Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ কেনা কাটায় বৃষ্টির হানা

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : রমজান মাস এখন শেষের দিকে। চলছে ধুম কেনাকাটার সময়। এরইমাঝে ২১ রোজা পার হয়ে গেছে। এ ২১ দিন বৃষ্টির কারণে অনেকটাই বেকার সময় কাটিয়েছেন ব্যবসাযীরা। তাদের আশা ছিল শেষের দিকে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠবে। কিন্তু সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে ফের বৃষ্টি তাদের সে আশায় গুড়েবালি। নিম্নচাপের প্রভাবে ১১ জুন রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলতে থাকায়; এবং আরও কয়েকদিন চলার আবহাওয়া পূর্বাভাসে একরকম ক্রেতা খরার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে রাজধানীর বিপানীবিতানগুলোর। সামনের দিনগুলোতেও এমন অবস্থা চলার শঙ্কায় পড়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, রোজা শেষে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাবে হতাশাই হয়তো বাড়বে।
গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুর, নিউ মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টির কারণে অনেকটাই ক্রেতাশূন্য এসব বিপণিবিতানগুলো। আর ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির কারণে দোকান খোলারই সুযোগ পাননি।
ঈদের বাজারে বৃষ্টির হানা। বৃষ্টি আর যানজটে নগরজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। গত ৮/১০ দিন ধরে কখনও হালকা আবার কখনও ভারি বর্ষণে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোসহ পাড়ামহল্লার অলিগলির রাস্তাঘাটে পানি জমে গেছে। রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঈদ কেনা কাটা করতে বের হওয়া নগরবাসী। গাড়িতে উঠলে যানজট, পায়ে হাটতে গেলে কাদা পানি ও খানাখন্দকেভরা রাস্তায় জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। নানা প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে বৃষ্টি ও যানজট উপেক্ষা করেই নিজ নিজ লক্ষ্যে যেতে হয়েছে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের লম্বা লাই দেখা গেছে। যানজটের কারণে সময়মত পাওয়া যায়নি গাড়ি। মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। মাত্র দেড়-দুই কিলোমিটার পথ যেতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে রাস্তায়।
গতকালের বৃষ্টিতে বিশেষ করে ঢাকা শহরের ফুটপাতের ক্রেতা বিক্রেতারা পড়ে মাহ দুর্ভোগে। আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বড় বড় মার্কেট, বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস ও শপিংমলগুলোতে তুলনামূলক কিছুটা বেশি ক্রেতার ভিড় থাকলেও ফুটপাত তেমন একটা জমেনি। বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষ অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। বিকেলের বৃষ্টিতে ফুটপাথের বিকিকিনিও তলানিতে গিয়ে ঠেকছে বলে জানান বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সরজমিন রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে মার্কেটে লোক আসছে, তবে তা গত কয়েকদিনের তুলনায় কম। এসঙ্গে যোগ হয়েছে যানজট। ফলে দিনের বেলায় ক্রেতারা কম আসছেন বলে জানান দোকানিরা। এদিকে বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে আছে ফুটপাতের মার্কেটগুলো। এমন মৌসুমে বিকিকিনির এ অবস্থায় বিক্রেতাদের মাথায় হাত। অবিরাম বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ঢাকা কলেজ সংলগ্ন এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে তেমন একটা ক্রেতা দেখা যায়নি। বৃষ্টি ও যানজটের কারণে ক্রেতা কম।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের দেশীয় ফ্যাশন হাউজ বাংলার মেলার ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম জানান, বেলা বাড়ার পর কিছু ক্রেতা কাস্টমার পেয়েছেন তারা। বৃষ্টি তো অবিরত ঝড়ছেই। ক্রেতা আসছে না। যারা আসছেন, তারা দেখছেন, কিনছেন। এবার ঈদের বিকিকিনিতে তেমন সাড়া মিলছে না জানিয়ে তিনি বলেন, বেতন না পাওয়ায় রোজার প্রথমে কাস্টমার ছিল না। আর এখন বিক্রির সময়টাতে হচ্ছে বৃষ্টি। কাস্টমার আসবে কী করে? বসুন্ধরা সিটির রিচম্যান সপের ইনচার্জ রেজোয়ান কবির বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। ঈদে তো কেনাকাটা করতে হবে, তাই যাদের গাড়ি আছে, তারা চলে আসছে।
কথা হয় আজিজ সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা কলাবাগানের বাসিন্দা মনির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টি বলে ভিড় কম হবে। এটা জেনেই কষ্ট করে চলে এসেছি। ভিড় না থাকলে কেনাকাটায় সুবিধা। তাই বৃষ্টিতে একটু কষ্ট হলেও চলে এসেছি। এদিকে যমুনা ফিউচার পার্কেও দিনভর গুটিকয়েক ক্রেতার দেখা মিলেছে। এখানকার পোশাক ব্র্যান্ড ওয়েস্টিনের ব্যবস্থাপক সম্রাট জানালেন, বৃষ্টির কারণে কাস্টমার পাওয়া যাচ্ছে না। আজ একদমই কাস্টমার আসছে না। রেগুলার সময়ের চেয়েও বিক্রি কম।
কথা হয় পল্টনের পলওয়েল সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাহাঙ্গীর আলম অরণ্যের সঙ্গে। তিনি জানান, ঈদের অনেক কেনাকাটা এখনো বাকী। সে কারণেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছি। কয়েকদিন তো গরমে বের হতে পারিনি। বৃষ্টির কারণে গরমটা তো নেই, আর তাই বেরিয়ে পড়লাম। দুইদিন পরে হলেও তো কেনাকাটা করতে হবে।
এদিকে মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুর দুই নম্বরের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ, মিরপুর এক নম্বরের শাহ আলী প্লাজা, মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স, স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট ঘুরে হাতে গোনা কিছু ক্রেতা দেখা গেছে।
মিরপুর দশ নম্বরে কেনাকাটা করতে আসা শাফকাত কবির বলেন, কয়েকদিন পরই দেশে যাব ঈদ করতে। কয়েকটা দিনই হাতে আছে, বাড়ির সবার জন্য তো কেনাকাটা করতে হবে। পরে সময় হবে না, তাই বৃষ্টিতেই আসতে হলো। স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউজ গ্রামীণ চেকের ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আর মামুন জানালেন, বৃষ্টি থাকায় ক্রেতা তেমন আসছে না তাদের শো-রুমে। তবে সন্ধ্যার পরে ক্রেতা কিছুটা বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।
সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্স আর হাকার্স মার্কেট ছিল একেবারেই ক্রেতাশূন্য। প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্সের বনি ফ্যাশনের স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ক্রেতা একদমই নাই। এমনিতেই এ ঈদে বেচা-বিক্রি কম, তার উপরে বৃষ্টির কারণে তো আরও খারাপ অবস্থা। হকার্স মার্কেটের কালঞ্জয়ী শাড়ী হাউজের বিক্রেতা জসিমের কণ্ঠে প্রায় একই হতাশা, এইবারের ঈদে বিক্রি এমনিতেই কম, তার উপরে বৃষ্টিতে কাস্টমারের আকাল পড়ছে। তিনি বলেন, রোজার শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কয়েকদিন বৃষ্টি ছিল, এরপর আবার প্রচন্ড গরম। এখন আবার বৃষ্টি, এটাও মনে হচ্ছে কয়েকদিন থাকবে। তাহলে বিক্রিটা করব কখন? সন্ধ্যার পর নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নূরজাহান সুপার মার্কেটে বেশ কিছু ক্রেতার দেখা মেলে। নিউ মার্কেটের রূপা পাঞ্জাবী স্টোরের বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, কাস্টমার কয়েকজন এসেছেন সকাল থেকে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে তেমন কেনাবেচা তো হচ্ছে না। এদিকে বৃষ্টির দমকায় কম নাজেহাল ও বিরক্ত নন ক্রেতারা। হাতের টাকা থাকতে ও নির্দিষ্ট সময় কেনাকাটা করতে গিয়ে তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে এবারের ঈদুল ফিতরের কেনাকাটায় বৃষ্টি ভালোই বাগড়া দিচ্ছে। এখন অপেক্ষা সামনের কয়েটি দিনের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ