পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মমিনুল ইসলাম মুন, তানোর (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর তানোরের পাচন্দর ইউপির ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে অভিযান চালিয়ে নারী ও শিশুসহ ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত রোববার দিবাগত রাতে বগুড়া ডিবি পুলিশ ও তানোর থানা পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওই বাড়ি থেকে এদের আটক করেছেন। সেখান থেকে মোট ১২ জনকে আটক এবং একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি ও দুটি সুইসাইডালভেস্ট উদ্ধার করা হয় এবং আটককৃতদের রাতেই থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এরা হলেন, তানোর উপজেলার পাঁচন্দর এলাকার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের হোমিও চিকিৎসক ইসরাফিল আলম, তার ভাই ইব্রাহিম ও প্রতিবেশি রবিউল ইসলাম, রমজান আলী, আয়েশা বেগম, হাওয়া খাতুন, মর্জিনা খাতুন, হারেছা খাতুন এবং শিশুদের মধ্যে হাওয়া খাতুনের এক ও মর্জিনা খাতুনের তিন শিশু কন্যা রয়েছে।
জঙ্গী ইসরাফিলের প্রতিবেশি জামিলুর রহমান। তিনি পেশায় কৃষক। আটক জঙ্গিদের সম্পর্কে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি জানান, এক সময়ে পরিবারটি বিএনপিপন্থী ছিলেন। ভোট দিতেন এবং সমর্থনও করতেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কাঁকনহাটে মহিষ বিক্রি করতে যান রমজান মাস্টার। হাট থেকে বিডিআর তার মহিষ আটক করে নেন। পরে আর ফেরৎ পান নি। একারণে ক্ষোভে ও অভিমানে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। এছাড়াও দলটির প্রতি কিছুটা সমর্থন ছিল। বিগত ৫/৭ বছর ধরে পুরো পরিবারটির চলাফেরা আলাদা হয়ে পড়ে।
তিনি আরো জানান, গ্রামের আর সব মানুষের চেয়ে ইসরাফিলের চলাফেরা আলাদা। শুধু তিনি নন তার পুরো পরিবার প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে মিশতেন না। মৌলবাদী ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী তারা। এজন্য গ্রামের সঙ্গে নামাজ পড়ে মোনাজাতে অংশ নেননি কখনো। রোজা কিংবা ঈদ সৌদির সঙ্গে মিল রেখে পালন করে আসছেন বিগত ৫ থেকে ৭ বছর ধরে। প্রতি বছরে ঈদের নামাজ বহিরাগত ২০ থেকে ২৫ জন লোক এনে নামাজ পড়তেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে তারা কখনো ঈদের নামাজ পড়েননি। শুধু জামিলুর নয় এমন কথা জানান একই গ্রামের আজিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে পাঁচন্দর ইউনিয়ন এলাকার নিভৃত পল্লী গ্রাম ডাঙ্গাপাড়া। বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়িতে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামেই বসবাস করে আসছেন রমজান মাস্টার। পেশায় তিনি গৌরাঙ্গপুর প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক। একারণে এলাকার লোকজন তাকে রমজান মাস্টার হিসেবে চিনে।
রমজান মাস্টারের স্বভাব চরিত্র ভাল। বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামের মসজিদে মোতাল্লি সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বড় ছেলে ইব্রাহিম মোহনপুর উপজেলার ধুরইল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে গ্রামে সার ও বিষের দোকান করছেন। সেই সঙ্গে ব্যাটারী চালিত অটোগাড়ি চালান। এছাড়া গ্রামের মসজিদে মাঝে মধ্যে ইমামতিও করেন। তিনি বর্তমানে তিন মেয়ের পিতা। স্ত্রী মর্জিনা বেগম গৃহিনী। তাদের এক মেয়ে তামান্না ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। অন্য মেয়ে তানসিকার বয়স চার বছর ও তাসকিরার বয়স ৬ মাস।
ছোট ছেলে ইসরাফিল আলম মুন্ডুমালা কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেছেন। বর্তমানে গ্রামে হোমিও চিকিৎসক। বাড়ির পাশে ওষুধের দোকানও আছে। প্রায় চার মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরে বিয়ে করেছেন। স্ত্রী হারিছা খাতুন গৃহিনী।
রমজান মাস্টার তার একমাত্র মেয়ে হাওয়া খাতুনের বিয়ে দেন একই ইউনিয়ন এলাকার বনকেশর চকপাড়া গ্রামের মোর্শেদ আলীর পুত্র রবিউল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের পর তাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়। বর্তমানে তার বয়স প্রায় তিন মাস।
এমন একটি পরিবার অন্ধকারে বসে থেকে দূর্ধর্ষ জঙ্গি সেজেছেন। পুলিশের ভাষ্যে রমজান মাস্টারের বড় ছেলে ইব্রাহিম, ছোট ছেলে ইসরাফিল ও জামাই রবিউল প্রশিক্ষিত জঙ্গী। এরমধ্যে ইসরাফিল ও তার ভগ্নিপতি রবিউল অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আস্তানা হতে বহনে পারদর্শী। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আগামী ঈদে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এজন্য রবিউল অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য বহন করে তার শ্বশুড় বাড়িতে মজুত করে।
জঙ্গি ইসরাফিলের চাচাতো ভাই আব্দুল জলিল জানান, ইসরাফিলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ভাইরার না কী জঙ্গির সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিয়ের আগ থেকে তার সঙ্গে যোগসাজস ছিল। বিয়ের পর সম্পর্ক গাড় হয়। এসুবাদে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে আড়ালে জঙ্গি কারবার শুরু করেছিলেন। তার চলাফেরায় সন্দেহ ছিল। এখন তা প্রমান হয়ে গেল।
প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত রাতে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন এলাকার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের রমজান মাস্টারের বাড়িতে ‘জঙ্গিআস্তানা’ সন্দেহে অভিযান শুরু হয়। বগুড়া ডিবি পুলিশ ও তানোর থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এি রপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত ছিল। এরআগে সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। এছাড়া রমজান মাস্টারের পরিবারের চার শিশু, চার নারীসহ ১২ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের তানোর থানা হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাড়িতে শক্তিশালী সুইসাইডাল ভেস্টসহ কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য রয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় ওই গ্রাম সহ পুরো উপজেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে বাড়ীর আসপাশ পুলিশ ঘিরে পুরো বাড়ী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এদিকে ঢাকা থেকে বোমা বিশেষজ্ঞ নিস্ক্রিয় দল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনা স্থলে পৌচ্ছে অভিযানের প্র¯ত্ততি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।