Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খানাখন্দে ভরা সড়কে হাজারো মানুষের দুর্ভোগ

বগুড়া শাজাহানপুরের মাঝিড়া-সোনাহাটা সড়ক

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো : দীর্ঘ দিন যাবত সংস্কার না হওয়ায় বগুড়ার শাজাহানপুরের মাঝিড়া-সোনাহাটা রাস্তাটির কার্পেটিং উঠে গেছে। ছোট বড় শত শত গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষায় কাদাপানি আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে নোংরা হচ্ছে পথচারিদের পোষাক পরিচ্ছদ। খানা-খন্দকের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে অহরহ বিকল হয়ে পড়ছে গণপরিবহণগুলো। যাত্রীদের শরীরের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এতে শাজাহানপুর উপজেলা সদরের পূর্ব দিকের প্রায় ২০ গ্রামের হাজারো মানুষের চলাচলে ভুগতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। থমকে গেছে এই বিস্তীর্ণ জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মাঝিড়া বন্দর থেকে শুরু করে করতোয়া নদী পার হয়ে শাহ্নগর বন্দরের উপর দিয়ে ধুনট উপজেলার সোনাহাটা এলাকায় পৌঁছেছে প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মাঝিড়া-সোনাহাটা রাস্তাটি। এই রাস্তা দিয়ে পার্শ্ববর্তী গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি, ধুনট উপজেলার সোনাহাটা ও বেড়ের বাড়ি, শাজাহানপুর উপজেলার কচুয়াদহ, নারিল্যা, বড়পাথার, ফুলকোট, কামারপাড়া, বিরিকুল্যা, দড়িকুল্যা, জৈন্তিবাড়ি, দক্ষিণা পাড়া, বিলকেশ পাথার, দহিকান্দি, শাহ্নগর, বিহিগ্রাম, দুরুলিয়া, চক চোপীনগর, চোপীনগর সহ প্রায় ২০ গ্রামের লাখো মানুষ প্রতিদিন উপজেলা সদর এবং বগুড়া জেলা শহরে যাতায়াত করেন। সাধারণ পথচারি ছাড়াও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, কৃষিজীবি মানুষের উৎপাদিত শাক-সবজি বাহী যানবাহন এবং রাস্তার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ইটভাটার ইট ও মাটি বহনকারি ট্রাক প্রতিনিয়ত চলাচল করে। চোপীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রয়াত ফজলুল হক রতনের প্রচেষ্টায় রাস্তাটি পাকাকরণ হয়েছিল। ফলে এ এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বিশেষ করে কৃষিজীবি ও শ্রমজীবিদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছিল। পাকাকরণের পর বিগত ২২ বছরে মাত্র একবার রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় এবং বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে। চরম জনদুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে একই ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খোট্টাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল ফারুক।
দুরুলিয়া খানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বগুড়া পল্লী উন্নয়ন ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মনিরা জান্নাত এবং মাঝিড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জানিয়েছে, তাদের বাড়ি থেকে রিক্সা কিংবা টেম্পুতে মাঝিড়া যেতে সময় লাগে ৮-১০ মিনিট। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থা হওয়ায় তাদেরকে পায়ে হেঁটে মাঝিড়া যেতে হচ্ছে। এতে সময় লাগছে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট। তারা এ দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে চায়। কচুয়াদহ গ্রামের টেম্পু চালক জাহিদ হাসান জানিয়েছেন, ভাঙ্গা চোরা রাস্তায় টেম্পু চালাতে গিয়ে প্রতি ২ মাস পর পর ক্লাচপ্লেট পাল্টাতে হচ্ছে। এতে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। রাস্তা ভাল থাকলে বছরে একবার ক্লাসপ্লেট পাল্টাতে হতো। এছাড়াও টেম্পু চালাতে গিয়ে তাদের শরীরের উপর প্রচন্ড চাপ পড়ছে। এতে করে শরীরের বিভিন্ন পেশী ব্যাথায় আক্রান্ত হচ্ছে। খানা খন্দকের কারণে টেম্পুর ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের কোমরসহ পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। রোগী বহনের সময় ২-৩ কিলোমিটার দূরের পথ দিয়ে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে টেম্পু চালকদের। একই ধরণের সমস্যার কথা জানিয়েছেন, দুরুলিয়া গ্রামের রিক্সা ভ্যান চালক রুহুল আমিন। তিনি জানিয়েছেন, ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় ভ্যান চালাতে গিয়ে প্রতি মাসেই তার রিং পাল্টাতে হচ্ছে। এতে খরচ হয় প্রায় ১ হাজার টাকা। এমন ভোগান্তি ও দুরবস্থা থেকে বাঁচার কি কোন উপায় নেই। এমন প্রশ্ন ভ্যান চালক রুহুল আমিনের। দুবলাগাড়ী বন্দরের কাঠ মিস্ত্রি রিপন আহম্মেদ জানিয়েছেন, সমাজের মানুষ এখন আর ৫-১০ কেজি চাল সাহায্য চায় না। তারা চায় রাস্তা-ঘাট ও বিদ্যুৎ। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা সে দিকে কোন খেয়ালই করেন না। বড় পাথার গ্রামের বাসিন্দা সাবেক রেল কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন, এই এলাকার পরিবেশ এমন ছিলনা। যখন থেকে ফসলি জমি এবং বসতি এলাকার মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে তখন থেকেই রাস্তা-ঘাটের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইটভাটার মাটি ও ইট বহনকারী ট্রাকের চলাচলের কারণেই গ্রামীণ সড়ক গুলো দ্রæত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। মাঝিড়া-সোনাহাটার রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শাজাহানপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় রাস্তাটি চলতি অর্থ বছরে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ