Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের মুখে অমলিন হাসি

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৭২ শিশুকে বিনামূল্যে ১৫ লাখ টাকা মূল্যের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বরাদ্দ
স্টাফ রিপোর্টার ঃ ফুটফুটে ছোট মেয়ে রোশনী সাহা। বয়স তিন কি চার। কথা আটকে আসে, বলতে পারে না পরিপূর্ণ শব্দ। তাকে ঘিরে অভিভাবকদের ভীষণ দুশ্চিন্তা। নানা জায়াগায় ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। এখানে বর্তমানে রোশনী চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎিসকরা বলছেন, তার শোনার জন্য শ্রবণ-যন্ত্রের বিকল্প আর কিছু নাই। কিন্তু এই যন্ত্রের দাম প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এত টাকা দিয়ে রোশনীর কানে এই যন্ত্র স্থাপনের সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। তাই ডাক্তারের পরামর্শে সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কর্মসূচীতে রোশনীর জন্য শ্রবণযন্ত্র পেতে আবেদন করেন। অবশেষে গতকাল এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিএসএমএমইউতে তার কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস সরকার বরাদ্দ দেয়। বিনামূল্যে এই যন্ত্র পেয়ে আনন্দে আত্মহারা রোশনীর পরিবার।
শুধু রোশনী নয়, শারমিন আক্তার, তুলি বিশ্বাসসহ সর্বমোট ৭২জন শ্রবণপ্রতিবন্ধি শিশু এদিন বিনামূল্যে এই যন্ত্র পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা কোঠায় ৬৬ জন, সরকারি কোঠায় তিন জন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের আওতাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কোঠায় তিন জন রয়েছে। খুব শীঘ্রই সার্জারি করে এই যন্ত্রগুলো তাদের কানে প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে এখানে শিশুসহ ১৫২ জনের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০ জন শিশু। এর আগে তাদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট যন্ত্র দেয়া হয়েছে। এবার আরও ৭২ জনকে নতুন করে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট দেয়া হল। সরকারের সহায়তায় প্রতিবন্ধী শিশুরা এ ডিভাইস পেয়েছে।
সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ‘পিস এন্ড হিয়ারিং সেন্টার’ তৈরীর মাধ্যমে দেশের সকল শ্রবণপ্রতিবন্ধীকে বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সেবায় আনার পরিকল্পনা আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যর তথ্য মতে, বাংলাদেশে বধিরতার হার  ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ মারাত্মক ধরনের বধিরতায় ভুগছেন। বিশ্বজুড়ে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে দুই শিশু শ্রবণ সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সে হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ হাজার ৬০০ শিশু বধিরতা নিয়ে জন্মায়। এছাড়া প্রায় সমসংখ্যক জনগোষ্ঠী শ্রবণশক্তি নিয়ে জন্মালেও তাদের জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময়ে বধিরে পরিণত হয়। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ডা. আলী আসগর মোড়ল জানান, শৈশবে এবং বাল্যকালে শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা শিশুর মুখের ভাষা এবং মানসিক বিকাশকে সরাসরি বাধাগ্রস্ত করে। ফলে প্রতিবন্ধী শিশু বা ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে ওঠে। কিন্তু এটি না ভেবে দ্রæত শ্রবণ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তিনি জানান, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। ইলেকট্রনিক যন্ত্র অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে স্থাপন করতে হয়। এ ইমপ্লান্ট শ্রবণ প্রতিবন্ধীর জন্য এক আশীর্বাদ স্বরূপ।
জানা গেছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি এখন বাংলাদেশেই হলেও এটি সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। ২০০৫ সালের আগে বাংলাদেশের হাতে গোনা তিন থেকে চারজন রোগী বিদেশে গিয়ে এ ইমপ্লান্ট সার্জারি করিয়েছেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে ২৫ টি ইমপ্লান্ট সার্জারি হয়। এক একটি ইমপ্লান্ট সার্জারিতে ১৫ লাখেরও বেশি টাকা খরচ হয়। এ ব্যয়বহুল চিকিৎসা বলতে গেলে সাধারণ মানুষের একেবারে নাগালের বাইরে। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে ডেভেলপমেন্ট অব কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রোগ্রাম ইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ কর্মসূূচির মূল লক্ষ্য শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস ব্যবস্থা করা, সার্জারি করে তা প্রতিস্থাপন করা,  ইমপ্লান্ট-পরবর্তী সময়ে শ্রবণ প্রতিবন্ধীকে ভাষা বা কথা বলা শেখানো। কর্মসূচীর পরিচালক প্রফেসর আবুল হাসনাত জোয়ারদার কর্মসূচীর বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানান, এ পর্যন্ত সব কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিএসএমএমইউ হাসপাতালে সব অপারেশনও বিনামূল্যে করা হয়েছে। সব ইমপ্লান্ট গ্রহীতারা শুনতে ও কথা বলতে সক্ষম হচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ