Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রূপগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্বাধীনতা ও উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যেই অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ রাখা হয় -আইজিপি
বিশেষ সংবাদদাতা ঢাকা ও মোঃ খলিল সিকদার রূপগঞ্জ থেকে : রূপগঞ্জের পূর্বাচল আবাসিক এলাকার লেক থেকে গতকাল অর্ধশতাধিক এম-সিক্সটিন রাইফেল, রকেট লঞ্চার ও মটারসেলসহ বিপুল পরিমান গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে জিজ্ঘাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে পূর্বে ব্যবহার করা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান কোথা থেকে এসেছে এবং কারা এর নেপথ্যে জড়িত এ সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের আইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল ও আশপাশে অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর থেকেই আতঙ্ক বিরাজ করছে পুর্বাচল উপশহরের আশ-পাশে বসবাসরত এলাকাবাসী মধ্যে।
অভিযানস্থল পরিদর্শণ শেষে আইজিপি শহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ্য করতে একটি চক্র নাশকতার লক্ষ্যে এসব অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ রেখেছিলো বলে ধারনা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে চক্রটিকে আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি)  প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গতবছর রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল তার সঙ্গে রূপগঞ্জের ঘটনার মিল আছে। দুটি স্থানে একই কৌশলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখা হয়। একই চক্র এর পেছনে সক্রিয় থাকতে পারে।
তিনি আরো বলেন, রূপগঞ্জে উদ্ধার করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এগুলো একইভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একই গ্রুপের কাজ। অস্ত্রগুলো দেখে মনে হচ্ছে- এগুলো সক্রিয়, সচল ও স্বয়ংক্রিয়। এগুলো দুই তিনমাস আগে এখানে রাখা হয়েছেবলে ধারনা করা হচ্ছে।
জঙ্গিদের সংশ্লিষ্ট্রতা রয়েছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন আস্তানায় যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার সঙ্গে এই অস্ত্রের মিল নেই। তবুও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।  
জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্র আগে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। কোথাও নেয়ার জন্য এসব অস্ত্র এখানে এনে রাখা হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। কারা এর সাথে জড়িত এবং নেপথ্যের কারনে বের করার জন্য তদন্ত চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় মনে হয় না এটি জঙ্গীদের কাজ। তবে আমরা সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করছি। ক্যানেলে (লেক) আরো অস্ত্র থাকতে পারে। এ জন্য ক্যানেল  লেক) সেচে অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলে তা উদ্ধার করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বাগলা এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শরীফ মিয়ার বাড়িতে বড় ধরনের অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে পুলিশের কাছে সংবাদ আসে। পরে গত মঙ্গলবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শরীফ মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি এলএমজি রাইফেল উদ্ধার করে। এ সময় অস্ত্রবহনকারী শরীফ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর পরের দিন বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া এলাকা থেকে শরীফ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শরীফ মিয়ার স্বীকারোক্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র ওসি মাহমুদুল ইসলাম ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার পুর্বাচল উপশহরের ৫নং নম্বর গুতিয়াবো আগারপাড়া এলাকার বালুচর থেকে প্রথমে দুটি এসএমজি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করে। পরে তার দেয়া তথ্য মতে পুর্বাচল উপশহরের ৫নং সেক্টরের ভুইয়া বাড়ি ব্রীজ সংলগ্ন গুতিয়াবো এলাকার ক্যানেলে ( লেকে) ডিবি ও থানা পুলিশ গতকাল ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬২টি চায়না এসএমজি, ৫টি ৭.৬২ পিস্তল, ২টি রকেট লাঞ্চার, ৪৯টি মটারসেল, ২টি ওয়ারলেস, ১৫২৭ পিছ গুলি, ৬০টি ম্যাকজিন, ৪৯টি গ্রেনেড ও ৪৯টি ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় ভুইয়া বাড়ি ব্রীজ সংলগ্ন ক্যানেলের (লেক) পানি থেকে পর্যায়ক্রমে ৬২টি চায়না এসএমজি, ৫টি ৭.৬২ পিস্তল, ২টি রকেট লাঞ্চার, ৪৯টি মটারসেল, ২টি ওয়ারলেস, ১৫২৭ পিছ গুলি, ৬০টি ম্যাকজিন, ৪৯টি গ্রেনেড ও ৪৯টি ডেটোনেটর উদ্ধার করে।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, পুর্বাচল উপ-শহর এলাকাটি এক সময় জনবহুল এলাকা ছিলো। রাজধানীর অতি কাছের এ এলাকাটিতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিলো। পুর্বাচল উপশহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক পুরো এলাকাটিকে অধিগ্রহন করে নেয়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। বর্তমানে পুরো পুর্বাচল উপশহরটি ফাঁকা ও নির্জন অবস্থায় রয়েছে। অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে পুর্বাচল উপশহরকে বেঁচে নিয়েছে। এখানে প্রায় সময়ই লাশ উদ্ধারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমুলক কর্মকান্ড ঘটে থাকে। বিশেষ করে ৫নং সেক্টরের ক্যানেলটি  (লেক) একে বারেই নির্জন ও দুর্গম জায়গা। হয়তো নিরাপদ ভেবে অপরাধীরা এখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রেখেছে।
পূর্বাচল উপশহরের আদিবাসি গুতিয়াব এলাকার মাজহারুল ইসলাম জানান, এই এলাকা লোকজন না থাকায়  নিরব পড়ে থাকে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন দামী গাড়ী করে অচেনা লোকজন যাতায়াত করে থাকে । ফলে এই এলাকায় নিত্য নানা অপরাধ ঘটে থাকে। স্থানীয়দের দাবী এই এলাকার দিনদুপুরে কালো গøাস ব্যবহারকারী দামী গাড়ীর আনাগোনা থাকে। ফলে কে বা কারা এখানে নিত্য নানা অপরাধ কর্মকান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতা দুর করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, গোপন খবরের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বিকালে শরিফ নামের একজনকে একটি এলএমজিসহ আটকের পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই অভিযান চালায় পুলিশ। উল্লেখ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে যেসব অস্ত্র পাওয়া গেছে তার মধ্যে এম সিক্সটিন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন অতিরিক্তি আইজিপি (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক), ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার, সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আব্দুল্লা আল মাসুদ, র‌্যাব-১ এর সিবিসি-৩ কোম্পানি কমান্ডার আবু হানিফ, র‌্যাব-১১ এর এসপি বাবুল আক্তার, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মামুনুর রশিদ প্রমুখ। অভিযান পরিচালনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে জুনে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে একটি খাল থেকে ৯৭টি পিস্তল. ৪৯৪টি ম্যাগাজিন ও ১ হাজার ৬০টি গুলি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এসব অস্ত্রের গায়ে সিরিয়াল নম্বর,  উৎপাদনকারী কোম্পানি বা দেশের নাম কিছুই লেখা ছিল না। অর্ধশতাধিক এম-সিক্সটিন রাইফেল অর্ধশতাধিক এম-সিক্সটিন রাইফেল
পূর্বাচল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
গত রাতে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা একজনকে গ্রেফতার এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। যে সব অস্ত্র ও গুলি ঊদ্ধার করা হয়েছে এ গুলোর গায়ে কোন কোম্পানীর নাম লেখা নেই। অনেক বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রূপগঞ্জ

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ