারা-৪৩)। তোমরা সালাত কায়েম কর , যাকাত দাও এবং আললাহকে দাও উত্তম ঋন (মুজাম্মিল -২০)। তোমরা সালাত কায়েম কর , যাকাত দাও এবং আললাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর ( মুজাদালাহ-১৩)। যারা যাকাত দেয় না তাদের সম্পর্কে বলেছেন -- যারা যাকাত দেয় না, তারাই আখিরাতের অস্বীকারকারী কাফির( হা-মীম সাজদা-৭)। কোরান শরীফে আললাহ কর্তৃক বর্নিত এই কয়েকটি আয়াত থেকে আমরা সহজেই যাকাতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি । কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক হলে ও সত্য মুসলমানেরা যাকাতের গুরুত্ব এখনো সঠিক ভাবে বুঝতে পারেনি অথবা বুঝার চেষ্টা করেনি। এ কথাটি সত্য বলেই মুসলমান সমাজে সঠিকভাবে এখনো যাকাত আদায় হয় না এবং আদায়কৃত যাকাত সঠিকভাবে ব্যয়ও হয় না । যে সমস্ত মানুষের ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে, সেই সমস্ত মানুষ যদি প্রত্যেকেই সঠিক পরিমাণে যাকাত প্রদান করত এবং সেই যাকাতের অর্থ যাকাতের নির্দিষ্ট খাতসমুহে ব্যয় করত তাহলে মুসলিম সমাজে কোন দরিদ্র , বঞ্চিত এবং অসহায় মানুষ থাকত না। মনে রাখতে হবে, যাকাত হচ্ছে আললাহ কর্তৃক নির্ধরিত একটি বিধান। আর এটা হচ্ছে ধনীদের সম্পদে বঞ্চিতদের অধিকার। এটা বঞ্চিতদের প্রতি ধনীদের কোন করুনা বা অনুগ্রহ নয়। আবার এটা দান ও নয়। এটা হচ্ছে ধনীদের সম্পদে গরীবদের এমনই একটা অধিকার, যেটা প্রতি বছর ধনী ব্যক্তিরা গরীবদের প্রদান করতে বাধ্য এবং সেটা গরীবদের ঘরে পৌছে দেয়াটা ধনীদের দায়িত্ব । এভাবে যাকাত প্রদানকে আললাহ ফরজ করে দিয়েছেন যাতে একদিকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা তাদের ধর্মীয় বিধান পালন করবে , অপরদিকে যাকাতের অর্থ দিয়ে অটোমেটিক্যালি সমাজ থেকে দারিদ্র এবং সমস্যা দুর হবে। এভাবে যাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সার্বজনিন এবং কল্যানমুখী অর্থনীতি চালু করেছে , যার মাধ্যমেই কেবল একটি আলোকিত এবং মানবিক সমাজ গড়া সম্ভব ।
লেখক : প্রকৌশলী ও আহবায়ক, যাকাত ফর হিউমিনিটি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।