Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামী পুলিশ বলছে পলাতক

গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গৃহবধূকে আগুনে পুড়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা দেড়মাসেও ধরা পড়েনি। প্রধান অভিযুক্ত ঘাতক স্বামী ও তার সহযোগিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ বলছে পলাতক। গত ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের কোতয়ালি থানা এলাকার আন্দরকিল্লার ঘাট ফরহাদবেগ ইয়াকুব ম্যানসনের ২য় তলার বাসায় মৌসুমি রানীর শরীর আগুনে ঝলসে দেয়া তার স্বামী মৃদুল চন্দ্র। রানীর চিৎকারে আশাপাশের লোকজন প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ মে মারা যান ওই গৃহবধূ।
নিহত গৃহবধূর স্বজনরা জানায়, এ মামলার অন্যতম এক আসামী গত শনিবার প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে মিরসরাই থানার কোড়ার হাট এলাকার একটি দরিদ্র পরিবারের নাবালিকাকে বিয়ে করেছে। একা নামের ওই মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে অভিযুক্তরা আনন্দ উল্লাসও করেছে।
অপরদিকে, নিহতের পরিবার আসামীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা বলেছেন, আসামীপক্ষ পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করায় তাদের গ্রেফতার করছেনা। মামলা তুলে নিতে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকিও দিচ্ছে অভিযুক্তরা। অভিযুক্ত একজন বাদি পক্ষকে বলেছেন, আমরা থানা কিনে ফেলেছি। কিছুই হবেন আমাদের। নিহতের স্বজনরা জানান, বিয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে আসছিল মৃদুল। তার অনেক দাবিই পুরন করা হয়েছে। সম্প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে রানীর ছোট বোনের দিকে। আর শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে মৃদুলের পরিবার। কারন হিসেবে তারা জানান, ঘটনার দিন রানীকে নিয়ে বাসার সকলের ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও ঘটনাস্থল (বাথরুম) এর আশপাশের আলামত ধোয়া মোছার কাজে ব্যস্ত ছিল সবাই। রানীর পোষাকও ধুয়ে পরিষ্কার করা হয় দ্রæত। বাথরুমের টাইলসও বদল করা হয়। নিজেকে সাধু সাজাতে ঢামেক হাসপাতালে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে স্ত্রীকে দেখতে যায় মৃদুল। মৃত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তার আচরণও বদল হতে থাকে। দ্রæত মরদেহ নিয়ে সৎকারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সে। এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করে। এদিকে, এ ঘটনায় নিহতের মা অংগনা রানী সিংহ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় মৃদুলকে প্রধান আসামী করা হয়। এছাড়া মামলার অপর আসামীরা হলেন, মানিক চন্দ্র সিংহ, চন্দনা রানী সিংহ, বাদল চন্দ্র সিংহ, প্রশান্ত চন্দ্র সিংহ, প্রদীপ চন্দ্র সিংহ ও প্রিতম চন্দ্র সিংহ।
এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সালে মৃদুলের সঙ্গে বিয়ে হয় রানীর। ওই সময়ে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। বছর খানেক তাদের সংসার ভালবাবে চললেও মৃদুলের আচরণ বদলাতে তাকে। স্ত্রীকে নির্যাতন করে আরও ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সে। বিষয়টি দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে পরিবারকে জানায়নি রানী। কিন্তু এক পর্যায়ে বাধ্য হয় জানাতে। আর এ কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে মৃদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা। রানীকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনার পথে প্রকৃত ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য হুমকিও দেয়া হয়। বর্তমানে পুলিশের রহস্যজনক আচরণে মামলার কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। পাশাপাশি ময়না তদন্ত রিপোর্টও টাকার জোরে বদলে ফেলা হতে পারে বলে নিহতের স্বজনরা আশঙ্কা করছেন। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোসীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ