Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও হিজড়াসহ পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের দুস্থ, অবহেলিত, সমস্যাগ্রস্ত, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আমরা নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে জোরদার করছি। এ ধারা আমরা আগামীতেও অব্যাহত রাখব। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে এবার ২৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৬ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছরে ১৯ হাজার ২৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা করা হয়। বরাদ্দের এই পরিমাণ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অবশ্য সামাজিক সুরক্ষায় এই বরাদ্দ এখনও ২ শতাংশের কম, যা আরও বাড়ানোর উচিৎ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বিশেষ’ বরাদ্দ রাখার কথা এর আগে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। প্রস্তাবে তিনি এ বাবদে বরাদ্দ ৩১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানোকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। তবে দেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে যদি আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও দরিদ্র মানুষের অবস্থার উন্নতি ঘটত, তাহলে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন থাকত না এবং সেটাই বেশি টেকসই হত বলে মনে করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) এই সভাপতি। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, উন্নতি বাড়ছে, সোশাল সেফটি নেটের আওতাতো কমে আসা উচিত, তাই না? কিন্তু সে পর্যায়ে যাইনি। অনেকে বাইরে ছিল তাদেরকে আওতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি যেটা ভাবছি যে, আরও দুই তিন বছর বাড়াতে হবে। এরপর আশা করছি, এটা কমে আসবে। অনেকে এ অবস্থা থেকে  বেরিয়ে মূল ধারায় চলে আসবে।
‘প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে আমাদের নানামুখী কার্যক্রম রয়েছে। এসব কার্যক্রমের বিপরীতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি যা, চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি।’ এর মধ্যে-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৫ হাজার করে মোট ১০ হাজারে বৃদ্ধি করা হবে।  অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে, যেখানে মাসিক ভাতা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হবে।  প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি করে ‘রিসোর্স সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা এবং সম্ভব সব ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি হওয়া তথ্য ভান্ডার ব্যবহার করে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র দেওয়া পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।  সাভারে ১২ একর খাস জমির উপর আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মুহিত।
নারীদের জন্য
দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৬ লাখ করা হবে। কর্মজীবী স্তন্যদায়ী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হবে ২ লাখ। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে ১২ লাখ ৬৫ হাজার করা হবে।
বিশেষ স¤প্রদায়
হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা খাতে বরাদ্দ ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হবে। বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ বা বয়স্ক ভাতার বরাদ্দ ৬ কোটি ৩২ লাখ থেকে বাড়িয়ে করা হবে ২৭ কোটি টাকা। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি খাতে ১৫  কোটি টাকা বরাদ্দ এবং খাদ্য-দ্রব্যের পরিবর্তে জনপ্রতি এককালীন নগদ ৫ হাজার টাকা করে  দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা প্রদান কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে স¤প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ লাখ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিদ্যমান মাথাপিছু সম্মানী ভাতার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২ জুন, ২০১৭, ৬:১৬ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ ইনকিলাব পত্রিকাকে তার বাজেটের পক্ষের কথাগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই তার এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে টাকা বৃদ্ধি করার জন্য। এই বাজেট শিল্প ও ব্যবসা অনুকুল বাজেট বলে বর্ণনা করেছে এফবিসিসিয়াই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তার মতে বাজেটে বড় প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে সেসব যদি অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে এটা অবশ্যই ভাল বাজেট। তাহলে মনে হচ্ছে এবার এএল তাদের মেয়াদ শেষ শেষ সময়ে একটা ভাল বাজেট জাতিকে উপহার দিল। আল্লাহ্‌ আমাকে সহ সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে সেভাবে করার ক্ষমতা দান করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ