Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রস্তাবিত বাজেট টেলিকম শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধক -অ্যামটব

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৭-১৮ প্রস্তাবিত বাজেটকে টেলিকম শিল্প বিকাশ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্তরায় হিসেবে দেখছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। তারা এই প্রস্তাবিত বাজেটে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাজেটে সাধারণ কাস্টমারদের উপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপানো হয়েছে অথচ কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টেলিকম শিল্পের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বাজেট-পূর্ব প্রস্তাবনার কোনো প্রতিফলন বাজেট ভাষণে লক্ষ্য করা যায়নি। এজন্য এই বাজেটের প্রতিবাদ জানিয়ে হ্যান্ডসেট আমাদানি, সিম ট্যাক্স ও ইন্টারনেটের উপর আরোপিত বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি জানান। একইসাথে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট ট্যাক্সও কমানোর পরামর্শ দেন তারা। গতকাল (বুধবার) রাজধানীর একটি হোটেলে এ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল অপারেটর্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামটব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। অনুষ্ঠানে লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে।
অ্যামটবের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ শিল্প খাত যেখানে জিডিপিতে ৬ শতাংশ অবদান রাখছে অদূর ভবিষ্যতে ৮ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তারপরও টেলিকম শিল্পের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বাজেট-পূর্ব প্রস্তাবনার কোনো প্রতিফলন বাজেট ভাষণে লক্ষ্য করা যায়নি। বাজেট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে সাধারণ কাস্টমারদের উপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপানো হয়েছে অথচ কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি।
মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদাবির উপর বাড়তি করতে অসময়োপযোগী উল্লেখ করে অ্যামটব বলে, দেশীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী শিল্প থেকে এখনও সুফল গ্রহণ করার উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল যন্ত্রের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহণ করে থাকে, হ্যান্ডসেট এর উপর আরোপিত নতুন কর আগামীতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধক হবে। অ্যামটব ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলে, এটি প্রত্যাহার করা না হলে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার রাজনৈতিক লক্ষ্য বাধাপ্রাপ্ত হবে।
মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে সীম ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে এই কর হ্রাসের সুফল হিসাবে ইউনিক সীম ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং পরবর্তি প্রবৃদ্ধির স্বার্থে সম্পূর্ণ রূপে প্রত্যাহার করে নেয়া আবশ্যকিয়। অন্যান্য শিল্পখাতের সঙ্গে করপোরেট ট্যাক্স-এর সমতা বিধান করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। অ্যামটব মনে করে হ্যান্ডসেট এবং মোবাইল টেলিযোগযোগ পরিকাঠামোর উপর বাড়তি কর এবং সেই সাথে সীম ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের টেলিযোগাযোগ এবং ডাটা-সেবা স্বল্প-ব্যয়-সাপেক্ষ করে তোলার উচ্চাশার পরিপন্থি।
অপারেটরের প্রতিনিধিরা বলেন, ইন্ডাস্ট্রি থেকে উপার্জিত প্রতি ১০০ টাকা হতে সরকারের রাজস্বে যায় ৪৭ টাকা। একারণে অপারেটর গণ আশা করেন অর্থমন্ত্রী তাদের দাবী বিবেচনা করবেন এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের পক্ষ থেকে মান উন্নয়ন, উদ্ভাবনা এবং ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে টেলিযোগাযোগ সেবা দানের সার্বিক সুরাহা করে দিবেন।
তারা বলেন, আমরা বিগত তিন বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার অধিক পূঁজি বিনিয়োগ এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহারের হার ২৭ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে বাড়িয়ে তুলে ১৮ শতাংশ গ্রাহকের কাছে থ্রী-জি সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। বিনিময়ে আমরা থ্রীজি সেবা থেকে মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পেরিছি। থ্রী-জি বাবদ বিনিয়োগের অর্থ আমরা এখনও তুলে আনতে পারিনি, ইতোমধ্যে মধ্যে আমরা ফোর-জী’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, যদিও ফোর-জী হ্যান্ডসেট ব্যবহারের হার মাত্র ৪ শতাংশ। এমতবস্থায় মোবাইল হ্যান্ডসেটের উপর আমদানি কর বৃদ্ধি মোবাইল শিল্পের ভবিষ্যৎ আরো দুর্বল করে তুলবে।
অপারেটরগুলো বাজেটে নির্ধারিত সীম ট্যাক্স এবং সীম রিপ্লেসমেন্ট ট্য্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পরামর্শ দিয়ে বলে, ২০১১ সালে সীম ট্যাক্স ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, তখন জিডিপি-তে মোবাইল শিল্পের অবদান ছিলো ৩.২ শতাংশ; ২০১৩ সালে ৩০০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়, জিডিপি-তে মোবাইল শিল্পের অবদান বেড়ে দাঁড়ায় ৪.৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে সীম ট্যাক্স কমিয়ে ১০০ টাকা করা হলে মোবাইল শিল্প জিডিপি-তে ৬.২ শতাংশ অবদান রাখে। তারা আরও বলেন, টেলিযোগাযোগ শিল্পের উপর নির্ধারিত ৪৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স এই খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য একটি প্রধান অন্তরায়। অন্যান্য শিল্পের বেলায় এটি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড পিপল অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদ, গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন, বাংলালিংকের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ডিরেক্টর তৈমুর রহমান ও অ্যমটবের সেক্রেটারি টিআইএম নুরুল কবির উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ