Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান মাসে খাদ্যাভ্যাস

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো
সাহরিতে যা খাওয়া উচিত : সাহরির খাবার এমন হওয়া উচিত যা দীর্ঘক্ষণ পেটে থাকে অর্থাৎ হজম হতে বেশি সময় লাগে। কেউ কেউ মনে করেন, সাহরিতে প্রচুর পরিমাণ আমিষ (Protein)  জাতীয় খাবার খেলে সারাদিন একটু সবল থাকা যাবে। কেউ আবার ভাত (Carbohydrate)  বেশি খাওয়ার পক্ষপাতি। আসলে এর কোনটিই ঠিক নয়। সাহরিতে খাবারের প্রত্যেকটি উপাদান যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ের মত রোজার মাসে সুষম খাবার গ্রহণের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবারের কোনটিই যেমন খাদ্যতালিকায় বাদ পড়া উচিত নয়, তেমনি কোন বিশেষ খাবার পরিমাণে বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ফলে ইনসুলিনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন গøুকোজকে রক্ত থেকে দ্রুত দেহকোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ইনসুলিন এর কারণে রক্তে গøুকোজ বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণের কারণে দেহের স্থুলতা বেড়ে যায়।
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে দৈনিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ-হজমকারী এনজাইম পাকস্থলি থেকে নিসৃত হয়, তা দিয়ে অতিরিক্ত আমিষ হজম করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণের ফলে শরীরে ঝিমুনি আসে ও রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ইউরিয়া আমাদের দেহের জন্য একটি ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থ। অনুরূপভাবে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার দেহকোষ ও রক্তে অনাকাংখিত মেদ তৈরি ছাড়া আর কোন উপকার করতে পারে না । যাদের পিত্তথলি বা লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত চর্বি অত্যন্ত ক্ষতিকর! সেজন্য সাহরিতে অন্য মাসগুলোর মত স্বভাবিক খাবার খাওয়াই শ্রেয়। জটিল শর্করা (Complex carbohydrate জাতীয় খাবার খুব ধীরে হজম হয়, তাই, এ ধরনের খাবার সাহরিতে খাওয়া ভালো। যেমন- ঢেঁকিছাটা চালের ভাত, লালরুটি, পাউরুটি, বার্লি, সব রকমের আলু, oatmeal, pasta, macaroni, spaghetti  ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ স্থিত থাকে, হজম হয় ধীরে ধীরে। তাই রোজাদারের ক্ষুধাভাব কম অনুভব হয়। এর সাথে পছন্দ অনুযায়ী পরিমিত মাছ/ মাংস ও প্রচুর শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে।
একজন রোজদারের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যথেষ্ঠ পানি (দৈনিক অন্তত ২ লিটার) ও তাজা ফলের রস পান করা। অনেকেই এ বিষয়টিকে খুবই সাধারণ মনে করে গুরুত্ব দেন না। পানি দেহকে সতেজ রাখে। শরীর নামের কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক কার্যকলাপের মূল উপাদান এই পানি। পানি কম খেলে মূত্র তৈরি হয় কম, তাই দেহের বর্জ্য পদার্থ বের হতে পারে না, ফলে দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সাহরি খাওয়ার বেলায় আল্লাহ রাসূলের (সা.) নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াই উত্তম। সে নিয়মটি হল, পাকস্থলীর তিন ভাগের একভাগ খাবার ও তিন ভাগের একভাগ পানি দিয়ে পূরণ করতে হবে এবং বাকী এক তৃতীয়াংশ খালি রাখতে হবে শ্বাস নেয়ার জন্য। অনেকেই হয়ত ভাববেন, আমরা তো পাকস্থলী দিয়ে শ্বাস নেই না, তাহলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস নিতে সাহায্য করে কেমন করে? উত্তরটা খুবই সহজ। পাকস্থলীর উপরে আছে ‘ডায়াফ্রাম’ নামের একটি বড় মাংসল পর্দা। আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি, তখন ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং ফুসফুস স্ফীত হয়। খাদ্য দিয়ে পাকস্থলী পূর্ণ থাকলে শ্বাস গ্রহণের সময় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের এই মূল পেশী - ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নামতে পারে না, ফুসফুস পর্যাপ্ত স্ফীত হয় না ও পরিমাণমত অক্সিজেন দেহে প্রবেশ করতে পারে না। তাই খাবার গ্রহণের ব্যাপারে রাসূল (সা.) এর নির্দেশনা মেনে চলা শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী ।
সাহরিতে যা খাওয়া উচিত নয় : ভাজাভুজি, অতিরিক্ত তেল বা মশলাযুক্ত খাবার সাহরিতে খাওয়া উচিত নয়। এ ধরনের খাবার পেটে গোলযোগ তৈরি করে। সাহরিতে চা পান না করাই উত্তম। চায়ে থাকে মুত্র-বর্ধক উপাদান। চা’য়ের মুত্র-বর্ধকের প্রভাবে দেহের পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত বের হয়ে যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন