Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে -প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 স্টাফ রিপোর্টার : সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণায় অংশ নিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় আনতে হবে। গতকাল রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ ভবন কার্যালয়ে মাওলানা আশরাফ আলীর নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসার কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আলেম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।

সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এসব কথা জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। তাঁদের শিক্ষার মূলধারায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সমাজের কোনো অংশকে পেছনে ফেলে রাখার সুযোগ নেই।’
কওমি মাদ্রাসার চূড়ান্ত ডিগ্রিকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আলেমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তাঁরা বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক ঘটনা। ইতিহাসের পাতায় এ কথা সোনালি হরফে লেখা থাকবে।’ আলেমরা দেশে ইসলামের বিকাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন। এ প্রসঙ্গে তাঁরা রাজধানীর কাকরাইলে তাবলিগ জামায়াতের ‘মারকাজ’ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর জমি দেওয়ার কথা উলে­খ করেন। তাঁরা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্ব ইজতেমার জন্য তুরাগ নদের তীরে জমি বরাদ্দ দিয়েছেন। আলেমরা বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১৬০ একর জমি প্রদানসহ ইসলামের বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও প্রশংসা করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
আগামী নির্বাচনেও মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বাংলাদেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, লুটেরাদের সংগঠন বিএনপির ওপর জনগণের কোন আস্থা নেই। দলটি কেবল হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়েই ক্ষমতা দখল করেছিল এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে কোন কিছুই করে নাই। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা শুধু নিজেদের পকেট ভারি করেছিল।
গতকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে দলের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিগত ওয়ান ইলেভেনের সেনাসমর্থিত জরুরি অবস্থার সময় কারাগার থেকে মুক্তির বার্ষিকীতে গতকাল দলের নেতারা দলীয় সভানেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে গণভবনে যান। কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে গণভবনে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ আজ যে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, নিশ্চয়ই তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে।
সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণের একটি ভবনকে সাব জেল ঘোষণা করে সেখানে তাকে আটক রাখা হয়। পরের বছর ১১ জুন মুক্তি পান শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ দিনটি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। ১০টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চায়। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে উন্নয়নটা পাচ্ছে, সেটা প্রত্যেকটা মানুষ উপলব্ধি করছে। একটা সরকারের ধারাবাহিকতা যে একান্তভাবে প্রয়োজন-সেটা আজকে প্রমাণিত।
দলীয় নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আর্দশ নিয়ে রাজনীতি করার তাগিদ দিয়ে সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতিবিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকা।
জরুরি অবস্থার সময় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী ক্রিস্ট্রিন ওভারমায়ারকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দেশে ফিরতে বাধা দেয়ার কথা কারামুক্তির শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। দেশে ফেরার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, মামলা দেবে, ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে আর আমাকে দেশে আসতে দেবে না। এই খেলাই তারা খেলতে চেয়েছিল। সবাই মামলার ভয়ে পালায়। আমি সেখানে যাচ্ছি মামলা মোকাবেলার করার জন্য।
২০০৭ সালের ৭ মে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেদিন দেশে ফেরেন, সেদিন তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন হাজারও নেতাকর্মী। সেদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্দেশ ছিল কেউ যেন বিমানবন্দরে না যায়। তারা সংখ্যা বেঁধে দিয়েছিল- ১০/২০ জন। তার বেশি যেতে পারবে না। বাঁধা উপেক্ষা করে কৌশলে বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ ছিল। তিনি বলেন, তাদের যেটা উদ্দেশ্য ছিল, হাজার হাজার মানুষ থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়নও সইতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা না হলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের যে উন্নতি করা যায়, তা আমরা প্রমাণ করতে শুরু করি। কিন্তু এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, আসলে একটা সরকার যদি ধারাবাহিকভাবে না চলে, তাহলে উন্নয়নটা দেখা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। তার কারণ, আমি দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে চাইনি। বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করতে হবে আর তার বিনিময়ে ক্ষমতা থাকতে হবে; এই রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে করে না।
শেখ হাসিনা বলেন, যদিও বিএনপি দাবি করে তারা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন ছিলো, কিন্তুু এটা সত্যি যে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে তারা কিছুই করে নাই। তারা সন্ত্রাস ও ভয়-ভীতির রাজত্ব কায়েম করে কেবল নিজেদের ভাগ্য গড়ায় ব্যস্ত ছিলো। তিনি বলেন, যারা নিজেদের জন্য ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের ওপর এদেশের জনগণের আস্থা নেই। বিগত দিনের মতো আগামী নির্বাচনেও জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। জনগণ কিছু পায়। আর অন্যরা ক্ষমতায় আসে শুধু নিজেদের আখের গোছাতে।
জরুরি অবস্থার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংসদ প্রাঙ্গণে ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনের সেই সাব জেলের দিনগুলো স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, পরিত্যক্ত ঘোষণা করা একটি বাড়িৃ সেখানে আমাকে রাখা হয়েছে ১১টি মাস। দোতলা বাড়িৃ নিচে পর্যন্ত নামতে দিত না। এমনকি অসুস্থ হলে ডাক্তারও দেখায়নি। কিন্তু আমি কখনো মনের জোর হারাইনি।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের সে সময় আন্দোলনে শামিলের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখেছি চেহারা। ভেতরে থাকলে এক চেহারা, বাইরে থাকলে আরেক চেহারা। আওয়ামী লীগ সব সময় তৃণমূলের দল, তারা কখনো সিদ্ধান্তে ভুল করে না।



 

Show all comments
  • Ekram ১২ জুন, ২০১৭, ২:৩৪ এএম says : 1
    Thanks to PM Sheikh Hasina
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad ১২ জুন, ২০১৭, ৪:৪০ এএম says : 1
    thank you pm su siddanter jonno
    Total Reply(0) Reply
  • Neaz Mahmud Rafi ১২ জুন, ২০১৭, ২:২৮ পিএম says : 1
    শুধু মুখে না বলে কাজে কর্মে প্রমাণ করুন..।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ