Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হোটেল বয় থেকে যেভাবে ভয়ঙ্কর অপরাধী বিপ্লব

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : হোটেল বয় থেকে ভাড়াটে ‘খুনি’, এরপর স্বর্ণ চোরাচালান, পরিবহন ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি থেকে ছিনতাইকারীচক্রের গ্রæপ লিডার- এভাবেই অপরাধ জগতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে মোঃ পারভেজ ওরফে বিপ্লব (৩৫)। এসব অপরাধ করতে গিয়ে একাধিকবার জেলও খেটেছে সে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে অপরাধ ছাড়ার বদলে নতুন নতুন অপরাধে জড়িয়েছে এ যুবক।
পোশাক কারখানার এক কর্মকর্তার ২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গতকাল (রোববার) গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে হোটেল বয় থেকে বড় অপরাধী হয়ে উঠার এ কাহিনী স্বীকার করে সে। এ ঘটনায় শনিবার মোঃ রাজু (২২) নামের এক ছিনতাইকারীকে নগরীর ফয়’স লেক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাজু বায়েজিদ থানার অক্সিজেন পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাসা থেকে ছিনতাই করা এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৫ জুন নগরীর অক্সিজেন মোড়ের সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ৯৯ হাজার টাকা তুলে রিকশায় ফিরছিলেন কোয়ালিটি ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানার কর্মকর্তা রুবেল কুমার দে। টি বোর্ডের কাছে স্টারশিপ গলিতে রিকশা ঢোকা মাত্র ছিনতাইকারীরা ছুরি ঠেকিয়ে তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। রাজু স্বীকার করে তাদের ছিনতাইকারী গ্রæপের নেতা বিপ্লব। টাকা ছিনিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রুবেলের চিৎকারে স্থানীয়রা ধাওয়া করে জনি নন্দী নামের এক ছিনতাইকারীকে একটি ছুরিসহ ধরে ফেলে। পরদিন জনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে।
তার জবানবন্দী থেকে রাজু ও বিপ্লবের নাম আসে। এর সূত্র ধরে গতকাল বায়েজিদ বোস্তামী থানার হাজীরপুল থেকে বিপ্লবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। থানার ওসি মোঃ মহসিন জানান, বিপ্লবকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে অপরাধজগতের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। হোটেল বয় থেকে ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠার কাহিনীও পুলিশের সামনে তুলে ধরে বিপ্লব। ছোটবেলায় নগরীর চকবাজারে হোটেল কস্তুরির বয় হিসেবে কাজ শুরু করে বিপ্লব। হোটেল বয় হিসেবেই শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করে সে। হোটেল মালিক জাহাঙ্গীর ওরফে তসবিহ জাহাঙ্গীর তার প্রতিপক্ষ দুবাই প্রবাসী আগ্রাবাদের ব্যবসায়ী গুন্নু মিয়াকে খুনের পরিকল্পনা করেন। আর ভাড়াটে খুনী হিসেবে গুন্নুকে খুন করতে তৈরি হয় বিপ্লব। নগদ ৫ লাখ টাকা এবং খুনের পর নিরাপদে দুবাই পাঠিয়ে দেয়ার শর্তে খুন করতে রাজি হয় সে। ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট রমজানের প্রথম দিন ইফতারের আগে নগরীর শেখ মুজিব রোডে গুন্নু মিয়াকে খুন করতে ‘অপেক্ষা’ করার সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে যায় বিপ্লব ও তার সহযোগীরা। ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেল খাটে বিপ্লব।
ওসি মহসিন বলেন, গ্রেফতার বিপ্লব নগরীর চকবাজার এলাকার ‘কস্তুরি’ হোটেলের কর্মচারি ছিলেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হোটেল মালিক ও নগর পুলিশের এক সময়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী তসবি জাহাঙ্গীরের নির্দেশে গুন্নু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে খুন করতে যায় বিপ্লব। দুবাই শহরে উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত রশি তৈরির জন্য বিখ্যাত গুন্নু মিয়ার প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৩৫ বছর ধরে দুবাইতে ওই কাজ করছেন তিনি। দুবাই থাকাকালে তার সাথে টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধ বাধে তসবিহ জাহাঙ্গীরের। এর জেরে গুন্নু মিয়াকে খুন করতে চেয়েছিলেন তসবিহ জাহাঙ্গীর। কোতোয়ালী জোনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে যে অভিযান পরিচালিত হয় সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ওসি মহসিন। তখন তিনি কোতোয়ালী থানার এসআই ছিলেন। ওসি মহসিন বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিপ্লবকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে আমি চিনতে পারি। ২০০৮ সালে অস্ত্র ও হাতবোমাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই সময় কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসার পর বিভিন্ন অপরাধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে ও বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে আরও কয়েকবার কারাভোগ করে।
কারাগারে থাকাকালে বিপ্লব সন্ত্রাসী ম্যাক্সন গ্রæপসহ বিভিন্ন অপরাধীদের সাথে পরিচিত হয় ও পরে কারাগার থেকে বের হয়ে তাদের সহায়তায় নগরীতে সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করত। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানায়, গুন্নু মিয়া হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় জামিনে বের হওয়ার পর ডলার মামুন নামে এক স্বর্ণ চোরাচালানির সহযোগি হিসেবে কাজ করে সে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে আসা স্বর্ণের চালান রেয়াজুদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক চোরাচালানী সিন্ডিকেটের হাতে পৌঁছে দেয়াই ছিল তার কাজ। বেশ কয়েক বছর চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিল সে। একবার তাকে কুপিয়ে স্বর্ণের একটি চালান ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে অপর একটি গ্রæপ। এরপর সে এ পেশা বদল করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়ে পরিবহন ব্যবসায় নামে। প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া হয় হৃদয় ট্রান্সপোর্ট। ট্রাকে মালামাল পরিবহনের আড়ালে ট্রাকবোঝাই পণ্য ডাকাতিতে নেমে পড়ে সে। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় পরিবহনের সময় সরকারি একটি মার্বেলের চালান ডাকাতি করে বিপ্লব। ওই ঘটনায় কুমিল্লার লাকসাম থানায় গ্রেফতার হয় সে। জেলখানা থেকে বের হয়ে আবারও সে ভাড়াটে খুনী ও ছিনতাইকারী চক্রে দলনেতা হিসেবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। নগরীর বায়েজিদ ও চান্দগাঁও এলাকায় একাধিক ছিনতাইকারী গ্রæপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সে। আর এর মধ্যে ভাড়াটে হিসেবে কয়েকটি হত্যাকান্ডেও জড়িত ছিল বিপ্লব। বায়েজিদ থানার ওসি জানান, তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ৫টি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। এসব বিষয়ে আরও তথ্য বের করতে বিকেলে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ তাকে আদালতে হাজির করা হয়।



 

Show all comments
  • সাফওয়ান ১২ জুন, ২০১৭, ২:৩৯ এএম says : 0
    এর কাছ থেকে আরো অনেক অপরাধীর তথ্য পাওয়া যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ