Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাষাসৈনিক ফজলুর রহমান ভূঁইয়া

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম আর মাহবুব : মহান ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্বে যে কজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অধ্যাপক আবুল কাসেমের সান্নিধ্যে এসে এ আন্দোলন সংগঠনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন, ফজলুর রহমান ভূঁইয়া তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন তমদ্দুন মজলিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামটি তাঁরই প্রস্তাবক্রমে গৃহীত হয়েছিল। ১৯২৩ সালের ১৪ আগস্ট ফজলুর রহমান ভূঁইয়া নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার অন্তর্গত চর মান্দানিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জহির উদ্দিন ভূঁইয়া। তাঁর পিতা নিজ এলাকার একজন খ্যাতনামা শিক্ষক (পন্ডিত) হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ফজলুর রহমানের পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার তারাকান্দি গ্রামে। ১৯৪৭ সালে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া এসএম হল ছাত্র সংসদের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে তিনি ইংরেজিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি আইনে স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণ করেন এবং আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি কিছুদিন নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহে ইসলামিয়া ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শিবপুর-মনোহরদী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গৌরবজ্জ্বল অবদান রাখেন। তিনি নিজে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে তাঁর অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের প্রাক্কালে যখন রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক শুরু হয় সে সময় ফজলুর রহমান ভূঁইয়া বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ও তাঁর বন্ধু সৈয়দ নজরুল ইসলাম (স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি), শামসুল আলম (ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় আহŸায়ক), আব্দুল খালেক (পরবর্তীতে পুলিশের আইজিপি) প্রমুখ এসএম হলের আবাসিক ছাত্ররা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন এবং ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ফজলুর রহমান ভূঁইয়া। ভাষা আন্দোলন সংগঠন পর্যায়ে তমদ্দুন মজলিস গঠনের পূর্বাপর সময়ে যে কটি পরামর্শমূলক বৈঠক হয়েছে, ফজলুর রহমান ভূঁইয়া সেগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এক পর্যায়ে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় ভাষা আন্দোলন শুরু করার পক্ষে তারা ঐকমত্যে পৌঁছলে সংগঠনের নাম কী হবে সে ব্যাপারে পারষ্পরিক মতামত গ্রহণ করা হয়। সংগঠনটির নাম ‘তমদ্দুন মজলিস’ রাখার পক্ষে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া প্রস্তাব করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। সে থেকেই ফজলুর রহমান ভূঁইয়া অধ্যাপক আবুল কাসেমের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান। ১৯৪৭-৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সাংগঠনিক পর্যায়ে যেসব বৈঠক হয়েছে, আলোচনা সভা ও মিছিল হয়েছে, সে সবের প্রতিটিতে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯ নম্বর আজিমপুরস্থ কাসেম সাহেবের বাসভবনে ভাষা আন্দোলনের প্রথম অফিস প্রতিষ্ঠার (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) পর ফজলুর রহমান ভূঁইয়া সেখানে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন।
১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ প্রকাশিত হয় ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’। এটি প্রকাশ উপলক্ষে ১৯ নম্বর আজিমপুরস্থ ভাষা আন্দোলন অফিসে যে আনুষ্ঠানিকতা হয় সেখানে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। ঘোষণাপত্র পাঠের পর সবাই ঐক্যমত হন, যে কোন মূল্যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে; এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফজলুর রহমান ভূঁইয়া। তাঁরা যে কোন বিপদ-বাধাকে অগ্রাহ্য করে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে আলোচ্য ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। ফজলুর রহমান ভূঁইয়া সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ইতিহাসে গৌরবের আসনে সমাসীন হয়েছেন।
ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর তদনুযায়ী ঢাকা শহর ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির পক্ষে জনমত গঠনে প্রবৃত্ত হয় তমদ্দুন মজলিস। এজন্য ১৯৪৭ সালের ১৬-৩০ সেপ্টেম্বর পালিত হয় সাংগঠনিক পক্ষ। ফজলুর রহমান ভূঁইয়া উক্ত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সর্বোতভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসব্যাপী ভাষা আন্দোলনের পক্ষে গণসংযোগ ও আইন পরিষদ সদস্যদের সাথে তমদ্দুন মজলিস মতবিনিময় কর্মসূচী গ্রহণ করে। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তমদ্দুন মজলিস দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমর্থন আদায়ে মাঠে নামে। সেজন্য কয়েকটি মেমোরেন্ডামে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয় এবং সরকারের নিকট তা পেশ করা হয়। স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে যারা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রতি সমর্থন আদায় করেন, ফজলুর রহমান ভূঁইয়া ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কেবল এসএম হলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন না, তিনি ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রম প্রচারের দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিদার একদল সন্ত্রাসী বাস ও ট্রাকযোগে শ্লোগান দিতে দিতে ভাষা আন্দোলনের কর্মীদের পীঠস্থান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হোস্টেল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে হামলা করলে সে ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে পলাশী ব্যারাকে তমদ্দুন মজলিস যে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে সেখানে অন্যান্যের মধ্যে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া সন্ত্রাসীদের নগ্ন হামলার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাকে অবিলম্বে রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সরকারি অফিসে ধর্মঘট আহŸান করে তমদ্দুন মজলিস। ১৩ ফেব্রুয়ারি সেক্রেটারিয়েটের কাছে ধর্মঘট সফল করার জন্য যে মিছিল হয়, সেখানেও ফজলুর রহমান ভূইয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৭ তারিখে গঠিত হয় তমদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা সাব-কমিটি নামে ‘প্রথম রাষ্ট্রভাষা পরিষদ’। ফজলুর রহমান ভূইয়া উক্ত সংগ্রাম পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ঢাকার বাইরে বিশেষত: নিজ জেলা (তৎকালীন মহকুমা) নরসিংদীতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্প্রসারণে ফজলুর রহমান ভূইয়ার অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণযোগ্য। ফজলুর রহমান ভূইয়া নরসিংদীতে ভাষা আন্দোলন সংঘঠনে বিশেষ অবদান রাখেন। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করার জন্য তাঁর নিজ এলাকা নরসিংদীতে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং বিভিন্ন সময় সভা সমিতিতে অংশগ্রহণ করতেন। তাঁরই উদ্যোগে তখন নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এবং তমদ্দুন মজলিসের শাখা গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সেই সূচনাপর্বে বাংলাকে যখন অনেকেই পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিলেন, তখন তমদ্দুন মজলিসের প্লাটফর্ম থেকে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টায় তিনি নরসিংদী এবং ঢাকায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি সম্বলিত তমদ্দুন মজলিসের লিফলেট বিতরণ করার সময় পুরনো ঢাকায় তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হন। সে বছর জানুয়ারি মাসেই পুরনো ঢাকার স্থানীয় লোকজন লাঠি-সোঁটা দিয়ে তমদ্দুন মজলিস অফিস ভাঙচুর করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের বাধা দিতে গিয়ে তিনি আহত হন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দেশব্যাপী পাকিস্তান-উত্তর প্রথম হরতাল কর্মসূচী পালিত হয়। ফজলুর রহমান ভূইয়া এ সময় উক্ত হরতাল কর্মসূচীকে সফল করার জন্য কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। হরতাল চলাকালীন একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন তিনি এবং সচিবালয়ের সামনে পিকেটিংয়ে অংশ নেন। হরতালের পূর্বে কয়েক দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহে হরতালের সমর্থনে ছাত্রদের সংগঠিত করার ব্যাপারে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। হরতালের দিন ছাত্রদের পিকেটিংয়ে সমবেত করতে যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ফজলুর রহমান ভূইয়া ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। হরতালের সময় পিকেটিংরত জনাব ভূইয়াকে কয়েক দফা পুলিশের ভ্যানে তুলে নেয়া হয় এবং অনেকের সাথে ঢাকার অদূরে জয়দেবপুর নিয়ে ভ্যান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট চলাকালীন ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে কয়েক জন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করে। উক্ত গ্রেফতারের প্রতিবাদে, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁরই উদ্যোগে ১৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। এসএম হলের ভিপি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। ফজলুর রহমান ভূইয়া উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন। বস্তুত ১১ মার্চ হরতাল কর্মসূচী উপলক্ষে এবং অতঃপর ১৫ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচী পালনের সময় যে উত্তাল আন্দোলন হয়েছে, যার ফলে ১৫ মার্চ সরকার রাষ্ট্রভাষা চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছিল, ভাষা আন্দোলনের সেই চরম সময়ে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণ পর্বেও ফজলুর রহমান তাঁর ছাত্র জীবনের বন্ধু সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তিত্ব, ভাষাসৈনিক ফজলুর রহমান গত ২৭ মে ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি.......... রাজিউন)।
লেখক : রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক এবং নির্বাহী পরিচালক, ভাষা আন্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন