Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান ও আল কুরআন

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আলী এরশাদ হোসেন আজাদ : মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল হয় পবিত্র রমজান মাসের শ্রেষ্ঠতম রজনী ‘লাইলাতুল কদরে’। মহান আল্লাহ্ বলেন ‘মহিমান্বিত রমজান মাস, এতে মানব জাতির পথপ্রদর্শক এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (বাকারা: ১৮৫)। এ মাসে অন্যান্য আসমানি কিতাবও অবতীর্ণ হয়। যথা যাবুর ৬ রমজান, তাওরাত ১ রমজান, ইঞ্জিল ১২ রমজান। বিশ্বমানবতার মুক্তি অন্বেষায় প্রিয়নবীর (স.) ‘হেরাগুহা’য় দীর্ঘ ধ্যানমগ্নতার পর কুরআন নাযিলের শুভসূচনা হয় ৬১০ খ্রি.। ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.) ওহি নিয়ে আসেন এবং বলেন, ‘ইকরা’ (পাঠ করুন), প্রিয়নবী (স.) বলেন ‘মা আনা বি-ক্বারি’ (আমি তো পড়তে জানি না)। তখন ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.) প্রিয়নবীর (স.) সঙ্গে তিনবার আলিঙ্গণ করেন এবং বলেন ‘ইকরা’। তখনই প্রিয়নবী (স.) পড়তে শুরু করেন ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযি খালাক্...’ ‘পাঠ করো মহিমান্বিত প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন... তিনি তো মানুষকে তাই শিখিয়েছেন যা সে জানতো না’ (আলাক: ১Ñ৫)। এভাবেই শুরু হয়ে ২৩ বছরের দীর্ঘকাল পরিক্রমায় মক্কা-মদীনায় অবতীর্ণ হয় (৯২+২২) ১১৪টি সুরা এবং আল কুরআনের সর্বশেষ আয়াত হিসেবে বিদায় হজ্বের সময় অবতীর্ণ হয় সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াত।
এ মাসেই জামাআতের সঙ্গে নামাযরত অবস্থায় শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শোনার সৌভাগ্য হয় মূলতঃ তারাবীহ্র কল্যাণে। আল-কুরআনে ৫৪০টি রুকু রয়েছে, ৫৪০ ভাগ ২৭=২০ রাকাআত তারাবীহ্র জামাআতে পুরো কুরআন শোনা বা ৩০ গুণন ২০= ৬০০ রাকাআত নামায জামাআতে আদায় কতই না মূল্যবান। সাধারণভাবে বলা হয় পবিত্র কুরআনে আয়াত ৬২৩৬, শব্দ ৭৭৯৪, অক্ষর ৩২৩৭৬০টি এবং আল্লাহ্ শব্দটি ২৫৮৪ বার যা নামাযে শোনার কারণে বান্দাকে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। কেননা, প্রতি অক্ষর পাঠে দশ নেকী আর তা রমজান ও তারাবীহ্র কারণে কী পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তা অনুমেয় এবং মহাকল্যাণপ্রদ। পবিত্র কুরআনের হিফাজত ও মহান আল্লাহ্র ইবাদতের অন্যতম মাধ্যম ‘তারাবীহ্ নামায’। এর মাধ্যমেই মহান আল্লাহ্র শাহী দরবারে বান্দার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। শুধু তারাবীহ্র জামাআতের সঙ্গে ১২০০ বার সিজদাহ করাও কতোই না সৌভাগ্যের বিষয়। ইফতারির পর শ্রান্ত-অবসন্ন দেহ যখন একটু বিশ্রাম কাতর, তখনই দূর মিনারে ধ্বনীত হয় ‘হ্যাইয়ালাস্-সালাহ’্ তাই আবারো ছুটে চলা মসজিদে, এতো তারাবীহ্র আকর্ষণ, এতো মহান আল্লাহ্র বাণীর নিত্যতা ‘তারা তো এমন লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রয়বিক্রয়, আল্লাহ্র স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে না...’ (নুর: ৩৭)। এমনই সম্মোহনী শক্তি নিয়ে পবিত্র রমজান মাসে আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে যে, ‘আল কুরআনের সতর্কবাণী আবলোকন ও অনুধাবন করলে সুকঠিন মানবাত্মাও প্রকম্পিত না হয়ে পারে না। তেমন আশ্বাসবাণী অনুধাবন করে অন্ধ মনের বন্ধ দুয়ার খুলে যায়, রুদ্ধ কর্ণকুহর প্রত্যাশার পদধ্বনি শুনতে পায়। আর মৃত অন্তরাত্মা ইসলামের অমীয় সুধা পানের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। এসব মিলে হৃদয়রূপ বেতারযন্ত্রে বেজে উঠে ঐশীপ্রেমের মন মাতানো রাগ-রাগীনীর সুমধুর সুরলহরী’ (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ম খন্ড : ই.ফা.বা)। তাই তো পবিত্র কুরআন ও রমজানের প্রাণোচ্ছ¡াসে মুজাদ্দিদ আলফিসানির (রহ.) ভাষায় নিবেদন,
‘এ আবে হায়াত থেকে পিপাসা চাহি না মিটাতে কভু
এর মাঝে যেন হরদম মোর তৃষ্ণা বাড়ান প্রভু’।।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন