ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মীর আব্দুল আলীম
বছরের অন্যান্য সময় চাঁদাবাজি অব্যাহত থাকলেও ঈদ উপলক্ষে চাঁদাবাজরা এখন সত্যিই বেপরোয়া। ঈদ সামনে রেখে পরিবহন সেক্টরে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। চাঁদা না দিলেই নির্যাতনের শিকার হতে হয় পরিবহন মালিক ও চালকদের। এ সেক্টরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, চাঁদাবাজির ঘটনায় অনেক সময় পুলিশ জড়িত থাকায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছে না মানুষ।
ঈদ বকশিশের নামে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশ বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজির ঘটনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে থানায় ডায়েরি ও মামলা হলেও অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা নীরব থাকছেন। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, চাঁদাবাজদের সামাল দিতে গিয়ে তাদের এখন ত্রাহি মধূসুদন অবস্থা। জানা গেছে, এলাকার বড় বড় সন্ত্রাসীর নাম করে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। অনেক দাগি সন্ত্রাসী এলাকায় না থাকলেও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সক্রিয়। এলাকার কিছু মাস্তান রাজনৈতিক নেতার পরিচয়েও চাঁদাবাজি করছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য হল, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। কোথাও চাঁদাবাজির খবর পাওয়া গেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাহলে কেন চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না? এ প্রশ্নের উত্তরই বা কী দেবেন তারা?
বস্তুত শুধু শুকনো কথায় চিঁড়া ভিজবে না। চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎপাটন করে পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। এছাড়া পুলিশের চাঁদাবাজী আগে বন্ধ করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে, চাঁদা দাবি করে কেউ ফোন করলেই যেন পুলিশে খবর দেয়া হয়। এ প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদেরও উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা থানা-পুলিশের ওপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না। ঈদ চাঁদাবাজিসহ সাংবাৎসরিক চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধে আইনশৃংখলা বাহিনীর আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। কোন এলাকায় কোন চক্র চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে, তা পুলিশের অজানা থাকার কথা নয়। এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ঈদ ছাড়াও অবিরাম চাঁদাবাজি চলে দেশে। অনেক সময় উপলক্ষ তৈরি করেও চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় বিদেশে পলাতক কয়েকজন সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করেও চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। এসব চাঁদাবাজের হুমকির মুখে অনেক ব্যবসায়ী আতংকে দিনাতিপাত করছেন। এ কথা ঠিক, আইনশৃখলা বাহিনী, বিশেষত র্যাব সদস্যরা চাঁদাবাজদের মনে কিছুটা হলেও ভয় ঢুকাতে সক্ষম হয়েছে, যে কারণে সরাসরি চাঁদা চাওয়ায় ঘটনা আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। তার বদলে চলছে ফোনে চাঁদাবাজি। একটি সুস্থ সমাজ সর্বদাই আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। চাঁদাবাজি সুস্থ সমাজ কাঠামোয় বিশৃংখলা সৃষ্টি করে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত হলে চাঁদাবাজি কমে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। জোরপূর্বক কারও কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিঃসন্দেহে অপরাধ। অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দল ও সংস্থার নামেও চাঁদা আদায় করে থাকে। বিশেষ করে পরিবহন খাতে এ ধরনের চাঁদাবাজি বেশি লক্ষ্য করা যায়। চাঁদা আদায় হয় হাট-বাজারে, ফেরিঘাটে, সংশিষ্ট এলাকার প্রভাবশালীর নামে। ঈদের সময় বাস ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। এর পেছনে সংশিষ্টদের স্বেচ্ছাচারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি চাঁদাবাজরাও এজন্য দায়ী।
বলা বাহুল্য, ঈদকে সামনে রেখে সমাজে শান্তি-শৃংখলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শনের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।