Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে ভেজালের ছড়াছড়ি ফরমালিনমুক্ত আড়তের আম !

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে খাদ্যে ভেজালের ছড়াছড়ি। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরী হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। মেয়াদউত্তীর্ণ উপাদানে তৈরী হচ্ছে বাহারি ইফতার ও খাদ্যদ্রব্য। অভিজাত এবং নামকরা হোটেল রেস্তোরাঁতেও মিলছে ভেজালের কারবার। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ভেজাল প্রতিরোধে রোজার আগেই শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। আদালত যেখানে যাচ্ছেন সেখানে পাচ্ছেন ভেজালের প্রমাণ। জরিমানা আদায় করেও লাগাম টানা যাচ্ছে না জালিয়াত চক্রের। আগোরা, স্বপ্ন আর মিনাবাজারের মতো অভিজাত চেইন শপেও পচা আর ফরমালিনযুক্ত মাছ ও শাকসবজি বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে শংকিত ক্রেতারা।
তবে নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের ফলের আড়তে আমের নমুনা পরিক্ষায় এখনও ফরমালিনের উপস্থিতি মিলেনি। বাজারে ফলমূল কিছুটা ফরমালিনমুক্ত হলেও খাদ্যে ভেজাল, ওজনে কারসাজি আর মেয়াদউত্তীর্ণ খাবার বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ক্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন নিয়মিত অভিযানের মুখে ফলে ফরমালিনের মিশ্রণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভেজাল বিরোধী অভিযানে জনসচেতনতা বাড়ছে। ভোক্তারা ভেজাল ও বিষযুক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলছেন। আর এটা বুঝতে পেরেই ব্যবসায়ীরা দিনে দিনে ভেজাল দেওয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মাহে রমজানের আগেই বাজার তদারকি শুরু করে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। গত কয়েকদিনের অভিযানে আদালত যেখানে হাত দিয়েছে সেখানেই পেয়েছে ভেজাল, আর কারসাজির প্রমাণ। পঁচা ও মেয়াদউত্তীর্ণ উপকরণে তৈরী হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। তৈরীও হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। খাদ্যে মেশানো হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রং ও বিভিন্ন উপাদান। সেমাই, নুডুলস থেকে শুরু করে বেকারী সামগ্রী ও মিষ্টি সবকিছুতেই ভেজাল। গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলছে নগরীতে। এসব অভিযানে নগরীর প্রায় প্রতিটি বেকারী ও মিষ্টির দোকানে ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কয়েক বছর ধরে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেও কমছে না ভেজালের কারবার।
নগরীর জিইসি মোড়ের অভিজাত ক্যান্ডিতে গরুর লেজ আর মাথার চামড়া ও খাওয়ার অযোগ্য হাড়গোড় দিয়ে তৈরী হচ্ছে বিরিয়ানী। রেস্তোরাঁর ফ্রিজ থেকে এরকম দশ কেজি পচা গোশত জব্দ করে ভ্রাম্যমান আদালত। বুধবার সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী ও শান্তা রহমান। ওই রেস্তেরাঁয় খাবারের জন্য ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের সেখানে দলবেধে দাঁড়িয়ে খাবার গ্রহণ করতে দেখা যায়। জনপ্রিয়তা দেখে ওই রেস্তোরাঁ থেকে আগেরদিন ইফতার কিনেছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী, পরদিন সেই রেস্তোরাঁয় অভিযানে গিয়ে পঁচা গোশতের হদিস পেলেন তিনি। অভিযানে রেস্তোরাঁর ডিপ ফ্রিজে ১০ কেজি পচা গোশত পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে এজন্য রেস্তোরাঁটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, কিমা বানানোর জন্য এ পচা মাংসগুলো রাখা হয়েছিল ডিপ ফ্রিজে। ইফতার আইটেমে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর মান যাচাই করতে রেস্তোরাঁর ডিপ ফ্রিজ খুলতেই পঁচা গন্ধ পাওয়ার কথা জানান মোরাদ আলী। গোশতগুলো গরুর ফেলে দেয়া অংশ যেমন লেজ, গোড়ালি ও চোয়ালের। সস্তায় এগুলো কিনে এনে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করে তা দিয়ে বিরিয়ানিসহ নানা আইটেম তৈরি করা হতো। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। এ অপরাধে ক্যান্ডি রেস্তেরাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জানা যায় গরুর গোশতের দাম বৃদ্ধির পর থেকে নগরীর বেশিরভাগ রেস্তোরাঁয় গরু ছাগলের ফেলে দেওয়া গোশতের অংশ দিয়েই তৈরী হচ্ছে বিরিয়ানীসহ নানা খাদ্যদ্রব্য। কর্ণফুলী মার্কেটের একজন খাসির গোশত বিক্রেতা বলেন, বিরিয়ানী তৈরী করতে ছাগলের মাথা কিনে নিচ্ছে হোটেল রেস্তোরাঁর মালিকেরা। আর এই কারণে ছাগলের মাথার দামও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, গরু ও ছাগল জবাইয়ের পর গোশত বিক্রি শেষে যেসব অংশ ফেলে দেওয়া হতো তাও এখনও তারা কিনে নিচ্ছে। লেজ, মাথার চামড়াসহ এখন আর কোন কিছুই ফেলনা নয়। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে দেখা গেছে, নগরীর প্রায় প্রতিটি হোটেল রেস্তোরাঁর পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরী খাবার পরিবেশন ও সংরক্ষণ করা হয় আরও নোংরা পরিবেশে। এতে করে ভোক্তারা এসব খাবার গ্রহণ শেষে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্তান্ত হচ্ছেন।
অভিজাত চেইন শপ গুলোতেও ভেজাল পণ্য বিক্রি হচ্ছে। সোমবার নগরীর পাঁচলাইশ মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন আগোরাতে অভিযান চালিয়ে মাছে ফরমালিনের মিশ্রণের প্রমাণ পায় ভ্যাম্যমান আদালত। সেখানে তাপসী, বাতাসী মাছ ও স্টার বাইন মাছ-তিনটিতে পাওয়া গেছে এ বিষ। পচা মাছেই মেশানো হয়েছে ফরমালিন। বিক্রি হচ্ছিল রোগাক্রান্ত পঁচা মাছ, কাটা সবজি। সিটি কর্পোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস এসব অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো: সরওয়ার আজমকে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই ভ্রাম্যমান আদালত মেয়াদবিহীন লেভেল সবজি প্যাকেট জাত, স্টোরে নোংরা ও দুর্গন্ধ পরিবেশের দায়ে মিনা বাজারের দেবাশীষ লোদকে ১০ হাজার টাকা হাজার টাকা জরিমানা করেন। মূল্য তালিকা না টাঙ্গানো, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য বিক্রিসহ নানা অপরাধে প্রতিদিন অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করছেন আদালত।
এদিকে পাইকারী ফলের বাজারের আমে ফরমালিনের কোন অস্তিত্ব মেলেনি। রোববার নগরীর স্টেশন রোডের ফলমন্ডি ও ফিরিঙ্গিবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী ও আবদুস সামাদ শিকদার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, ফলমন্ডি ও ফিরিঙ্গিবাজারে বিক্রি করা আমে ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে কিনা তা জানতে বিএসটিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। প্রতিটি দোকান থেকে আমের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোতে ফরমালিনের মিশ্রণ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। তবে কোন দোকানের বিক্রি করা আমে ফরমালিন পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ