পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন : ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী; ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান; ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। কবির এই কবিতার মতোই যেন আমাদের সেনাবাহিনী দেশের আর্ত-মানবতার সেবা করে যাচ্ছে। সেই ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখা সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সব সময় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনী আর্ত-মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছে। নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে দুর্গত মানুষের সেবা করেছে। গতকালও পার্বত্য রাঙামাটির মানিকছড়ি এলাকায় পাহাড় ধ্বসে নিহতের লাশ এবং আহত মানুষকে উদ্ধার করেছে এবং দুর্গত মানুষের সেবারত অবস্থায় জীবন দিয়েছেন। আর্ত-মানবতার সেবারত অবস্থায় দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর ৪ সদস্যের এই প্রাণদান ‘উদয়ের পথে শুনি কার বানী’ কবিতাকেই স্মরণ করি দেয়। এই হলো আমাদের দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী।
দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দবানে পাহাড় ধসের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানের মধ্যেই গতকাল সকালে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের মানিকছড়িতে সেনা ক্যাম্পের অনতিদূরে প্রাণ হারান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন তানভীর সালাম শান্ত, করপোরাল আজিজ ও সৈনিক শাহীন। মানুষের চলাচলের রাস্তা স্বাভাবিক করতে সেনা সদস্যরা যখন মাটি সরানোর কাজ করছিলেন, তখনই পাহাড় আরেকবার ধ্বসে পড়লে মাটিচাপায় তারা প্রাণ হারান। এর আগে পাহাড়ী এলাকায় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত একটি পরিবারকে উদ্ধার শেষে সেনাবাহিনীর এই দলটি সেখানে যান।
সেনাবাহিনীর এই চার সদস্যের প্রাণ হারানো তাদের পরিবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ; কিন্তু দেশপ্রেমের শপথ করে সেনাবাহিনীতে যোগদান করা ওই দামাল ছেলেরা জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন তারা দেশপ্রেমিক। দেশের মানুষের সেবায় তারা নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে পিছপা হন না। পাহাড়, সমতল কিংবা সমুদ্র সব স্থানেই সমানতালে মানুষের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মানবসৃষ্ট কোন তাÐব সব জায়গায়ই নিজের জীবন বাজি রেখে কাজে আত্মত্যাগের ইতিহাস পুরানো। মাঝে মধ্যেই আমরা জানতে পারি মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করতে গিয়ে সেনা সদস্য বা কর্মকর্তাদের প্রাণ উৎস্বর্গ করার কথা। এটি দেশের মধ্যে হোক বা দেশের বাইরে। এসব ঘটনায় শুধু পরিবার তার আপনজনদেরই হারায় তা নয়, দেশ হারায় গর্ব করার মতো একজন সৈনিককে। যার অবদান কখনোই শেষ হরার নয়।
এমনি মনে রাখার বা গর্ব করার মতো একটি ঘটনা ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার সকালে মানিকছড়ির একটি রাস্তায় পাহাড় থেকে নেমে আসা মাটি সরানোর সময়।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় ২ কর্মকর্তাসহ ৪ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। গত তিনদিনের প্রবল বর্ষণের ফলে গতকাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস শুরু হয়। এতে করে সমগ্র এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল থেকেই উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করে। গতকাল ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উক্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন আনুমানিক সকাল ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারীদলের উপর ধসে পড়লে তাঁরা মূল সড়ক হতে ৩০ ফিট নিচে পড়ে যান। পরবর্তীতে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২ কর্মকর্তাসহ ৪ সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়। উদ্ধার কার্যক্রম চালানো সময় ভূমিধসে পতিত সেনাসদস্য সৈনিক মোঃ আজিজুর রহমান (জন্ম ১৯৮৭ সালের ২০ জুলাই। বাড়ী মাদারীপুর; ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যোগদান করেন। বিবাহিত এবং এক মেয়ের জনক) এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। নিহতরা হলেন- মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক (জন্মঃ ১৬ মার্চ ১৯৮১; বাড়ী- সিংরাইল, মানিকগঞ্জ; তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৪৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশন প্রাপ্ত হন; তিনি বিবাহিত এবং পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলের জনক), ক্যাপ্টেন মোঃ তানভীর সালাম শান্ত (জন্মঃ ৩০ মার্চ ১৯৯০; বাড়ী পটুয়াখালীর বাউফল,; তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৬৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশনপ্রাপ্ত হন; তিনি সদ্যবিবাহিত), কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক (জন্মঃ ০১ মে ১৯৭৬; বাড়ী-ঈশ¡রগঞ্জ, ময়মনসিংহ; তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যোগদান করেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক) এবং সৈনিক মোঃ শাহিন আলম (জন্মঃ ১ আগস্ট ১৯৮৮; বাড়ী বগুড়ার আদমদিঘী থানায়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যোগদান করেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক)। প্রচÐ বৃষ্টিপাতে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক গতকাল বিকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি হতাহত সকল সেনাসদস্য ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।