Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নীতিহীন সাংবাদিকতা জাতি ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উমর ফারুক আলহাদী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নীতি-নৈতিকতাহীন বা হলুদ সাংবাদিকতা দেশের কল্যাণ করতে পারে না । হলুদ সাংবাদিকতা জাতি ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে। এ ধরনের সাংবাদিকতা কারো কাছেই কাম্য নয়।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নীতিহীন বা হলুদ সাংবাদিকতা জাতি, মানুষ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে। শুধু তাই নয়; নীতিহীন রাজনীতিও দেশে কল্যাণ করতে পারে না।
বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে ও ড্ইিউজে’র সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজে’র মহাসচিব ওমর ফারুক ও ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান মোনাজাত পরিচালনা করেন।
নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা সংক্রান্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিন্তু মালিক পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতিনিধি না দেওয়ায় প্রক্রিয়া থেমে আছে। এখানে সরকারের কোন দোষ নেই। এখানে অনেক গণমাধ্যম মালিক রয়েছেন। আপনাদেরকে বলবো আপনারা প্রতিনিধি দিন। প্রতিনিধি পেলেই আমরা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করবো। আর ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমকেও এই নবম ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতাই শুধু নয়, মাতৃভাষা বাংলার অধিকার এনে দিয়েছে। একুশে ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগ কোন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে জন্ম রাজনৈতিক দল নয়। তখন অন্য কোন রাজনৈতিক দল এদেশে ছিল না। বিএনপির জন্মই অবৈধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধান লংঘন করে প্রথমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল  এবং ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক দলই হচ্ছে বিএনপি। এদেশের মাটি ও মানুষের মধ্যে থেকে এ দলটির জন্ম হয়নি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে বড় বাজেট- চার লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট আমরা দিয়েছি। এত বড় বাজেট আর কখনো কেউ দেয়নি। বাজেট পেশ করা হয়েছে, পার্লামেন্টে আলোচনা হবে। হয়ত কারো কিছু সমস্যা থাকতে পারে। নিশ্চয় তা আমরা দেখব, সমাধান করব।
আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় মাটি নেই- খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য কথা বলতেই এ দলের জন্ম হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। সংবিধান ক্ষত-বিক্ষতসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর এ দলটির জন্ম ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট থেকে। অবৈধভাবে জন্ম নেয়া ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলের জন্ম সেই দলের (বিএনপি) পায়ের নিচে মাটি থাকে না, সেটিই হলো বাস্তবতা।
জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ১৯৪৯ সালে এদেশের মাটি ও মানুষের মধ্যে দিয়ে, জনগণের অধিকার আদায়ের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম। আওয়ামী লীগের শিকড় এদেশের মাটির অনেক গভীরে।
জঙ্গী-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যারা আন্দোলনের নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যার হুকুম দিয়েছে- বাংলার মাটিতেই তাদের বিচার করা হবে। কেউ-ই রেহাই পাবে না।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাংবাদিক হত্যাসহ অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় সাংবাদিকরা সত্যিই এক বিভীষিকাময় অবস্থা পার করেছে। শত শত সাংবাদিক অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হলেও ওই সময় একটি সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার করেছি ও করছি, তেমনি প্রতিটি সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছি। অন্যায় করে কেউ পার পাবে না।
আত্মবিশ্বাস নেই বলেই বিএনপি নেত্রী মামলা মোকাবেলা করতে ভয় পান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। সেই মামলা মোকাবেলা করতে উনি ভয় পান। মামলাকে বিলম্বিত করতে ১৪৬ বার রিটসহ নানা প্রকারে সময় চেয়েছেন। তার কিসের এতো ভয়? সরকার প্রধান এ সময় আরও বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারার অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বিচার হবে, হুকুমদাতাসহ সবার বিচার হবে।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কামাল আজাদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের  সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, সানজিদা খানম এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান খান, ওয়াসার পরিচালক হাসিবুর রহমান মানিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  
সিনিয়র সাংবাদিক রাহাত খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিকাল ৬টার  কিছু সময় আগেই ইফতার মাহফিলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পুরো প্যান্ডেল ঘুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এদিকে পৃথক অন্য এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামাজিক বনায়ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সৃষ্টি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ সবুজায়নে ও দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে একটি সফল কৌশল হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি লাভ করেছে। যা বর্তমান সরকার গুরুত্বের সাথে করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন,বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,সুন্দরবন যে আমাদের একটা ঐতিহ্য শুধু তাই নয়, এই সুন্দরবনের কারণেই কিন্তুু বাংলাদেশ টিকে আছে। এই সুন্দরবন আরো যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য আমরা আর্টিফিসিয়াল ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি এবং সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ঘটাবার জন্য ইতোমধ্যে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র রক্ষার বিভিন্ন পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি এবং বন অপরাধ দমনের জন্য স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা ২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অনুচ্ছেদ ১৮(ক) সংযুক্ত করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবে’।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকার দ্বিমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সাড়ে ৮ বছরে আমাদের দেশের মোট বনভূমির পরিমাণ ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। স্থানীয় দরিদ্র মহিলাসহ সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে বন অধিদপ্তর সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নের আওতায় এ যাবৎ প্রায় ৭৯ হাজার ২৯৮ হেক্টর এবং ৬৬ হাজার ৪৭২ কিলোমিটার এলাকায় বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব বাগান প্রায় ৭৭৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার বৃক্ষ সম্পদ আহরণ করা হয়েছে। এযাবৎ ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮০ জন দরিদ্র উপকারভোগীর মধ্যে ২৬১ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালিনই সুন্দরবনের একটি এলাকা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকার যে পদক্ষেপই নিক না কেন একটা বিষয় সবসময়ই খেয়াল রাখা হয় সুন্দরবন যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
তিনি বলেন,ইতোমধ্যে কার্বন জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবং পরিবেশ পর্যটনের ক্ষেত্রের উন্নয়ন করা হয়েছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইশতিয়াক আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইসুল আলম মন্ডল এবং প্রধান বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল আলম চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আজ সোমবার ৫ জুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হবে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘প্রাণের স্পন্দনে প্রকৃতির বন্ধনে।’
এদিকে ‘বৃক্ষরোপন করে যে সম্পদশালী হয় সে’ শ্লোগান নিয়ে গতকাল থেকে তিনমাস ব্যাপী জাতীয় বৃক্ষরোপন কর্মসূচিও শুরু হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রাঙ্গনে একটি কাঁঠাল গাছের চারা রোপন করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা ২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৭, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৬ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক প্রদান করেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং ঢাকার কলাবাগানের মোকারম হোসেন ব্যক্তিগতভাবে বৃক্ষরোপনে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পরিবেশ পুুরস্কার ২০১৭ এবং স্কয়ার ফার্মসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগতভাবে এই পুরস্কার লাভ করে।প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দুজনের হাতে সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকও প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের ভারসাম্যকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে এই ভারসাম্য রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, প্রকৃতি যখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তখন মানুষের জন্য তা বিপদ ডেকে নিয়ে আসে।
প্রধানমন্ত্রী এই সময় জাতির পিতার দূরদর্শীতার কথা উল্লেখ করে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ‘পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’ জারী করেন। তখন পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়। এ অধ্যাদেশ ও প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে আজকের পরিবেশ অধিদপ্তর।
সরকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই আহরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৬ জারী করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ কিছু এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ৪০টি বনসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা এবং জলাভূমি, হাওর, নদী, উপকূলীয় দ্বীপসহ ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ’সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা করেছে। এখানে ৫ প্রজাতির বিপন্ন সামুদ্রিক ডলফিন, পাখনাহীন শুশক, কয়েক প্রজাতির তিমি ও হাঙ্গর সংরক্ষণ এবং তাদের বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা না থাকলেও আমরা এর বিরূপ প্রভাবের নির্মম শিকার। বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের সরকার ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় ২০০৯ সালে প্রণীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড অ্যাকশন প্লান (বিসিসিএসএপি) যুগোপযোগী করছে।
তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ২০১০ সালে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এ খাতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এবং এলডিসি ফান্ড হতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ প্রাপ্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন নেগোশিয়েশনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করে।
আমাদের দেশে বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস ইটভাটা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ইটভাটা জিগজ্যাগ এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির ইটভাটায় রূপান্তরিত হয়েছে। বাকি ইটভাটাসমূহও রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রধান নদীসমূহ খনন করে তার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ কাজ সম্পন্ন করা গেলে নদীসমূহের প্রতিবেশ বা ইকোসিস্টেম আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে ও নৌ-পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীকে “প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করে তা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্প সাভারের হরিণধরায় স্থানান্তর করা হয়েছে। দেশের সকল কারখানায় ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইটিপি ছাড়া কোন নতুন কারখানার স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। শিল্প মালিকরা ইটিপিগুলো নিজেরা করলে তা ব্যবহার করতে চায় না। শুধু পরিদর্শনে সময় ব্যবহার হয়। তাই এগুলো সেন্ট্রালি তৈরি করে সকলকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হচ্ছে। হাজারিবাগের ট্যানারি সাভারে নিয়ে সেখানে ইটিপি সেন্ট্রালি করে দেয়া হয়েছে। এয়াড়া আবাসিক ফ্ল্যাট যেখানে করা হচ্ছে সেখানে রিসাইক্লিং ব্যবস্থা রাখার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সা¤প্রতিক ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত হানার সময় সরকারের আগাম ব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আসুন, আমরা এ দেশকে সবুজে সবুজে ভরে তুলি। প্রত্যেকে অন্তত একটি করে বনজ, ফলজ ও ঔষধি চারা রোপণ করি এবং সবুজ অর্থনীতি নির্ভর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাই।



 

Show all comments
  • Zulfikar ৫ জুন, ২০১৭, ২:২৪ এএম says : 0
    Akdom thik kotha bolesen.
    Total Reply(0) Reply
  • chanchol ৫ জুন, ২০১৭, ২:২৪ এএম says : 0
    ar nitihin rajniti ?????????????????????????????????????????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ